বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণইফতার আয়োজন করে অভিনব প্রতিবাদ
Published: 2nd, March 2025 GMT
গত বছর ফ্যাসিবাদী শাসনামলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) গণইফতার কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণইফতার কর্মসূচি আয়োজন করলে হয়রানি, হামলাসহ নানাভাবে বাধা দেয় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এরই প্রতিবাদে পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিনে এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণইফতার কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। রবিবার (২ মার্চ) রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে থাকছে বিস্তারিত-
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)
আরো পড়ুন:
রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, ভোটগ্রহণ জুনে
রাবিতে অর্ধশত অবৈধ দোকান উচ্ছেদ
নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত গণইফতার কর্মসূচিতে বিভিন্ন হল ও বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
ইফতারের পূর্বে কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়া-মোনাজাত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও হলের শিক্ষার্থীরা বাহারি আইটেমের ইফতার সামগ্রী দিয়ে এই আয়োজনে মিলিত হন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ইফতারের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য্য প্রকাশ পায়। ক্যাম্পাসে সবাই মিলে একত্রিত হয়ে একসঙ্গে ইফতার করলে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ইসলামিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটায়।
তারা আরো বলেন, স্বৈরাচারের দোসররা ক্যাম্পাসে গত বছর ইফতারের আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল এবং অরাজকতা আখ্যা দিয়েছিল। এরই প্রতিবাদে গত বছরের প্রথম রমযানে নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে গণ ইফতারের আয়োজন করা হয়েছিল। একই ধারাবাহিকতায় এ বছরের প্রথম রমযানে গণইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। এ আয়োজনে মুসলিম-অমুসলিম সবাই অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলেও জানান তারা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বেরোবি প্রশাসনের উদ্যোগে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
তিনি বলেন, “রমজান মাসের প্রথম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সঙ্গে ইফতার করতে পেরে আনন্দ বোধ করছি। সবাই এক কাতারে বসতে পারাই আমাদের হৃদ্যতা। মহান আল্লাহ আমাদের রমজানকে কবুল করে নিক।”
এ সময় দোয়া ও ইফতার মাহফিল কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান, রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর রশিদ, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিক প্রমুখ। দোয়া মাহফিলটি পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব রকিব উদ্দিন আহাম্মেদ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)
কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে রাবি প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতারে ঢল নামে শিক্ষার্থীদের। বিকেল থেকেই শিক্ষার্থী দলে দলে যোগদান করতে শুরু করেন। তবে আয়োজনের তুলনায় বেশি মানুষ হওয়াই অনেকে ইফতার না পেলেও এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ইফতারে অংশ নিতে আশা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সালেহ শোয়েব বলেন, “প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য। এত মানুষের সঙ্গে ইফতার করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। তবে যা ভেবেছিলাম, তার থেকে অনেক বেশি মানুষ চলে এসেছে। সবাই হয়তো ইফতার পায়নি। প্রশাসনের এ বিষয়ে অবগত থাকা উচিত ছিল।”
আরেক শিক্ষার্থী তুহিন বলেন, “এত মানুষ হবে ভাবিনি। তবে প্রথম ইফতারে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। সবাইকে থেকে অনেক ভালো লাগছে। আশা করছি, এর মাধ্যমে আমাদের ভাতৃত্ব বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।”
এদিকে, সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে ইফতার আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল। সেখানে ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যাতে তারা নির্বিঘ্নে ইফতার করতে পারে।
এর আগে ফেসবুক পোস্টে উপ-উপাচার্য বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় মসজিদের মুসল্লিদের জন্য ইফতার আয়োজনে ছাত্রীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছাত্রীদের জন্য কেন্দ্রীয় মসজিদের পূর্ব ও পশ্চিম গেটের মধ্যবর্তী খালি জায়গায় প্যান্ডেল স্থাপন করা হবে।”
তিনি বলেন, “ছাত্রীরা পশ্চিম গেট দিয়ে প্রবেশ ও প্রস্থান করবে। অন্যদিকে, ছাত্ররা অজু সেরে মসজিদে এসে ইফতার করবে এবং মাগরিবের নামাজ জামায়াতে আদায় করে প্যান্ডেল ত্যাগ করবে।”
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)
বাকৃবি শাখা ছাত্রশিবিরের উদ্যোগের বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত দিনব্যাপী গণ ইফতার কর্মসূচির আয়োজন করেছে। ইফতার কর্মসূচির প্রথম দিনে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে উৎসবে পরিণত হয় মাহফিলটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে আয়োজিত এ ইফতার কর্মসূচিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিভিন্ন অনুষদ ও বর্ষের প্রায় ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। আসরের নামাজের পর বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা দলে দলে মসজিদে উপস্থিত হতে থাকেন। ইফতারের পূর্ব মুহুর্তে কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব সাওমের তাৎপর্য আলোচনা ও দোয়া পরিচালনা করেন।
এ বিষয়ে বাকৃবি শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসির ত্বোহা বলেন, “আমাদের ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধি ও ইসলামের পুরনো ঐতিহ্য সবাই মিলে একসঙ্গে ইফতার করা। ইসলামী ছাত্রশিবিরের লক্ষ্য সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি করা। এজন্য শিবির সর্বদা শিক্ষার্থী ও দেশের কল্যাণে কাজ করে থাকে।”
তিনি বলেন, “পবিত্র রমজানের শিক্ষা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে বাকৃবি ছাত্রশিবির গণ ইফতার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের সংগঠনের প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টান্ত। এভাবেই গণইফতার কর্মসূচিতে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করছি।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ন দ র য় মসজ দ দ র জন য মসজ দ র ইফত র র র প রথম আম দ র ইসল ম রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।