মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আরও বেশি করে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। গতকাল বুধবার এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

এমনিতেই ট্রাম্প–ঘনিষ্ঠ ইলন মাস্কের তথাকথিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি (ডিওজিই) কর্তৃক ছাঁটাই ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে কাটছাঁটের কারণে কেন্দ্রীয় কর্মীরা বিপর্যস্ত। এর মধ্যে আবার কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে কেন্দ্রীয় জনবল উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কমানো–সংক্রান্ত পরিকল্পনাগুলো আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে। নতুন ছাঁটাইয়ের সংখ্যা কত হবে, তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।

চিঠিটি মার্কিন সরকারের জনবল কমানোর জন্য ট্রাম্প ও মাস্কের ব্যাপক তৎপরতাকেই প্রতিনিধিত্ব করছে।

এখন পর্যন্ত মূলত শিক্ষানবিশ কর্মী, যাঁদের বর্তমান পদের মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে ও চাকরির সুরক্ষাও কম, তাঁদের ছাঁটাইয়ের লক্ষ্যবস্তু করতে দেখা গেছে। পরবর্তী দফায় অভিজ্ঞ সরকারি কর্মচারীদের বিশাল সংখ্যক কর্মীকে লক্ষ্য করে ছাঁটাই চালানো হবে।

মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ট্রাম্প বলেছেন, এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির প্রশাসক লি জেলডিন তাঁর ১৫ হাজারের বেশি কর্মীর মধ্য থেকে ৬৫ শতাংশ কর্মীকে ছাঁটাই করার পরিকল্পনা করছেন। এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি হলো যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পরিবেশ সুরক্ষাবিষয়ক স্বাধীন সংস্থা।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ইউএস ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস ও ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান অ্যাফেয়ার্সকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কর্মী ছাঁটাইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দেশটির ২৩ লাখ বেসামরিক ফেডারেল কর্মীর মধ্যে প্রায় এক লাখ কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে কিংবা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে।

ট্রাম্প মাস্ককে রাষ্ট্রপতির মন্ত্রিসভায় তাঁর কাজ প্রচারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি অসাধারণ সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁর সাম্প্রতিক দাবি থেকে সরে এসেছেন যে তাঁদের সব কর্মচারী তাঁদের কাজকে ন্যায্যতা দেবেন, অন্যথায় চাকরিচ্যুত হবেন।

মাস্ক মন্ত্রিসভা স্তরের কোনো কর্মকর্তা নন। মার্কিন সিনেটের তাঁকে অনুমোদন দেওয়া–সংক্রান্ত কোনো ভোটাভুটিও হয়নি। সম্প্রতি আদালতে জমা দেওয়া কাগজপত্রে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মাস্ক ডিওজিইর দায়িত্বে নেই। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ও মাস্ক ডিওজিইর কর্মীদের সহায়তা করেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মীদের ব্যাপক হারে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে গতকাল মার্কিন সিনেটের হলগুলোয় ফেডারেল কর্মীদের বিক্ষোভ হয়েছে। বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী মার্কিন সিনেট হলের মধ্য দিয়ে হেঁটে যান এবং তাঁদের ক্ষোভের বার্তা জানিয়ে দেন।

ব্যস্ত হলগুলো বন্ধ না করার জন্য বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করেন নিরাপত্তাকর্মীরা। এরপর ফেডারেল কর্মীরা মেজরিটি লিডার জন থুনসহ কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটরের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁদের হতাশা প্রকাশ করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ম দ র মন ত র কর ম ক র জন য কর ম র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।

হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।

যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাতে ভোট গণনাসহ ছাত্রদলের ৬ দাবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত
  • ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
  • যে হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ, বিদ্যুৎ–সংযোগ কিছুই নেই