রামেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত
Published: 1st, March 2025 GMT
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেকে) হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা। দেশের অন্য সব হাসপাতালের মতো উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই হাসপাতালটিতেও সাতদিন ধরে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে। শনিবার (১ মার্চ) থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকেরাও কর্মবিরতি শুরু করেছেন। ফলে সংকট আরো বেড়েছে।
রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে ওয়ার্ড রয়েছে ৬০টি। এসব ওয়ার্ডে ২৭৭ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও প্রায় ১৫০ জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকেরা দায়িত্ব পালন করেন। মূলত তারাই রোগী রিসিভ করেন এবং শুরুতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
তারা না থাকার কারণে এখন শুধু হাসপাতালে সরকারিভাবে নিয়োগ পাওয়া প্রায় ৩০০ জন মিড লেভেলের চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন। গড়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে পাঁচজন করে চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে। এই পাঁচজন শিফট ভাগ করে ২৪ ঘণ্টায় দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।
আরো পড়ুন:
ধামরাইয়ে বিস্ফোরণে বাসভবনের নিচতলা চূর্ণবিচূর্ণ, দম্পতি দগ্ধ
আট মাস বেতন বন্ধ, কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত
এর বাইরে আগের মতো রাজশাহী মেডিকেল কলেজের প্রায় ১০০ জন অধ্যাপক কিংবা সহকারী অধ্যাপক সকালে একবার ওয়ার্ডে রাউন্ড দিচ্ছেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকেরাও কর্মবিরতিতে যাওয়ার ফলে শুধু সরকারি চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতাল চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ওয়ার্ডে রোগী সামলাতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার ওয়ার্ডে সব সময় চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রোগীর স্বজনেরা।
এদিকে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ ও ৫ দফা দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার (১ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের সামনে সমাবেশ করেছেন চিকিৎসকেরা। কর্মসূচিতে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক এবং মেডিকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
কর্মসূচিতে তারা বিএমডিসির বিরুদ্ধে করা রিট প্রত্যাহার এবং শুধু এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রীধারীদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। তারা বিএমডিসি থেকে ম্যাটস শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করার দাবি জানান। রামেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক ফোরামের সভাপতি ডা.
এ সময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের রক্তরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মুর্শেদ জামান মিঞা, ড্যাবের নেতা মনোয়ার তারিক সাবু, সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. মনিরুজ্জামান সরকার, ডা. এ এসএম আব্দুল্লাহ, ডা. শফিকুল ইসলাম, পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেনিং ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের রামেক হাসপাতালের আহ্বাক ডা. এটিএম আখেরুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতাল কীভাবে চলছে জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওইভাবেই চলছে। কারণ, ইন্টার্ন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকেরা যেহেতু একটা দাবি করেছেন এবং এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ সমাধানের পথ দেয়নি, তাই আন্দোলন চলছে। তারপরও এই সময়ে রোগীরা যাতে সেবা বঞ্চিত না হন তার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের সরকারি মিড লেভেলের চিকিৎসক ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা সেবা দিচ্ছেন।’
ঢাকা/কেয়া/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প স ট গ র য জ য় ট ট র ইন ম ড ক ল কল জ চ ক ৎসকদ র চ ক ৎসক র আম দ র কর ছ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ড্যাবের নির্বাচন ৯ আগস্ট, দুটি প্যানেলই শক্ত
বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নির্বাচনকে সামনে রেখে চিকিৎসকদের একটি অংশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ড্যাবের নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন চিকিৎসকেরা। তবে ভোটার তালিকার কিছু ত্রুটি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন।
ড্যাবের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন ৯ আগস্ট। নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একটি প্যানেলের পক্ষে সভাপতি ও মহাসচিব পদে দাঁড়িয়েছেন যথাক্রমে অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও জহিরুল ইসলাম শাকিল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলে সভাপতি ও মহাসচিব প্রার্থী যথাক্রমে অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক ও অধ্যাপক আবদুস সাকুর খান। হারুন আল রশিদ ২০১৯ সাল থেকে ড্যাবের সর্বশেষ কমিটির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। আর অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক এর আগের ১৪ বছর অর্থাৎ ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ড্যাবের সভাপতি ছিলেন।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল স্বাচিপ। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বড় অংশীদার ছিল স্বাচিপ। সরকার পরিবর্তনের পর স্বাচিপ এখন চুপচাপ। নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য খাতে ড্যাবের উপস্থিতি অধিকতর দৃশ্যমান হবে বলে অনেকেই মনে করেন।পেশাজীবী চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) থাকার পরও প্রায় প্রতিটি বড় রাজনৈতিক দলের চিকিৎসকদের পৃথক সংগঠন আছে। বিএনপির আছে ড্যাব, তেমনি জামায়াতের আছে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। এক বছর আগে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত আওয়ামী লীগের ছিল স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল স্বাচিপ। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বড় অংশীদার ছিল স্বাচিপ। সরকার পরিবর্তনের পর স্বাচিপ এখন চুপচাপ। নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য খাতে ড্যাবের উপস্থিতি অধিকতর দৃশ্যমান হবে বলে অনেকেই মনে করেন।
নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য খাতে ড্যাবের উপস্থিতি অধিকতর দৃশ্যমান হবে বলে অনেকেই মনে করেন।ভোটার তালিকায় ৩ হাজার ১৩৯ জনের নাম আছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষের চিকিৎসকেরাই জানিয়েছেন, ভোটার তালিকায় কিছু ত্রুটি আছে। ড্যাবের আজীবন সদস্য—এমন কিছু চিকিৎসকের নাম তালিকায় নেই। আবার মারা গেছেন—এমন চিকিৎসকদের নাম তালিকায় আছে। অন্যদিকে নতুন যে তিন শর মতো চিকিৎসক সদস্য হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন, যাঁরা বিতাড়িত আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এ নিয়ে কারও কারও মধ্যে ক্ষোভ বা অসন্তুষ্টি দেখা গেলেও প্রকাশ্যে কেউ বিরোধিতা করছেন না বা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাও কেউ বলছেন না।
ড্যাবের নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিজন কান্তি সরকার গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আর কিছু করার নেই। যা আছে তা মেনে নিয়েই সবাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে।’
প্রায় দেড় দশকে দেখা গেছে, ড্যাবের মধ্যেও দুটি ধারা বা পক্ষ আছে। গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শিশু হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ড্যাবের মধ্যেই দুটি পক্ষ স্পষ্ট। একটি পক্ষ ড্যাবের সাবেক মহাসচিব ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের অনুসারী। অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক ও অধ্যাপক আবদুস সাকুর খানের প্যানেলটি এদিকে আছে। জাহিদ হোসেন–বিরোধী বলে পরিচিত ড্যাবের সদস্যদের একটি অংশ আছে প্রতিদ্বন্দ্বী অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও জহিরুল ইসলাম শাকিল প্যানেলে।
ড্যাবের কোনো পক্ষেরই সমর্থক তিনি নন, কারও ঘোর বিরোধীও নন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই অংশ। এই নির্বাচন থেকে চিকিৎসকেরা এবং দেশবাসী সৎ ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।ড্যাবের আজীবন সদস্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল অনুষদের ডিন শাখাওয়াত হোসেনগতকাল দুই প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী এ কে এম আজিজুল হক ও হারুন আল রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী।
ড্যাবের আজীবন সদস্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল অনুষদের ডিন শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ড্যাবের কোনো পক্ষেরই সমর্থক তিনি নন, কারও ঘোর বিরোধীও নন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই অংশ। এই নির্বাচন থেকে চিকিৎসকেরা এবং দেশবাসী সৎ ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।