পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার তাদের সমর্থনে কর্মবিরতি শুরু করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরাও। এদিন ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা করেন তারা। এতে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। 
এদিকে চিকিৎসক হিসেবে সম্মান দাবি করে এদিন সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএমএ) ও সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের মানিকগঞ্জ জেলা শাখা। সেখানে নেতারা গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ম্যাটস কোর্স কারিকুলাম, চার দফা নিয়ে মিথ্যাচার, কটূক্তি করছেন বলে 
অভিযোগ আনেন। বিষয়টি তাদের জন্য মানহানিকর বলেও উল্লেখ করেন।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবন থেকে শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে কলেজ প্রাঙ্গণেই সংক্ষিপ্ত 
আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তারা বলেন, বিগত সরকার ম্যাটস শিক্ষার্থীদের বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া শুরু 
করেছে। বিষয়টিকে বেআইনি ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তারা। আলোচকেরা মনে করেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে 
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। অথচ তাদের দাবি উপেক্ষা করা হচ্ছে।
এ সময় তাদের পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন ইন্টার্ন চিকিৎসক জুহয়ের তওসীফ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য খাতের বিপ্লব সাধনের জন্য এসব দাবি পেশ করেছি। আমাদের দাবি মানা না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
চিকিৎসক হিসেবে সম্মান চাই
রোববার দুপুরে মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনের সংবাদ সম্মেলনে ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের নেতারা বলেন, উপমহাদেশের মানুষ এক সময় এলএমএফ চিকিৎসকের সেবার ওপরই নির্ভর করতেন। পরবর্তী সময়ে তা বাতিল করে কনডেন্স কোর্সের মাধ্যমে এমবিবিএস কোর্স করিয়ে চিকিৎসকদের শহরের হাসপাতাল ও প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে গ্রাম এলাকার রোগীরা চিকিৎসক সংকটে পড়েন। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ১৯৭৬ সালে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) চালু করেন। এখানে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক থানা হেলথ কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা করছেন। কিন্তু তারা বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পরও নামের আগে ‘ডাক্তার’ লেখা নিয়ে ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন।
বক্তারা বলেন, সম্প্রতি গ্রাজুয়েট চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ম্যাটস কোর্স কারিকুলাম, চার দফা নিয়ে মিথ্যাচার, কটূক্তি করছেন। বিষয়টি তাদের জন্য মানহানিকর।
বিডিএমএ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো.

আবুল হাসান বলেন, শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া, কোর্সের নাম ও কারিকুলামে অসংগতির 
সমাধানসহ তাদের একাধিক দাবি রয়েছে। সরকার পক্ষ এসব মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এমন সময় একটি গোষ্ঠী সরকারকে চাপে রাখতে নানা কর্মসূচি পালন করছে। 
সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতি এম এ কাদের বলেন, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টরা গ্রাম-বাংলার ৮০ ভাগ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। তবে তাদের প্রশাসনিকভাবে মর্যাদা দেওয়া হয় না। এ চিকিৎসকেরা নামের আগে যেন ‘ডাক্তার’ লিখতে না পারেন, সেজন্য অপশক্তি কাজ করছে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে। রায় আসার আগ পর্যন্ত তাদের ‘ডাক্তার’ লিখতে সমস্যা নেই। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র ম ন কগঞ জ ম য টস সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চিকিৎসক মাত্র ৩ জন, অন্তঃসত্ত্বাদের সেবায় নার্স, দাঁতের চিকিৎসায় টেকনোলজিস্ট

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামের কিশোরী ইয়াসমিন আখতার (১৫) পেটে ব্যথা নিয়ে রোববার দুপুরে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। জরুরি বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারীরা রোগীর শয্যায় তাঁকে শুইয়ে রাখেন। কিছু সময় পর জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এভাবে প্রতিদিন তিনজন চিকিৎসক, চার থেকে পাঁচজন স্বাস্থ্য সহকারী ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দিয়ে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষের চিকিৎসা চালাতে হচ্ছে। এ উপজেলায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস।

হাসপাতালে গিয়ে পাওয়া গেল চিকিৎসক আলমগীর হোসেনকে। তিনি হাসপাতালের ১০ নম্বর কক্ষে বসেন। এ কক্ষের সামনে রোগীদের ভিড় দেখা গেল বেশি। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীর চাপ একটু বেশি। এত সব রোগী সামলাতে বেশ হিমশিম খেতে হয়। এ ছাড়া বাহুবল দাঙ্গাপ্রবণ এলাকা। হঠাৎ ঝগড়া করে একসঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে লোকজন চলে আসেন। যতটুকু সম্ভব এর মধ্যেই রোগীদের ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।’ তিনি জানান, জরুরি বিভাগের দায়িত্ব, বহির্বিভাগের দায়িত্ব, আবাসিক বিভাগের দায়িত্বসহ মোট ৫টি পদে তাঁকে একাই কাজ করতে হচ্ছে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রেষণে তাঁকে এখানে পাঠানো হয়েছে।

শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় রোববার অন্যান্য দিনের তুলনায় বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ অনেক বেশি ছিল। সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারে রোগীদের দীর্ঘ সারি। কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা রোগের ধরন অনুযায়ী রোগীদের বিভিন্ন কক্ষে চিকিৎসকদের কাছে পাঠাচ্ছেন।
জরুরি বিভাগ সামলাচ্ছেন একজন চিকিৎসক এবং দুই থেকে তিনজন স্বাস্থ্য সহকারী। তাঁরা রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপত্র দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসকের সংকটের কারণে কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা দিয়ে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের ১৭টি পদের মধ্যে ১৪টিই শূন্য। শিশুদের জন্য জুনিয়র কনসালট্যান্ট আছেন মাত্র একজন। গাইনি বিভাগের কোনো চিকিৎসক না থাকায় একজন জ্যেষ্ঠ নার্স দিয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

বেশ কয়েকজন রোগীর সঙ্গে চিকিৎসা নিয়ে কথা হলে তাঁদের অধিকাংশই বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবায় সন্তুষ্টির কথা জানালেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিকিৎসক মাত্র ৩ জন, অন্তঃসত্ত্বাদের সেবায় নার্স, দাঁতের চিকিৎসায় টেকনোলজিস্ট