তিনি সরকারের আমলা। তবে সে তথ্য গোপন করে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে দুই ব্যাংক থেকে নিয়েছিলেন সাড়ে সাত কোটি টাকা ঋণ। কিন্তু ঋণের কিস্তি আর দেননি। সেই ঋণ সুদ-আসলে হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। ঋণখেলাপিকে খুঁজে পেতে হয়রান ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে জানতে পারে, তিনি আসলে ব্যবসায়ী নন, সরকারের আমলা। সেই কর্মকর্তা হলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (প্রশাসন-২) একরামুল হক চৌধুরী। পরে দুই ব্যাংক কর্তৃপক্ষই জনপ্রশাসন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়। মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এখন ওই কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কাজ থামিয়ে দিতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ।

চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া সরকারি কাজ ব্যতিরেকে কোনো ব্যবসায় বা চাকরিতে জড়িত হতে পারবেন না। তবে নন-গেজেটেড সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া তাঁর পরিবারের সদস্যদের শ্রম কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবেন এবং তা তাঁর সম্পত্তির ঘোষণাপত্রের সঙ্গে দাখিল করতে হবে। 
জানা গেছে, উপসচিব একরামুল চৌধুরী নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে মুক্তার এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক দাবি করে ইস্টার্ন ব্যাংক গাজীপুর শাখা থেকে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দুই কোটি টাকা ঋণ নেন। পরে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আরও এক কোটি টাকা ঋণ নেন। এর আগে ২০১৬ সালে একই পরিচয় দিয়ে একই প্রতিষ্ঠানের নামে প্রিমিয়ার ব্যাংক মাওনা শাখা থেকে আরও সাড়ে চার কোটি টাকা ঋণ নেন। ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিলের মধ্যে তাঁর প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রথম ঋণ পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু ঋণ নেওয়ার পর তিনি আর কোনো কিস্তি পরিশোধ করেননি। ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁর এই ঋণ সুদসহ দাঁড়ায় ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এক পর্যায়ে একরামুল চৌধুরীর পরিচয় জানতে পেরে ২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁকে একটি নোটিশ দেয়। তার পরও তিনি কিস্তি পরিশোধ করেননি। 

গত সেপ্টেম্বরে প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়। এর আগে গত বছরের ১১ জানুয়ারি ইস্টার্ন ব্যাংক আরেকটি অভিযোগ দাখিল করে। পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি চিঠি দেন। তারপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। 

এদিকে প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের মাওনা শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মেহেদী হাসান লিখিত অভিযোগ দেন। তাতে বলা হয়, সহকারী সচিব মো.

একরামুল হক চৌধুরী সরকারি চাকরিজীবীর তথ্য গোপন করে বেআইনিভাবে ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ব্যাংকের ঋণ গ্রহণ করে নামে-বেনামে মাওনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তি ক্রয় করে ইচ্ছাকৃত নিজে ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মেহেদী হাসান বলেন, গাজীপুরের গ্রামীণফোনের ফ্লেক্সিলোডের ডিস্ট্রিবিউটর মুক্তার এন্টারপ্রাইজের মালিক হিসেবে একরামুল হক চৌধুরী ব্যবসার জন্য সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন। পরে আমরা জানতে পারি, তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব। এ কারণে বিষয়টি লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় তাঁর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কেউ মন্তব্য করতে চাননি। তবে উপসচিব একরামুল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, আমি জমি বন্ধক দিয়ে ঋণ নিয়েছিলাম। এখন কোনো কারণে ঋণ পরিশোধ করতে পারিনি। কিন্তু আপনি জানেন, ব্যাংক থেকে এক টাকা ঋণ নিতে হলে তিন টাকার জমি বন্ধক রাখা লাগে। আমার জমি ব্যাংকের কাছে দেওয়া আছে। এখন ব্যাংক বলছে, আমার জমি বিক্রি করে তারা ঋণের টাকা নিয়ে নেবে। আগামী মাসেই হয়তো ব্যাংক এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেবে। এ ছাড়া কোনো তথ্য গোপন করার বিষয় এখানে নেই। কিছু লোক আমার সম্পর্কে এগুলো ছড়াচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঋণ স প ট ম বর ব যবস য় সরক র র পর শ ধ

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবকে এখনও দেশের সবচেয়ে বড় তারকা মানেন তামিম

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে মুখ খুলেছেন তামিম ইকবাল। সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তারকা খ্যাতি বা ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এই দুই তারকার দূরত্বের পেছনে অন্য কারণ কাজ করেছে। তবে সেই দূরত্ব ঘোচানোর জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলেও আক্ষেপ করেছেন তিনি।

তামিম বলেন, ‘অনেকে বলে, কে কার চেয়ে সেরা। কার এনডোর্সমেন্ট বেশি। এগুলো কিছুই আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করেনি। আমি সব সময় বলেছি, বাংলাদেশের স্পোর্টসে সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব। আমি নিজেই যখন এটা বলি, তখন তারকা খ্যাতি সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে না।’

তিনি জানান, বিসিবির পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হলে সাকিব ও তার মধ্যকার দূরত্ব কমত। ‘তারা আলাদাভাবে কথা বলেছেন, কিন্তু দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেননি’, বলেন তামিম।

তামিম আরও বলেন, অধিনায়ক থাকার সময় সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে তিনি নিজেই চেষ্টা করেছেন। যদিও সে চেষ্টা তখন সফল হয়নি, ভবিষ্যতে সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা এখনও তিনি দেখেন।

এমনকি নিজের অসুস্থতার সময় সাকিবের সহানুভূতিশীল আচরণের কথাও কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করেন তামিম। বলেন, ‘আমার অসুস্থতার সময়ে সাকিব তার ফেসবুকে দোয়ার অনুরোধ করেছিল। তার বাবা-মা হাসপাতালে আমাকে দেখতে গিয়েছেন। আমরা দু’জনই পরিণত। সামনাসামনি হলে এবং নিজেদের মধ্যে কথা হলে সম্পর্ক উন্নত হতে পারে।’

তামিমের এই মন্তব্যেই বোঝা যায়, ব্যক্তিগত বিরোধ থাকলেও তামিম এখনও চান সাকিবের সঙ্গে তার সম্পর্কটা সুস্থতায় ফিরুক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ