দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার আফসারাবাদ কলোনি এলাকার ‘রহিম শাহ বাবা ভান্ডারি মাজারে’ হামলা–অগ্নিসংযোগের পর ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মাজারের সীমানাপ্রাচীরের খুঁটি, কবরের ঢাকনা, দেয়াল এবং কুঠুরি ঘরের খুঁটি ভাঙচুর ও লুটপাট চলতে দেখা যায়।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে মাজারে ওরসের নামে গান-বাজনা, মাদক সেবনসহ অশ্লীল কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ তুলে হামলা করে অগ্নিসংযোগ করেন স্থানীয় ‘তৌহিদি জনতা’। সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এলাকায় লাঠিমিছিল কর্মসূচির পর ওই হামলার ঘটনা ঘটে।

আজ সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মাজারে থেকে দেখা যায়, ২৫–৩০ জন নারী-পুরুষ যে যাঁর মতো মাজার চত্বরে ওরসের জন্য তৈরি করা মঞ্চ, প্যান্ডেলের বাঁশ, কাপড় ও দড়ি খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ মাজারের ভেতরে রহিম শাহ বাবা ভান্ডারির কবরের ঢাকনা (আরসিসি) ও দেয়াল, মাজারের দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব পাশে থাকা কুঠুরির খুঁটিতে হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে রড বের করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল পাঁচটায় উপজেলার রানীগঞ্জ বাজারে সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদের ব্যানারে মাজার বন্ধের দাবিতে লাঠিমিছিল করা হয়। পরে মিছিল থেকে উত্তেজিত স্থানীয় ‘তৌহিদি জনতা’ আফসারাবাদ কলোনিতে মাজারে হামলা করেন। পরে মাজারে ওরসের জন্য তৈরি করা মঞ্চ ও প্যান্ডেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পাশাপাশি মেহমানদের কুঠুরি ঘরের আসবাব, রান্নার হাঁড়িপাতিলসহ ওরসের জন্য কেনা ৮টি গরু, ১০টি ছাগল লুট করা হয়।

মাজারের ভান্ডারি জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, হজরত গাউসুল আজম রহিম শাহ বাবার মৃত্যুর দিনকে স্মরণ করে প্রতিবছর বাংলা সনের ১৮ ফাল্গুন মাজারে ওরস হয়। ওরসে দেশ ও বিদেশ থেকে ১০–১৫ হাজার মেহমান আসেন। ২ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত বার্ষিক ওরস আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল মাজার কর্তৃপক্ষ। এ জন্য জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘গতকাল সকাল থেকে মাজারের ভক্ত নারী-পুরুষেরা মাজারের সাজসজ্জা ও খাবারের আয়োজন করছিলেন। বিকেলে তৌহিদি জনতা মাজারে হামলা করেন। তাঁরা মাজারে আগুন লাগিয়ে সব পুড়িয়ে দেন। মাজারের সব ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন। মাজারে থাকা ওরসের জন্য কেনা গরু-ছাগলসহ তাঁর বাড়ি থেকে দুটি ছাগল নিয়ে গেছেন। এখানকার যে অবস্থা, কার কাছে অভিযোগ দেব।’

সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদের কেউই মাজারে হামলা ও আগুন দেওয়ার কথা স্বীকার করেননি। গতকাল বিকেলে সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদের ব্যানারে লাঠিমিছিল চলাকালে উত্তেজিত তৌহিদি জনতা মিছিল থেকে বের হয়ে মাজারে হামলা ও আগুন দিয়েছেন বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদের উপদেষ্টা মুফতি মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রহিম শাহ বাবা মাজারের মুরিদরা ইসলামের মৌলিক কাঠামোগুলো নিয়ে কটূক্তি করেন। এ জন্য এলাকার মানুষ তাঁদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাঁরা তাঁদের ধর্ম পালন করলে কোনো বিষয়ই ছিল না। তাঁরা শিরক করুন, বেদাত করুন, কেয়ামতের দিন তাঁদের হিসাব তাঁরাই দেবেন। তিনি বলেন, গতকাল যেটা হয়েছে, সেটিতে স্থানীয় আলেম-ওলামাদের সমর্থন ছিল না। তাঁদের কোনো কর্মসূচিও ছিল না। কিন্তু রমজান মাস আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সেখানে শামিয়ানা টানান। সেখানে সারা রাত মাইক বাজাবেন, নাচবেন, গাইবেন—বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মানুষ বিরক্ত। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে মানুষ প্রতিবাদ করতে পারেননি, এখন মানুষ সেই জায়গা থেকে ছুটে যান। তবে সেটা করতে গিয়ে গতকাল স্থানীয় মানুষ অতিরিক্ত যেটি করে ফেলেছেন, সেটি নিন্দনীয়। এটিকে কখনো সমর্থন করা যায় না।

আরও পড়ুনঘোড়াঘাটে ওরস আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যে মাজারে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ২২ ঘণ্টা আগে

ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, গতকাল রহিম শাহ বাবা ভান্ডারির মাজারে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার প্রথমে একটি বিক্ষোভ মিছিল করার কথা ছিল। কিন্তু হুট করে তৌহিদি জনতা মাজারে গিয়ে হামলা করেন ও আগুন দেন। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও লোক এত বেশি ছিলেন, তাঁরা কিছুই করতে পারেননি। পরে সবার সঙ্গে আলোচনা করে পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিসসহ সবাই গিয়ে আগুন নেভান এবং এলাকা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। মাজারে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম

উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।

এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে  ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ