সাতক্ষীরার মরিচ্চাপ নদীতে ভাঙন, আতঙ্কে ৮০০ পরিবার
Published: 1st, March 2025 GMT
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা সদর দিয়ে বয়ে যাওয়া মরিচ্চাপ নদীর বাঁধের ৫০০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আশপাশের অতন্ত পাঁচ গ্রামের মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলাতির কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গেলে শরীফুল ইসলাম বলেন, “আশাশুনি উপজেলার মধ্য চাপড়ায় মরিচ্চাপ নদী ভাঙছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রশাসনের লোকজন আসছেন দেখছেন। দিয়ে যাচ্ছেন আশ্বাস। তবে, নদী ভাঙন প্রতিরোধে নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ।”
আব্দুর রশিদ বলেন, “নিয়ম না মেনে মরিচ্চাপ নদী খনন করায় আশাশুনি উপজেলার মধ্য চাপড়ায় নদী পাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ৮০০ পরিবারের। গত কয়েক দিনে নদীর তীরের ৯০ ফুট জমিসহ চারটি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। আরো ১০টি বাড়ির আংশিক ভেঙে গিয়ে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মরিচ্চাপ নদীর তীরে থাকা চাপড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
শীতের শুরুতেই পদ্মায় জেগে উঠছে চর
তিস্তার পাড়ে ভাঙন রোধে বিশেষ মোনাজাত
মোমেনা খাতুন জানান, ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভয়ে রাত কাটাতে হয় তাদের। নদী ভাঙনে বাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ায় কবর স্থানে ঝুপড়ি বেঁধে রয়েছেন তারা।
চাপড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিমানন্দ কুমার দাশ বলেন, “মরিচ্চাপ নদীর তীরে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মাদরাসা ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন না ঠেকালে স্কুল থাকবে না। পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে শিক্ষার্থীদের।”
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কৃষ্ণা রায় ভাঙনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “অনেক প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো-০২) নির্বাহী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করা হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, “নদী ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। তারা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই একটি গ্রাম তলিয়ে যাবে।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ঘাড়ব্যথার কারণগুলো কী কী, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা জেনে রাখুন
অনেক কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
১. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস
২. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস
৩. সারভাইক্যাল রিবস
৪. সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া
৫. সারভাইক্যাল ডিস্ক প্রলেপস বা হারনিয়েশন যেখানে হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে
৬. মাংসপেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি
৭. অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা
৮. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগ
৯. হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ এবং ক্ষয়
১০. অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ
১১. হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া
১২. রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস
১৩. সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস
১৪. ফাইব্রোমায়ালজিয়া
১৫. সামনে ঝুঁকে বা পাশে কাত হয়ে ভারী কিছু তুলতে চেষ্টা করা
১৬. হাড়ের ইনফেকশন
১৭. ডিস্কাইটিস (ডিস্কের প্রদাহ)
১৮. পেশাগত কারণে দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু বা উঁচু করে রাখলে ইত্যাদি।
উপসর্গ
ঘাড়ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত ছড়াতে পারে।
কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব।
বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে।
সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে আছে মনে হয়।
ঘাড়ের মুভমেন্ট করলে, ঘাড় নিচু করে ভারী কিছু তোলার পর তীব্র ব্যথা।
হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়।
ব্যথা মাথার পেছন থেকে শুরু হয়ে মাথার সামনে আসতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
ঘাড়ব্যথার কারণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা হতে পারে—রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, ঘাড়ের এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান।
চিকিৎসা
চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে।
কনজারভেটিভ চিকিৎসা: ১. ব্যথা বা প্রদাহনাশক ওষুধ ২.ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যেমন ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিকেল ইকুইপমেন্ট যেমন ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথারমি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা: মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা এবং অবশ ভাব দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
ঘাড়ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়
১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না।
২. মাথার ওপর কোনো ওজন নেবেন না।
৩. প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে।
৪. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।
৫. শোবার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দেবেন।
৬. তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো (টুইসটিং) বন্ধ করা।
৭. সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না।
৯. কাত হয়ে শুয়ে পড়বেন না বা টেলিভিশন দেখবেন না।
১০. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন।
১১. গরম প্যাড, গরম পানির বোতল দিয়ে গরম সেঁক দেবেন।
১২. ঘাড়ের পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।
এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ঢাকা
আরও পড়ুনকাঁধের ব্যথা বা কাঁধ জমে যাওয়ার কারণ ও করণীয়১৭ এপ্রিল ২০২৫