মার্কিন উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তিবিদ ইলন মাস্কের মহাকাশ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স সারা বিশ্বে স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে। স্টারলিংক নামের এই সেবা বিশ্বের প্রত্যন্ত এলাকায় তারহীন ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে। শুধু একটি অ্যান্টেনা দিয়েই সরাসরি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাড়ি কিংবা অফিস বা দুর্গম পাহাড়ে ইন্টারনেট সেবা মিলছে।

স্টারলিংক শক্তিশালী ডেটা নিরাপত্তা ও ব্যবহারকারীর গোপনীয়তার ওপর জোর দেয়। স্টারলিংক ব্যবহারকারীর ডেটা রক্ষা করার জন্য উন্নত এনক্রিপশন সিস্টেম, শক্তিশালী নেটওয়ার্ক কাঠামো ও ব্যবহারকারীর তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করতে গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশে এত দিন স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবার কাভারেজ ছিল না। বর্তমানের অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুতগতিতে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা আনার জন্য স্টারলিংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সেই কারণেই স্টারলিংক নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে।

যুক্তরাষ্ট্রের আইবিএম থমাস জে ওয়াটসন রিসার্চ সেন্টারের তত্ত্বীয় কোয়ান্টাম কম্পিউটার বিজ্ঞানী ওমর শেহাব প্রথম আলোকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জানান, বাংলাদেশের ইন্টারনেট মার্কেট ওপেন বা ফ্রি মার্কেট। এখানে স্টারলিংক প্রবেশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্টারলিংক পাড়া বা মহল্লাভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার বদলে নতুন সুযোগ দেবে। বাংলাদেশ সরকার স্টারলিংক বা এমন স্যাটেলাইট–নির্ভর ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দর–কষাকষি করে সেবার দাম কমাতে পারে। দেশের দূরবর্তী এলাকায় স্যাটেলাইট–নির্ভর ইন্টারনেট সেবার নেটওয়ার্কের মধ্যে চলে আসবে। দাম ও গ্রাহক সেবার বিষয়ে সরকারের এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
এ বিষয়ে জানার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিউনিকেশনের (বিটিআরসি) মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিকেশন উইংয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।

আরও পড়ুনইন্টারনেট শাটডাউন চিরতরে বন্ধে স্টারলিংককে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে: প্রেস সচিব২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫স্টারলিংক চাইলেই সেবা দিতে পারে না

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবা সরকার ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপের কথা শোনা যায়। যদিও স্টারলিংক আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করে, তার পরেও বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক কাঠামো মেনে চলতে চেষ্টা করে স্টারলিংক। স্টারলিংক চাইলেই ইন্টারনেট সেবা দিতে পারে। বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স প্রাপ্তির পরেই সেবা মিলবে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের স্থানীয় টেলিযোগাযোগ আইন মেনে চলতে হয় স্টারলিংককে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা নিয়ে বেশ কিছু সরকারের সমালোচনামূলক পদক্ষেপ দেখা যায়। ইতালি স্টারলিংকের বিকল্প হিসেবে সরকারি যোগাযোগের জন্য নিজস্বভাবে কক্ষপথে উপগ্রহ পাঠাতে চায়। সংবেদনশীল বিভিন্ন সরকারি যোগাযোগের জন্য স্টারলিংকের উপর নির্ভরতা কমাতে কাজ করছে ইতালি।

আরও পড়ুনইলন মাস্কের স্টারলিংক নিয়ে কাজ করছে বিটিআরসি২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইলন মাস্ক.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স য ট ল ইট র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ