বন্দর সংযোগ ও বাণিজ্য সহজীকরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ
Published: 2nd, March 2025 GMT
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ নতুন দিগন্তে প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কারের ধারা শুরু হয়েছে, যা দেশে উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক নীতি এবং সুশাসনের প্রতি গভীর আকাঙ্ক্ষাকে উজ্জীবিত করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক সংস্কারের পরিকল্পনাগুলো সুসংহত করার পাশাপাশি শাসন ব্যবস্থার সংস্কার, অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং নাগরিককেন্দ্রিক নীতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এসব সংস্কার বাংলাদেশকে স্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং টেকসই উন্নয়ন প্রসারে ভূমিকা রাখবে। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষত বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্টের পথ সুগম হয়েছে।
নিঃসন্দেহে এফডিআই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রযুক্তি স্থানান্তর, মূলধন সংগ্রহ, বাজারে প্রবেশাধিকার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত কার্যকর উপায় হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে এফডিআই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। বিশেষত বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ এবং অন্যান্য করপোরেট কাঠামোতে সফল সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন খাতের বিকাশে সহায়ক হয়েছে। তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে এফডিআইর অবদান অপরিসীম। দেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প বিশ্ববাজারে শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করেছে।
এফডিআই আকর্ষণের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে মাত্র ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এফডিআই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, যা ভিয়েতনামের ১৮ বিলিয়ন এবং ভারতের ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় অনেক কম। উপরন্তু, আইএমএফের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী গত চার বছরে দেশের এফডিআই সংগ্রহের পরিমাণ প্রায় ৫.
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে আরও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা এবং রপ্তানি পণ্য ও বাজারের বহুমুখীকরণ। এসব পদক্ষেপ দেশের অর্থনীতির গতি ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে এফডিআই প্রবাহ বাড়ানোর জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের দিকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এ প্রেক্ষাপটে বন্দরভিত্তিক লজিস্টিক অবকাঠামো উন্নয়ন রূপান্তরমূলক প্রভাব ফেলতে সক্ষম। কারণ এটি সংযোগ বাড়ায় এবং সামগ্রিক লজিস্টিক ব্যয় ও লিড টাইম কমায়। এর মাধ্যমে উচ্চ পর্যায়ের এফডিআই আকর্ষণ করার জন্য একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের লজিস্টিক অবকাঠামো যথেষ্ট উন্নত না হওয়ায় শিল্প খাত এবং অর্থনীতিকে তার পূর্ণ সম্ভাবনা পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ এবং প্রায় ৯৮ শতাংশ কনটেইনার বাণিজ্য পরিচালনা করে। বিশ্বব্যাংকের কনটেইনার পোর্ট পারফরম্যান্স ইনডেক্স ২০২৩ অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান বিশ্বের ৪০৫টি বন্দরের মধ্যে ৩৩৭তম। একই রিপোর্ট অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজগুলোর টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম গড়ে ৩.২৩ দিন, যা কলম্বোতে মাত্র ০.৮৬ দিন। এ ছাড়া বন্দরটিতে আমদানি ক্লিয়ারেন্সে গড় ১১ দিন এবং রপ্তানি বর্ডার কমপ্লায়েন্সে গড়ে ৩৬ ঘণ্টা সময় লাগে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে কিছুটা উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে; বন্দর খাতে আরও দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।
বন্দরে লজিস্টিক ইকোসিস্টেমের প্রতিবন্ধকতা দূর করা না হলে সক্ষমতা উন্নয়নে যে কোনো পদক্ষেপ অকার্যকর বিবেচিত হবে। বন্দর, কার্গোর সঙ্গে সড়ক, রেল, অভ্যন্তরীণ জলপথের অপ্রতুল সংযোগের কারণে পরিবহন ব্যয় যেমন বাড়ছে, সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে। সম্প্রতি চালু হওয়া ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এনএসডব্লিউ) ব্যবস্থা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, যা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া সহজ করবে এবং কর্মদক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশের বন্দরের সীমিত ক্ষমতা এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার কারণে দেশ এখনও তার ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা ও শক্তিশালী উৎপাদন ভিত্তি সম্পূর্ণ কাজে লাগাতে সক্ষম হয়নি। এই অদক্ষতা বাংলাদেশের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতার দুর্বলতা, উচ্চ ব্যবসা ও লেনদেন ব্যয় এবং বাণিজ্য বিলম্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশে লজিস্টিক ব্যয় খাতভেদে ৪.৫ থেকে ৪.৮ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে, যা বাণিজ্য অংশীদার এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। লজিস্টিক খাতে লক্ষ্যভিত্তিক স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি সংস্কারের মাধ্যমে জাতীয় রপ্তানি আয় ১৯ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব। লজিস্টিক খাতে ব্যয় ১ শতাংশ কমানোর মাধ্যমে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি চাহিদা প্রায় ৭.৪ শতাংশ বাড়তে পারে।
বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, জাতীয় অর্থনীতি ২০৪১ সাল নাগাদ ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে এবং রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা হবে ৩০০ বিলিয়ন ডলার, বৈদেশিক বিনিয়োগ হবে ৬০ থেকে ৭০ বিলিয়ন ডলার ও বার্ষিক অবকাঠামোগত বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ১০ বিলিয়ন ডলার। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে লজিস্টিক খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং চট্টগ্রামের বে টার্মিনালের মতো পরিকল্পনাধীন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনায় নতুন দ্বার উন্মোচন করতে সক্ষম হবে। এসব উদ্যোগ বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, রপ্তানির সময় কমানো এবং শিপিং খরচ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। উদাহরণস্বরূপ, বে টার্মিনাল বিশেষভাবে বৃহদাকার জাহাজ পরিচালনার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং ২০৩৬ সালের মধ্যে এর কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বর্তমান ৩.২ মিলিয়ন টিইইউ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬ মিলিয়ন টিইইউতে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে।
এসব প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করবে প্রাথমিক প্রস্তুতি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ও মানের ওপর। বিশেষ করে এসব উদ্যোগের সঙ্গে সহায়ক অবকাঠামো যেমন ব্রেক ওয়াটার, নেভিগেশনাল চ্যানেলের পর্যাপ্ত ড্রেজিং, আন্তঃদেশীয় সংযোগ, ওয়্যার হাউজিং ও ডিজিটালাইজেশনে পরিপূরক বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া বৈশ্বিক উদাহরণ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষালাভের সুযোগ রয়েছে। ভিয়েতনামের এফডিআইভিত্তিক লজিস্টিক কৌশল শুধু বন্দরের দক্ষতা বাড়ায়নি, বরং রপ্তানি বহুমুখীকরণকে সহজতর করেছে। সিঙ্গাপুরের পোর্ট কমিউনিটি সিস্টেমের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কাস্টমস প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও দ্রুত করেছে, যা বাণিজ্য প্রবাহ সহজ করেছে এবং বন্দর ব্যবস্থাপনাকে অধিক কার্যকরী করে তুলেছে।
বাংলাদেশের সামনে আরেকটি বৃহত্তর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা উন্মোচিত হচ্ছে এবং এই পথ চলতে সরকারকে একটি স্পষ্ট ও কার্যকর কৌশল অবলম্বন করতে হবে। বন্দর কার্যক্রমে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারকে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অপারেটরদের সম্পৃক্ত করতে হবে। এটি শুধু দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নিয়ে আসবে না, বরং বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতেও সাহায্য করবে, যখন সরকারকে আর্থিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সরকারি ব্যয় কমানোর প্রয়োজন হবে। শুল্ক পদ্ধতি সরলীকরণ, নিয়ন্ত্রক বাধা কমানো এবং আধুনিক ডিজিটাল টুলস যেমন এআই এবং ব্লকচেইনের ব্যবহার লজিস্টিক সেক্টরের কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে পারে।
এ ছাড়া মাল্টিমোডাল লজিস্টিক সিস্টেমের উন্নয়ন প্রয়োজন, যা বন্দরকে শিল্পাঞ্চল ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং তা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা উন্মোচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউএন-এসকাপের তথ্য অনুযায়ী, উন্নত অবকাঠামো ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ৩৫.৫ বিলিয়ন ডলার আয় এনে দিতে পারে।
একটি আধুনিক, দক্ষ এবং স্বচ্ছ লজিস্টিক ব্যবস্থা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করে দেশকে বৈশ্বিক বাজারে নির্বিঘ্নে একীভূত এবং একটি স্থিতিস্থাপক ও প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সক্ষম করবে। সাহসী সংস্কার ও কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার প্রকৃত সম্ভাবনা উন্মোচন করতে সক্ষম হবে এবং ভবিষ্যতে একটি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারবে।
ড. মাসরুর রিয়াজ: চেয়ারম্যান, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক অবক ঠ ম ক র যকর ব যবস থ পদক ষ প অন য য় র জন য সহ য ক সরক র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি