টঙ্গীর হাজি মাজার বস্তিতে যৌথ বাহিনীর অভিযান, আটক ৬০
Published: 2nd, March 2025 GMT
গাজীপুরের টঙ্গীর হাজি মাজার বস্তিতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৬০ জনকে আটক করেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়া অভিযান চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। অভিযানে উদ্ধার করা হয় নগদ টাকা, ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ছুরি, চাকুসহ বিভিন্ন জিনিস।
গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে গিয়ে দেখা যায়, বস্তির চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছেন র্যাব, পুলিশ, সেনা, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা। বস্তিটিতে সারি বাঁধা কয়েক শ টিনশেড ঘর। প্রতিটি ঘরে যাতায়াতের জন্য আছে সরু গলির মতো রাস্তা। সেনাসদস্যরা এক এক করে বস্তির প্রতিটি ঘর তল্লাশি করেন। এ সময় বিভিন্ন ঘর থেকে উদ্ধার হয় মাদক বিক্রির ৩৯ হাজার ৪০০ টাকা, দুটি চাকু, দুটি ছোরাসহ বিভিন্ন জিনিস। এ সময় ৬০ জনকে আটক করা হয়।
অভিযান চলাকালে কথা হয় টঙ্গী পশ্চিম থানার এক উপপরিদর্শকের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যারা চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বেশির ভাগই এ বস্তির বাসিন্দা। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন জায়গায় অপরাধ করে এসে এই বস্তিতে আশ্রয় নেয়। কিছুদিন আগেও মহাসড়কে কে আগে ছিনতাই করবে, এ নিয়ে এখানকার দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। আমরা প্রায়ই অভিযান চালিয়ে এদের অনেককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠাই। কিন্তু কিছুদিন পর আবার কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে অপরাধে জড়ায়।’
কথা হয় বস্তির কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে। এর মধ্যে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রেহানা আক্তার বলেন, ‘আমরা সকালবেলা কামে চইল্যা যাই। বাসায় আহি রাইত ১০–১১টায়। এর মধ্যে কে, কী করল, সেইড্যা দেখার সময় নাই। তয়ে মাঝেমধ্যেই দেহি বাইরের কিছু লোক (বহিরাগত) বস্তিতে ঘোরাঘুরি করে। কিছু পোলাপাইন তাগোর কাছে মাদক বেচে। এসব নিয়্যা আমরা কেউ কিছু বলতে গেলেই সমস্যা। মাঝেমধ্যে মারধরও করে। হেললাইগ্যা সবকিছু দেইখ্যাও কেউ কিছু কই না। আমরা নিজেরাও সব সময় আতঙ্কে থাকি।’
অভিযানটি পরিচালিত হয় গাজীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।