ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ ৪৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
Published: 27th, February 2025 GMT
গ্রাহকের ১১ কোটি আত্মসাতের অভিযোগে ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলি চৌধুরীসহ ৪৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে মামলাটির আবেদন করেন মুর্তুজা আলী নামে এক ব্যবসায়ী।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হেলাল বিন মঞ্জুর তামিম বলেন, ব্যবসায়ী মুর্তুজা আলী ইস্টার্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্টসহ সঞ্চয়ী এফডিআর (স্থায়ী আমানত) অ্যাকাউন্ট খোলেন। এফডিতে তিনি বিভিন্ন মেয়াদে ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা জমা করেন। এছাড়া সঞ্চয়ী হিসাবে ৫০ লাখ টাকা জমা ছিল তার। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদসহ উচ্চ পদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে বিভিন্ন নামে এবং ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল নাম্বার দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলে। বাদী বিদেশে থাকা অবস্থায় সেই অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করে তারা এফডিআর এর বিপরীতে ঋণ নেয়, যা বাদী জানতেন না। তাই এফডিআরের লাভসহ সর্বমোট ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ মোট ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। আদালত মামলার আবেদন গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির এমডি আলী রেজা ইফতেখার, পরিচালক এম গাজিউল হক, সেলিনা আলি, আনিস আহমেদ, মুফাক্কারুল ইসলাম খসরু, গাজী মো.
মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাদী মো. মুর্তুজা আলী একজন ব্যবসায়ী এবং ভাইয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক। ২০১৭ সালে তিনি ইস্টার্ন ব্যাংকের ও আর নিজাম শাখায় পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকা সঞ্চয়ী হিসেবে জমা করেন। কিন্তু ব্যাংকের নিয়মনুযায়ী সঞ্চয়ী হিসাবের ওপর ৭ শতাংশ মুনাফা পাওয়ার কথা থাকলেও ব্যাংক তা দেয়নি তাকে। পরে ব্যাংকে থাকা অর্থের পরিমাণ মুনাফাসহ ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা দাঁড়ালে মুর্তুজা আলী সেই অর্থ ইস্টার্ন ব্যাংকের চান্দগাঁও শাখায় স্থানান্তর করেন। পরে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে তিনি ইস্টার্ন ব্যাংকের চান্দগাঁও শাখায় ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার ছয়টি এফডিআর খোলেন এবং এর বিপরীতে একটি ওএসডি (সিকিউরড ওভারড্রাফট) ঋণের জন্য আবেদন করেন। ২০১৯ সালে বিদেশে থাকার সময় তিনি ব্যাংকটির চান্দগাঁও শাখায় তার নামে দুটি জাল সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট ও চারটি জাল ঋণ অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানতে পারেন। তার জাল স্বাক্ষর ও ভুল তথ্য দিয়ে ওই অ্যাকাউন্ট দিয়ে ৯ কোটি ৭৭ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৭ টাকা লেনদেন করে পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ঘটনার পর বাদী তার সব পাওনা বুঝে পেতে ইস্টার্ন ব্যাংক বরাবর লিখিত আইনি নোটিশ পাঠালেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে সব মিলিয়ে ১১ কোটি পাওনা বলে মামলার আরজিতে উল্লেখ করেছেন মুর্তুজা আলী।
প্রসঙ্গত, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি’র চেয়ারম্যান ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ‘ডিসকো শওকত’ হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি তিনি ফিনলে প্রপার্টিজ এর পরিচালক ও অংশীদার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য়
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে ইজিবাইকচালক শওকত হত্যার ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড
ফরিদপুরে ইজিবাইকচালক শওকত মোল্লা (২০) হত্যার ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে ফরিদপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালত মাকসুদুর রহমান এ আদেশ দেন।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লার মেহেদী আবু কাওসার, জনি মোল্লা ও আবু রাসেল শেখ (পলাতক), রবিদাসপল্লির রাজেশ রবিদাস এবং গোয়ালচামট মহল্লার রবিন মোল্লা। তাঁদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রাজবাড়ীর সদরের মসলিসপুর গ্রামের বাদশা শেখকে। সেই সঙ্গে তাঁকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১০ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন বাদে বাকি সব আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁদের পুলিশ পাহারায় জেলা কারাগারে নেওয়া হয়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ সূত্রে জানা যায়, শওকত মোল্লা শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার আয়নাল মোল্লার ছেলে। ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ইজিবাইক নিয়ে বেরিয়ে তিনি নিখোঁজ হন। পরদিন ১৫ নভেম্বর সকালে শহরের মোল্লাবাড়ি সড়কের পাশের একটি ধানখেতে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। ১৬ নভেম্বর অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন শওকতের বাবা আয়নাল মোল্লা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, শওকতকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর প্রায় দেড় লাখ টাকা মূল্যের ইজিবাইক ও তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় হত্যাকারীরা।
আদালতের সরকারপক্ষের কৌঁসুলি চৌধুরী জাহিদ হাসান জানান, বর্তমানে ইজিবাইক হাতিয়ে নেওয়ার জন্য খুনের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। এ রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি সমাজের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।