মাহে রমজানের ইবাদতের প্রস্তুতি
Published: 28th, February 2025 GMT
পবিত্র রমজান মাস মুমিনদের জন্য আনন্দের; রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এই মাসে আল্লাহর রহমত ব্যাপকভাবে বর্ষিত হয়। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। ফলে রোজা, নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা, ফিতরা, জাকাত, জিকির-আসকারের মতো যাবতীয় ইবাদত সহজে তাদিকার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন সম্ভব হয়। পবিত্র কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস! যে মাসে মানুষের জন্য পথনির্দেশ, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন রোজা পালন করে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম বা রোজা পালন ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। প্রিয় নবী (সা.
রমজান মাস তাকওয়া বা সংযম অর্জনের মাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির ওপরেও, যাতে তোমরা তাকওয়া লাভ করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)
সিয়াম পালনের উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন, অর্থাৎ আল্লাহর ভয়ে সব মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা। এই সংযম সব শ্রেণির মানুষের জন্য। ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা মুনাফার অতিরিক্ত লোভ থেকে বিরত থাকবেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি থেকে দূরে থাকবেন, ভোক্তা ও ক্রেতারা অহেতুক অধিক পরিমাণে পণ্য ক্রয় থেকে বিরত থাকবেন, এবং সরকার ও প্রশাসন জনকল্যাণে ব্রতী হবে। তবেই রমজানের উদ্দেশ্য সফল হবে। তখন রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভ হবে।
মাহে রমজানে ফরজ সিয়ামের পরিপূরক আমলসমূহ
নিয়মিত ২০ রাকাত তারাবিহর নামাজ পড়া, সাহ্রি খাওয়া, ইফতার করা, কোরআন মজিদ তিলাওয়াত করা এবং রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা। বিশেষভাবে অপ্রয়োজনীয় বাক্যালাপ ও বেহুদা কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।
পবিত্র রমজানে সিয়াম পালনের উদ্দেশ্য হলো, ধনীরা যেন অভাবী মানুষের কষ্ট অনুভব করতে পারেন। তাই রমজানকে কেবল ভোজের আয়োজনের উৎসব হিসেবে পরিণত করা উচিত নয়। পানাহারের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগী না হয়ে যাতে ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সামর্থ্যবানেরা যেন অতিরিক্ত বাজার না করেন, যাতে গরিব মানুষ কেনার সুযোগ পায়। এসব পবিত্র রমজানের উদ্দেশ্য ও শিষ্টাচারের পরিপন্থী। বরং আমাদের প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন যাঁরা অভাবী, তাঁদের ইফতার ও সাহ্রির ব্যবস্থা করা আমাদের ইমানি কর্তব্য।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি পূর্ণ ইমানদার নয়, যে পেট পুরে আহার করে অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।’ (মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে এবং রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। তবে সেই রোজাদারের সওয়াব কম হবে না।’
সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘একটা পানিমিশ্রিত দুধের পেয়ালা অথবা একটি খেজুর, অথবা এক ঢোঁক পানি দিয়ে যদি কেউ রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও সে সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।’ আর যে ব্যক্তি রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে ইফতার করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত তৃষ্ণামুক্ত করবে। (মুসনাদে আহমাদ)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রমজ ন ম স রমজ ন র আল ল হ সওয় ব ক রআন ত কওয়
এছাড়াও পড়ুন:
ফেলনা জিনিসের পণ্য রপ্তানি করে সাফল্য রহমতুল ইসলামের
কয়েক বছর আগেও পেঁপেগাছের ডালপালা বা নল ছিল ফেলনা। কাঁচা বা পাকা পেঁপে সংগ্রহের পর ছেঁটে দেওয়া ডালপালা পড়ে থাকত বাগানে। ফেলে দেওয়া এই ডাল এখন মূল্যবান রপ্তানি পণ্য। শুধু পেঁপের নলই নয়, আমগাছ ও নিমগাছের ফেলে দেওয়া চিকন ডাল, পাটচুন ঘাস, নীলকণ্ঠ ফুলের মতো ফেলনা জিনিস দিয়ে তৈরি হচ্ছে পোষা প্রাণীর খাবার ও খেলনা। এসব বিশেষায়িত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রাও।
ফেলনা জিনিসকে রপ্তানি পণ্য বানানোর পথ দেখিয়েছেন দেশেরই একজন উদ্যোক্তা। এই উদ্যোক্তা হলেন রহমতুল ইসলাম। পোষা প্রাণীর খাবার ও খেলনা তৈরির জন্য মাগুরার প্রত্যন্ত গ্রাম জাগলায় কারখানা গড়ে তুলেছেন তিনি। সেখানে এসব পণ্য তৈরি করছেন গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীরা। বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড নামের এই কারখানায় প্রত্যক্ষ–পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০০ জনের।
গ্রামের এই ব্যতিক্রমী কারখানা দেখতে নিয়মিতই আসছেন বিদেশি ক্রেতারা। সংখ্যা কত হবে? রহমতুল ইসলাম জানালেন, গত আট বছরে কারখানা দেখতে আসা বিদেশি প্রতিনিধিদলের সংখ্যা চার শ জনের কম হবে না। মুঠোফোনে কথা বলার সময় তিনি জানালেন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদল এখন তাঁর কারখানা ঘুরে দেখছে।
যেভাবে শুরু
মাগুরার সন্তান রহমতুল ইসলাম উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা শুরু করেন। একসময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাপানে থিতু হন। তবে নিজের এলাকায় ব্যতিক্রমী কিছু করার তাড়না থেকে যায়। শুরুতে পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রাণীর খাবার ও খেলনা তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। এরপর দেশে ফিরে ২০১৮ সালে মাগুরার জাগলা গ্রামে চার–পাঁচজন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেন। পোষা প্রাণীর দুই ধরনের খেলনা তৈরির মাধ্যমে শুরু হয় কারখানার কর্মযজ্ঞ। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে জাপানে প্রথমবারের মতো তিন হাজার মার্কিন ডলারের পোষা প্রাণীর খেলনা রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি।
চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধীরে ধীরে রপ্তানিও বাড়তে থাকে। প্রয়োজন পড়ে নতুন কর্মীর। কিন্ত তাঁদের দক্ষ করে তোলার জন্য দরকার প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয় কারখানায়। কর্মী হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয় সুবিধাবঞ্চিত নারীদের। কর্মযজ্ঞ বৃদ্ধির পর জাপান ও সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে এই কারখানায়। প্রায় ২০ একর জমিতে কারখানার পাশাপাশি খাবার ও খেলনা তৈরির কাঁচামালের জন্য ঘাস ও গাছ রোপণ করেন তিনি। চাহিদা পূরণ না হওয়ায় এখন কাঁচামাল সরবরাহের জন্য প্রচারণাও শুরু করেছেন। ফেলনা জিনিস এনে বিক্রি করলেই নগদ টাকা দেওয়া হয়। এমন উদ্যোগে গ্রামের লোকজন ফেলনা জিনিস কুড়িয়ে বিক্রি করতে শুরু করেন কারখানায়। এমন সরবরাহকারীর সংখ্যাও এখন প্রায় ১০০।
পেঁপের নল, গাছের চিকন ডাল ও নানা রকমের ঘাস থেকে পোষা প্রাণির খাবার ও খেলনা তৈরি করছে মাগুরার বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।