কুমিল্লায় আবারও গাড়িতে ডাকাতি, মহাসড়ক এমন অনিরাপদ জানলে দেশে ফিরতাম না, বললেন প্রবাসী
Published: 1st, March 2025 GMT
কুমিল্লায় দুই দিনের ব্যবধানে মালয়েশিয়া ফেরত এক প্রবাসীর গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম থানার অর্ধ কিলোমিটার দূরে ফাল্গুনকরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ওই প্রবাসীর নাম বেলাল হোসেন, তিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমে ভাড়া করা প্রাইভেটকারযোগে তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঁইয়ার শরিফপুর গ্রামে যাচ্ছিলেন। ডাকাত দল গাড়ি থেকে নগদ টাকা, মোবাইল সেট, স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৬ লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। একই স্থানে গত বৃহস্পতিবার ভোরে কুয়েত থেকে ফেরা এক প্রবাসীর গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল।
পুলিশ জানায়, প্রবাসী বেলাল মালয়েশিয়া থেকে শুক্রবার রাত ১০টায় হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দর থেকে ভাড়া করা প্রাইভেটকারে তিনি স্বজনদের নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেন। শনিবার ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে মহাসড়কের উপজেলা সদরের ফাল্গুনকরা নামক স্থানে পৌঁছলে অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনের ডাকাত দল পিকআপে করে এসে প্রবাসীর ভাড়া করা প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দেয়। এ সময় গাড়ির গতি কমানোর পর ডাকাত দল পিকআপ থেকে নেমে অস্ত্রের মুখে প্রবাসীসহ অপর স্বজনদের জিম্মি করে সব মালামাল লুটে নেয়।
প্রবাসী বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার জন্য ৩ বছর পর প্রবাস থেকে দেশে আসি শুক্রবার রাতে। বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে মহাসড়কের মেঘনা ব্রিজ পার হয়ে যাত্রাবিরতি করি। বিরতি শেষে আবারও রওনা করলে দাউদকান্দি এলাকায় বিশাল যানজটে আটকা পড়ি। এ সময় চালক জাবেদ উল্টো লেন দিয়ে গাড়িটি অনেক দূর নিয়ে আসেন। ভোরে মহাসড়কের ফাল্গুনকরা এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে ত্রিপল মোড়ানো একটি পিকআপ ভ্যান এসে আমাদের বহনকৃত প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দেয়। এ সময় চালক প্রাইভেটকারটি নিয়ন্ত্রণ রেখে গতি কিছুটা কমালে ডাকাত দল পিকআপ থেকে নেমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রাইভেটকারটিতে আঘাত করে ভাঙচুর করে। এ সময় অস্ত্রের মুখে ডাকাত দল গাড়িতে থাকা ৫টি মোবাইল ফোন, ১ ভরি স্বর্ণ, ৩ হাজার মালেশিয়ান রিঙ্গিত এবং ৪টি মালামালের লাগেজ লুটে নেয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬ লাখ টাকা। এসময় তারা আমার পাসর্পোটটিও কেড়ে নেয়, পরে অনুরোধ করলে পাসপোর্টটি ফেরত দেয়। প্রবাসী বেলাল বলেন, ‘বিদেশে অনেক ঘাম ঝরিয়ে অর্থ কামাই করে দেশে ফিরে ডাকাতদের কবলে পড়ে সব হারাতে হলো। মহাসড়ক এমন অনিরাপদ জানলে দেশে আসতাম না।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহাসড়কে চলাচলকারী বেশ কয়েকজন মাইক্রোবাসের চালক বলেন, ডাকাত দল কখনও বিমানবন্দর ও কখনও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে হোটেলে অবস্থান নিয়ে প্রবাসীদের গাড়ি ফলো করে। ভোর ৪টার পর মহাসড়ক যানবাহনের চাপ কম থাকে। পুলিশও টহলে থাকে না। এ সময় তারা ডাকাতির সুযোগ নেয়। গত দুই দিনের ডাকাতির বেলায়ও তাই হয়েছে। রমজানের তারাবি ও সেহেরীর সময় ডাকাতির আশংকা করছেন চালকরা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার একই একই স্থানে সশস্ত্র ডাকাত দল হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে কুয়েত প্রবাসী নাইমুল ইসলামের সর্বস্ব লুটে নেয়। এ ঘটনায় মামলা হলেও কেউ আটক হয়নি।
চৌদ্দগ্রাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহাম্মেদ সমকালকে বলেন, এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। ভুক্তভোগী ওই প্রবাসীকে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। ডাকাতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ওসি দাবি করেন, হাইওয়ে পুলিশের বিষয়টি জানি না, তবে থানা পুলিশ সকাল পর্যন্ত মহাসড়কে টহলে ছিল।
হাইওয়ের পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, মহাসড়কে চৌদ্দগ্রামে প্রবাসীর গাড়িতে ডাকাতির সংবাদ পেয়ে আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতদের ব্যবহার করা গাড়ি শনাক্তের চেষ্টা চলছে। রমজানে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের টহল টিম আরও বৃদ্ধি করা হবে বলেও তিনি জানান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রব স ড ক ত দল প কআপ এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?