হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট বন। মাত্র ২৪৩ হেক্টর বা ৬০০ একর। ছোট বন হওয়ায় বন্যপ্রাণীর চলাফেরা ও রক্ষায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিবেচনায় নিয়ে সাতছড়ি সহব্যবস্থাপনা কমিটি ও বন বিভাগের প্রস্তাবে বন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জাতীয় উদ্যানের ৬শ’ হেক্টর আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। ফলে এখন থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের আয়তন হচ্ছে ৮৪৩ হেক্টর।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে এসব তথ্য দেন সাতছড়ি বন্যপ্রাণী রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ।
পার্শ্ববর্তী জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে উদ্যানটির আয়তন তিনগুণ বাড়ানো হলো। প্রকৃতিবিদরা বলছেন, এই জাতীয় উদ্যান সম্প্রসারণের ফলে বন্যপ্রাণীরা উপকৃত হবে।
জানা যায়, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের এতসব সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণীকে সংরক্ষণ ও বাঁচিয়ে রাখতে সাতছড়ি সহব্যবস্থাপনা কমিটি জাতীয় উদ্যানের আয়তন বাড়ানোর একটি প্রস্তাব পাঠায় বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটে। তৎকালীন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী প্রস্তাবটি বন অধিদপ্তরে পাঠালে অধিদপ্তর থেকে যাচাই বাছাই শেষে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয় সম্প্রতি উদ্যানের আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করে।
প্রকৃতির আপন মায়ায় সুনিপুণভাবে বেড়ে ওঠা এই বনটি চুনারুঘাট উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তের গা ঘেঁষে অবস্থিত। মিশ্র চিরসবুজ এই বনটি আঁকাবাঁকা ৭টি পাহাড়ি ছড়া ও উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলায় পরিবেষ্টিত। বনাঞ্চলটি ঘিরে ৯টি চা বাগান রয়েছে। পশ্চিমে সাতছড়ি চা বাগান ও পূর্বদিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান অবস্থিত।
বনবিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানায়, সাতছড়িতে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী রয়েছে। বড় আকারের স্তন্যপায়ীদের মধ্যে রয়েছে লেজবিহীন স্তন্যপায়ী উল্লুক। ইতোমধ্যেই সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া এই মহাবিপন্ন উল্লুকের অন্যতম উপযুক্ত আশ্রয়স্থল হিসেবে গণ্য।
অন্যান্য স্তন্যপায়ীর মধ্যে রয়েছে- বিপন্ন প্রজাতির মায়া হরিণ, কালো কাঠবিড়ালি, খরগোশ, বন্যশুকর, শিয়াল, মেছোবিড়াল, চিতা বিড়াল, বনবিড়াল, গন্ধগোকুল, সজারু, হলদে-গলা মার্টিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ও মাংসাশী প্রাণিবিষয়ক গবেষক মুনতাসির আকাশ জানান, এটি খুবই সমৃদ্ধ একটি বন। এখানে অনেক বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এই বনের আয়তন বাড়ানোর ফলে বন্যপ্রাণীদের থাকার জায়গা বাড়ল, সেই সঙ্গে এদের সংরক্ষণে সহযোগী হিসেবে কাজ করবে এই উদ্যোগ।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে প্রায় ২৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১০ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। এদের মধ্যে সবুজ বোড়া বা পিট ভাইপার, কিং কোবরা, অজগর, মক ভাইপার, খয়ে গোখরা, শঙ্খিনী, লাউডগা, বাদামি গেছো সাপ, তক্ষক, গিরগিটি, চিতি বন আঁচিল, গুইসাপ, হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপসহ রয়েছে নানান সরীসৃপ।
উভচরের মধ্যে চিত্রিত আঁচিল ব্যাঙ, ভেনপু ব্যাঙ, মুরগিডাকা ব্যাঙসহ রয়েছে ঝিঁঝিঁ ব্যাঙ, সোনা ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ, দুই দাগী বাঁশি ব্যাঙসহ নানা প্রজাতির ব্যাঙ।
বন্যপ্রাণী রক্ষায় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের আয়তন বৃদ্ধি করায় কৃর্তপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাদারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল। তিনি বলেন- ‘বন রক্ষা পেলে বন্যপ্রাণী বৃদ্ধি পাবে। এখানে কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল চিন্তা থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
ঢাকা/মামুন/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।
এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক