গত বছর ফ্যাসিবাদী শাসনামলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) গণইফতার কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণইফতার কর্মসূচি আয়োজন করলে হয়রানি, হামলাসহ নানাভাবে বাধা দেয় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এরই প্রতিবাদে পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিনে এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণইফতার কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। রবিবার (২ মার্চ) রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে থাকছে বিস্তারিত-

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)

আরো পড়ুন:

রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, ভোটগ্রহণ জুনে

রাবিতে অর্ধশত অবৈধ দোকান উচ্ছেদ

নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত গণইফতার কর্মসূচিতে বিভিন্ন হল ও বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

ইফতারের পূর্বে কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়া-মোনাজাত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও হলের শিক্ষার্থীরা বাহারি আইটেমের ইফতার সামগ্রী দিয়ে এই আয়োজনে মিলিত হন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ইফতারের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য্য প্রকাশ পায়। ক্যাম্পাসে সবাই মিলে একত্রিত হয়ে একসঙ্গে ইফতার করলে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ইসলামিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটায়।

তারা আরো বলেন, স্বৈরাচারের দোসররা ক্যাম্পাসে গত বছর ইফতারের আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল এবং অরাজকতা আখ্যা দিয়েছিল। এরই প্রতিবাদে গত বছরের প্রথম রমযানে নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে গণ ইফতারের আয়োজন করা হয়েছিল। একই ধারাবাহিকতায় এ বছরের প্রথম রমযানে গণইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। এ আয়োজনে মুসলিম-অমুসলিম সবাই অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলেও জানান তারা।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বেরোবি প্রশাসনের উদ্যোগে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.

মো. শওকাত আলী।

তিনি বলেন, “রমজান মাসের প্রথম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সঙ্গে ইফতার করতে পেরে আনন্দ বোধ করছি। সবাই এক কাতারে বসতে পারাই আমাদের হৃদ্যতা। মহান আল্লাহ আমাদের রমজানকে কবুল করে নিক।”

এ সময় দোয়া ও ইফতার মাহফিল কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান, রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর রশিদ, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিক প্রমুখ। দোয়া মাহফিলটি পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব রকিব উদ্দিন আহাম্মেদ। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)

কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে রাবি প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতারে ঢল নামে শিক্ষার্থীদের। বিকেল থেকেই শিক্ষার্থী দলে দলে যোগদান করতে শুরু করেন। তবে আয়োজনের তুলনায় বেশি মানুষ হওয়াই অনেকে ইফতার না পেলেও এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

ইফতারে অংশ নিতে আশা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সালেহ শোয়েব বলেন, “প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য। এত মানুষের সঙ্গে ইফতার করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। তবে যা ভেবেছিলাম, তার থেকে অনেক বেশি মানুষ চলে এসেছে। সবাই হয়তো ইফতার পায়নি। প্রশাসনের এ বিষয়ে অবগত থাকা উচিত ছিল।”

আরেক শিক্ষার্থী তুহিন বলেন, “এত মানুষ হবে ভাবিনি। তবে প্রথম ইফতারে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। সবাইকে থেকে অনেক ভালো লাগছে। আশা করছি, এর মাধ্যমে আমাদের ভাতৃত্ব বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।”

এদিকে, সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে ইফতার আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল। সেখানে ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যাতে তারা নির্বিঘ্নে ইফতার করতে পারে।

এর আগে ফেসবুক পোস্টে উপ-উপাচার্য বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় মসজিদের মুসল্লিদের জন্য ইফতার আয়োজনে ছাত্রীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছাত্রীদের জন্য কেন্দ্রীয় মসজিদের পূর্ব ও পশ্চিম গেটের মধ্যবর্তী খালি জায়গায় প্যান্ডেল স্থাপন করা হবে।”

তিনি বলেন, “ছাত্রীরা পশ্চিম গেট দিয়ে প্রবেশ ও প্রস্থান করবে। অন্যদিকে, ছাত্ররা অজু সেরে মসজিদে এসে ইফতার করবে এবং মাগরিবের নামাজ জামায়াতে আদায় করে প্যান্ডেল ত্যাগ করবে।”

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)

বাকৃবি শাখা ছাত্রশিবিরের উদ্যোগের বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত দিনব্যাপী গণ ইফতার কর্মসূচির আয়োজন করেছে। ইফতার কর্মসূচির প্রথম দিনে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে উৎসবে পরিণত হয় মাহফিলটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে আয়োজিত এ ইফতার কর্মসূচিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিভিন্ন অনুষদ ও বর্ষের প্রায় ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। আসরের নামাজের পর বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা দলে দলে মসজিদে উপস্থিত হতে থাকেন। ইফতারের পূর্ব মুহুর্তে কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব সাওমের তাৎপর্য আলোচনা ও দোয়া পরিচালনা করেন। 

এ বিষয়ে বাকৃবি শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসির ত্বোহা বলেন, “আমাদের ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধি ও ইসলামের পুরনো ঐতিহ্য সবাই মিলে একসঙ্গে ইফতার করা। ইসলামী ছাত্রশিবিরের লক্ষ্য সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি করা। এজন্য শিবির সর্বদা শিক্ষার্থী ও দেশের কল্যাণে কাজ করে থাকে।”

তিনি বলেন, “পবিত্র রমজানের শিক্ষা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে বাকৃবি ছাত্রশিবির গণ ইফতার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের সংগঠনের প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টান্ত। এভাবেই গণইফতার কর্মসূচিতে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করছি।” 

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ন দ র য় মসজ দ দ র জন য মসজ দ র ইফত র র র প রথম আম দ র ইসল ম রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ