মানুষের ভিড়ে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান যেন হাট
Published: 27th, February 2025 GMT
হবিগঞ্জের মাধবপুর ও চুনারুঘাট মধ্যবর্তী সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের আগমন বেড়ে যাওয়ায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলটি লোকারণ্যে পরিণত হয়েছে। বনে প্রতিদিন হাজারো মানুষ প্রবেশ করায় বনের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকায় মানুষের অবাধ প্রবেশ ও ব্যাপক বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কারণে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান যেন হাটে পরিণত হয়েছে।
২০০৫ সালে সাতছড়ি বনের ২৪৩ হেক্টর বনভূমিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। সাত ছড়ার সমন্বয়ে গঠিত বলে সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক বনকে সাতছড়ি বলা হয়। এ বনটি একটি সমৃদ্ধ বন হিসেবে পরিচিত। এই বনে চিত্রা উড়ন্ত টিকটিকি, মুখপোড়া হনুমান, উল্টোলেজি বানর, কালো ভালুক, উদয়ী পাকড়া বন্যকুকুর, মায়া হরিণ, এশিয়াটিক কালো ভালুক, মেছোবাঘসহ ২১ প্রজাতির উভচর প্রাণীর বসবাস। এ বনাঞ্চলে ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ২০৩ প্রজাতির পাখি রয়েছে ও ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বনে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ও সাপ অবমুক্ত করায় বনে এখন জীবের সংখ্যা বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বনের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এতে বন যেন এখন হাট-বাজারে পরিণত হয়েছে। বনের ভেতরে পিকনিক করতে আসা লোকজন ও পর্যটকরা প্লাস্টিক ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলে ভাগাড়ে পরিণত করেছে। লোকজন হইহুল্লোড় করার কারণে বনে বসবাসকারী জীবজন্তু এখন বন ছেড়ে পালিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। বনের ছড়ায় পর্যটকদের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হচ্ছে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বড় সেতু।
মাধবপুরে পরিবেশবাদী এনজিও সংস্থা বাসার চেয়ারম্যান মুখলেছুর রহমান জানান, প্রাকৃতিক বনকে ধ্বংস করে পশুপাখির জন্য বনে লাগানো হয় ফলদ বাগান। বিদেশি অর্থ সহায়তায় টেকসই বন ও জীবিকা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বনের ভেতর ফলের গাছ রোপণ করা হয়। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা ও অবহেলায় ফলদ বাগান প্রকল্প তেমন সফল নয়।
বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় ও রেঞ্জ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বনের ভেতর লোকজন যত কম যাবে, তাতে পরিবেশ নীরব থাকবে। এতে বন তত সমৃদ্ধ হবে। বনের ভেতর বসবাসকারী জীববৈচিত্র্য নিরাপদে বেড়ে উঠার পরিবেশ পাবে। কিন্তু হয়েছে উল্টো। অপরিকল্পিতভাবে বন এলাকায় টিকিট কেটে দর্শনার্থী প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ায় বনের ক্ষতি হচ্ছে। তারা বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নেন সে নির্দেশনামতো কাজ করতে হয়। জাতীয় উদ্যান ঘোষণার কারণে সাতছড়ির প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় বনরক্ষীরা সাতছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, পর্যটন মৌসুমে বিশেষত শীত ও বসন্ত ঋতুতে সাতছড়িতে মানুষের ভিড় খুব বেড়ে যায়। মানুষ বেশি আসার কারণে বনের জীববৈচিত্র্য ধরে রাখা এখন কঠিন। মানুষের প্রবেশ কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এ বিষয়ে চিন্তা করছে বন বিভাগ। কারণ, দিন দিন বনে যে হারে লোকের প্রবেশ বাড়ছে, এটা বনের জন্য অশনিসংকেত।
মৌলভীবাজার প্রকৃতি সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বন র জ পর ব শ স তছড়
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস