বিশ্বজুড়ে পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটে পড়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর থেকে জনগণের আস্থা কমছে। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর সহযোগী ও বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসযোগ্য শত্রু হিসেবে দেখছেন। তহবিল সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং ভূরাজনৈতিক বিভাজনের কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

ট্রাম্প ও মাস্ক যেভাবে ইউএসএআইডি বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলছেন এবং শিক্ষা বিভাগ তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তা সম্ভবত সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। এটি বুমেরাং হয়ে তাঁদের জন্যই বিপদ ডেকে আনতে পারে। তবে এটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে, পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগের মতোই থাকতে হবে—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আসলে পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলোর সনাতনী কায়দায় টিকিয়ে রাখার পক্ষে কথা বলার দিন শেষ হয়ে আসছে।

আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান, জ্বালানি শক্তির ব্যবহার পরিবর্তন এবং শিল্পনীতি রয়েছে—এগুলো কার্যকর প্রতিষ্ঠান ছাড়া সফলভাবে সামলানো সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমান সরকারি দপ্তর, সংস্থা, কমিশন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই এই নতুন চাহিদার সঙ্গে মানানসই নয়।

সরকারের কাজ পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠান সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আইন প্রয়োগ, শিক্ষা প্রদান, কর সংগ্রহ কিংবা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিষ্ঠান দরকার। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলতে হয়, যেমন পরিবেশ দূষণ রোধ বা সংঘবদ্ধ অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।

বর্তমান বিশ্বে পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মডেল আগের চেয়ে অনেক আলাদা হতে পারে। বেসরকারি খাতে গুগল (অ্যালফাবেট), বাইটড্যান্স, অ্যামাজন এবং আলিবাবার মতো প্রতিষ্ঠান ব্যবসার নতুন নতুন মডেল তৈরি করেছে। একসময় কেউ ভাবতেও পারেনি যে উবার বা গ্র্যাবের মতো কোম্পানি নিজেদের কোনো গাড়ি না রেখেও ট্যাক্সি সেবা দিতে পারবে।

অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়েও নতুন নতুন মডেল এসেছে। যেমন উইকিপিডিয়া, উশাহিদি (তথ্য সংগ্রহের প্ল্যাটফর্ম), কিংবা বুউরটজর্গ (নেদারল্যান্ডসের একটি গৃহসেবা প্রতিষ্ঠান)। এ ছাড়া সামাজিক ও পরিবেশগত নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত ‘বি-কর্স’(যেমন ব্রাজিলের নাতুরা) গড়ে উঠেছে।

সরকারি খাতেও উল্লেখযোগ্য কিছু উদ্ভাবন ঘটেছে। ২০০৯ সালে চালু হওয়া ভারতের আধার প্রকল্পের মাধ্যমে এক বিলিয়নের বেশি মানুষ বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র পেয়েছেন, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়িয়েছে। চীন ২০১১ সালে সাইবারস্পেস প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করে। এটি প্রযুক্তি খাতে বিপুল পরিবর্তন এনেছে।

আমরা হয়তো বর্তমানে প্রতিষ্ঠান ভাঙার যুগে রয়েছি। কিন্তু ইতিহাস বলছে, এই ধ্বংসের পরই নতুন কিছু গঠিত হয়। যখন পুনর্গঠনের সময় আসবে, তখন আমাদের নতুন ও উন্নত বিকল্পের খোঁজ আগেভাগেই নিতে হবে। ব্রাজিলের সমাজবিজ্ঞানী রবার্তো উঙ্গার বলেছিলেন, ‘এই বিশ্বে কোনো বিকল্প না থাকার অবস্থাই প্রকৃত সমস্যার মূল কারণ।’ ফলে ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের তৈরি করা এই অস্থিরতাই হতে পারে নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য শক্তিশালী অনুপ্রেরণা।

তবে বিশ্বের অনেক জায়গায় পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সেই পুরোনো কাঠামোতেই চলছে। বেশির ভাগই পিরামিড মডেলের। সেগুলো অস্বচ্ছ ও সাড়া দিতে দেরি করে। নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও তা সাধারণত প্রবীণ রাজনীতিক বা আমলারা তৈরি করেন, যা হয় জটিল ও অদক্ষ।

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের বিস্তৃতি বাড়লেও একে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কার্যকর প্রতিষ্ঠান এখনো গড়ে ওঠেনি। এআই ব্যবহারের সুফল পেতে হলে এবং এর ক্ষতিকর দিক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের শক্তিশালী নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রয়োজন।

কিছু প্রযুক্তি কোম্পানি সরকারকে নিরুৎসাহিত করতে চায়, যাতে সরকার এআই নিয়ন্ত্রণে কঠোর নিয়ম না করে। ২০২৩ সালে মাইক্রোসফটের প্রধান অর্থনীতিবিদ মাইকেল শোয়ার্জ বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ না বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে, ততক্ষণ এআই নিয়ন্ত্রণ করার দরকার নেই।’ কিন্তু এটি মূলত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষা করে।

অর্থনীতিবিদ দারোন আকেমোগলু ও অন্যরা দেখিয়েছেন, একটি দেশের উন্নতি নির্ভর করে তার প্রতিষ্ঠানের দক্ষতার ওপর। ভালো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা না গেলে উন্নতি সম্ভব নয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে আমরা এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারি, যা দ্রুত সাড়া দিতে পারবে এবং জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে।

আরও পড়ুনইলন মাস্ক যেভাবে বিশ্বের ১ নম্বর সমস্যা হয়ে উঠলেন০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বর্তমানে পাবলিক প্রতিষ্ঠান গঠনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ভাবনা আসছে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়েলসে ‘ফিউচার জেনারেশন কমিশনার’ নামে একটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণ নিশ্চিত করতে কাজ করে। ইউরোপীয় কমিশনেও এমন একটি পদ চালুর কথা ভাবা হচ্ছে।

এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী নতুন কিছু প্রতিষ্ঠান মিসইনফরমেশন বা ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ, নির্বাচনী হস্তক্ষেপ রোধ, শহরের জ্বালানি খাত সংস্কার, আদিবাসী সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন ও তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করার জন্য কাজ করছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ২০২৩ সালে বলেছিলেন, ‘আমরা যদি সমস্যার সমাধান করতে চাই, তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই হতে হবে।’ যদি প্রতিষ্ঠানগুলো সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত না হয়, তবে তারা সমস্যার সমাধান না দিয়ে বরং সমস্যার অংশ হয়ে উঠবে।

আমরা হয়তো বর্তমানে প্রতিষ্ঠান ভাঙার যুগে রয়েছি। কিন্তু ইতিহাস বলছে, এই ধ্বংসের পরই নতুন কিছু গঠিত হয়। যখন পুনর্গঠনের সময় আসবে, তখন আমাদের নতুন ও উন্নত বিকল্পের খোঁজ আগেভাগেই নিতে হবে। ব্রাজিলের সমাজবিজ্ঞানী রবার্তো উঙ্গার বলেছিলেন, ‘এই বিশ্বে কোনো বিকল্প না থাকার অবস্থাই প্রকৃত সমস্যার মূল কারণ।’

ফলে ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের তৈরি করা এই অস্থিরতাই হতে পারে নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য শক্তিশালী অনুপ্রেরণা।

জিওফ মালগান ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ল ন সমস য র ব যবহ র র জন য ব কল প আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

লামিনে ‘মেসি’ ইয়ামাল

১৭ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ১৯ ম্যাচ, ৫ গোল, ৪ গোলে সহায়তা।

১৭ বছর বয়সী লিওনেল মেসি: ৯ ম্যাচ, ১ গোল, গোলে সহায়তা নেই।

১৭ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল: ১০০ ম্যাচ, ২২ গোল, ৩৩ গোলে সহায়তা।

মেসি–রোনালদোর সঙ্গে তুলনা নয়, লামিনে ইয়ামালের শুরুটা বোঝাতে এই পরিসংখ্যান হাজির করেছে টিএনটি স্পোর্টস। ধূমকেতুর মতো শুরু হলেও ধূমকেতুর মতোই মিলিয়ে যাওয়ার পাত্র তিনি নন।

বার্সেলোনার এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে  গত রাতের ম্যাচটি স্মরণ করতে পারেন। ৬ গোলের থ্রিলার, যেখানে বার্সেলোনা–ইন্টার মিলান সেমিফাইনাল প্রথম লেগের ‘ক্লাসিক’ লড়াই ৩–৩ গোলে অমীমাংসীত। দুই দলের হয়েই ‘সুপার হিরো’ ছিলেন বেশ কজন। ইন্টারের যেমন ডেনজেল ডামফ্রিস ও মার্কাস থুরাম, বার্সার তেমনি রাফিনিয়া, ফেরান তোরেসরা। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ঠিকই রবির কিরণের মতো আলো দিয়েছেন এক কিশোর—লামিনে ইয়ামাল নাসরাউয়ি এবানা। সংক্ষেপে লামিনে ইয়ামাল।

আরও পড়ুন৬ গোলের থ্রিলারে বার্সেলোনা–ইন্টার সেয়ানে সেয়ানে টক্কর৮ ঘণ্টা আগে

২৪ মিনিটে ইয়ামালের করা গোলটির প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। যেভাবে খেলেছেন তাতে গোলটি না করলেও লোকে কাল রাতে তাঁর পারফরম্যান্স মনে রাখতেন। পরিসংখ্যান বলছে ১০২টি টাচ, একটি গোল, ২টি গোল হওয়ার মতো পাস, ৬টি শট (পোস্টে মেরেছেন দুবার) এবং ১০টির মধ্যে ৬টি সফল ড্রিবলিং।

কিন্তু পরিসংখ্যানে এ তথ্য নেই—মাঠে ডান প্রান্তকে ইয়ামাল ফাইনালে ওঠার হাইওয়ে বানিয়ে যতবার কাট–ইন করে ইন্টারের বক্সে ঢুকেছেন, সেটা আসলে ইতালিয়ান ক্লাবটির রক্ষণের জন্য দুঃস্বপ্নের। প্রতিবারই মৌমাছির মতো ছেঁকে ধরা হয়েছে ইয়ামালকে। কিন্তু আটকানো কি সম্ভব হয়েছে? রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলো ভাসছে। সেসব আসলে ইয়ামালের পায়ের কারুকাজে ইন্টারের রক্ষণকে স্রেফ খোলামকুচির মতো উড়িয়ে দেওয়ার ভিডিও।

ইয়ামাল কত ভয়ংকর সেটা এই এক ছবিতেই পরিস্কার। সবাই ছেঁকে ধরেও তাঁকে আটকাতে পারেননি

সম্পর্কিত নিবন্ধ