প্রায় তিন মাস পর মিয়ানমারের ভেতরে বিস্ফোরণ, কেঁপে উঠল টেকনাফ সীমান্ত
Published: 1st, March 2025 GMT
প্রায় তিন মাস পর কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। এতে কেঁপে উঠেছে সীমান্তবর্তী বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনা। এ ঘটনায় টেকনাফ উপজেলা সদরসহ আশপাশের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া সীমান্তের ঠিক ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন।
ইউএনও বলেন, বিকট বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠার ঘটনার পরপর বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সীমান্তের টহল জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
টেকনাফ সদরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য এনামুল হক বলেন, প্রায় তিন মাস বিরতির পর সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ভেতর থেকে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে এসেছে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিস্ফোরণের প্রথম শব্দটি শোনার পর ৫ থেকে ১০ মিনিট পর আরেকটি শব্দ শোনা গেছে।
টেকনাফ সদরের চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেন, ঘটনার সময় তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। তবে পরপর দুটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দে বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। বাড়ির জানালা ও দেয়াল ফেটে গেছে।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। এর দুই দিন পর ৮ ডিসেম্বর দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপসহ সীমান্তের অধিকাংশ এলাকায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিল। এর পর থেকে আর কোনো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি।
এ বিষয়ে সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।
এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।
মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।
পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।
পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’
জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।