মানিকগঞ্জে দুই পক্ষের কর্মসূচিতে নানা দাবি
Published: 2nd, March 2025 GMT
পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার তাদের সমর্থনে কর্মবিরতি শুরু করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরাও। এদিন ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা করেন তারা। এতে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে চিকিৎসক হিসেবে সম্মান দাবি করে এদিন সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএমএ) ও সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের মানিকগঞ্জ জেলা শাখা। সেখানে নেতারা গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ম্যাটস কোর্স কারিকুলাম, চার দফা নিয়ে মিথ্যাচার, কটূক্তি করছেন বলে
অভিযোগ আনেন। বিষয়টি তাদের জন্য মানহানিকর বলেও উল্লেখ করেন।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবন থেকে শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে কলেজ প্রাঙ্গণেই সংক্ষিপ্ত
আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তারা বলেন, বিগত সরকার ম্যাটস শিক্ষার্থীদের বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া শুরু
করেছে। বিষয়টিকে বেআইনি ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তারা। আলোচকেরা মনে করেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। অথচ তাদের দাবি উপেক্ষা করা হচ্ছে।
এ সময় তাদের পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন ইন্টার্ন চিকিৎসক জুহয়ের তওসীফ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য খাতের বিপ্লব সাধনের জন্য এসব দাবি পেশ করেছি। আমাদের দাবি মানা না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
চিকিৎসক হিসেবে সম্মান চাই
রোববার দুপুরে মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনের সংবাদ সম্মেলনে ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের নেতারা বলেন, উপমহাদেশের মানুষ এক সময় এলএমএফ চিকিৎসকের সেবার ওপরই নির্ভর করতেন। পরবর্তী সময়ে তা বাতিল করে কনডেন্স কোর্সের মাধ্যমে এমবিবিএস কোর্স করিয়ে চিকিৎসকদের শহরের হাসপাতাল ও প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে গ্রাম এলাকার রোগীরা চিকিৎসক সংকটে পড়েন। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ১৯৭৬ সালে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) চালু করেন। এখানে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক থানা হেলথ কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা করছেন। কিন্তু তারা বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পরও নামের আগে ‘ডাক্তার’ লেখা নিয়ে ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন।
বক্তারা বলেন, সম্প্রতি গ্রাজুয়েট চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ম্যাটস কোর্স কারিকুলাম, চার দফা নিয়ে মিথ্যাচার, কটূক্তি করছেন। বিষয়টি তাদের জন্য মানহানিকর।
বিডিএমএ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো.
সমাধানসহ তাদের একাধিক দাবি রয়েছে। সরকার পক্ষ এসব মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এমন সময় একটি গোষ্ঠী সরকারকে চাপে রাখতে নানা কর্মসূচি পালন করছে।
সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতি এম এ কাদের বলেন, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টরা গ্রাম-বাংলার ৮০ ভাগ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। তবে তাদের প্রশাসনিকভাবে মর্যাদা দেওয়া হয় না। এ চিকিৎসকেরা নামের আগে যেন ‘ডাক্তার’ লিখতে না পারেন, সেজন্য অপশক্তি কাজ করছে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে। রায় আসার আগ পর্যন্ত তাদের ‘ডাক্তার’ লিখতে সমস্যা নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র ম ন কগঞ জ ম য টস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ড্যাবের নির্বাচন ৯ আগস্ট, দুটি প্যানেলই শক্ত
বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নির্বাচনকে সামনে রেখে চিকিৎসকদের একটি অংশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ড্যাবের নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন চিকিৎসকেরা। তবে ভোটার তালিকার কিছু ত্রুটি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন।
ড্যাবের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন ৯ আগস্ট। নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একটি প্যানেলের পক্ষে সভাপতি ও মহাসচিব পদে দাঁড়িয়েছেন যথাক্রমে অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও জহিরুল ইসলাম শাকিল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলে সভাপতি ও মহাসচিব প্রার্থী যথাক্রমে অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক ও অধ্যাপক আবদুস সাকুর খান। হারুন আল রশিদ ২০১৯ সাল থেকে ড্যাবের সর্বশেষ কমিটির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। আর অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক এর আগের ১৪ বছর অর্থাৎ ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ড্যাবের সভাপতি ছিলেন।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল স্বাচিপ। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বড় অংশীদার ছিল স্বাচিপ। সরকার পরিবর্তনের পর স্বাচিপ এখন চুপচাপ। নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য খাতে ড্যাবের উপস্থিতি অধিকতর দৃশ্যমান হবে বলে অনেকেই মনে করেন।পেশাজীবী চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) থাকার পরও প্রায় প্রতিটি বড় রাজনৈতিক দলের চিকিৎসকদের পৃথক সংগঠন আছে। বিএনপির আছে ড্যাব, তেমনি জামায়াতের আছে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। এক বছর আগে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত আওয়ামী লীগের ছিল স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল স্বাচিপ। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বড় অংশীদার ছিল স্বাচিপ। সরকার পরিবর্তনের পর স্বাচিপ এখন চুপচাপ। নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য খাতে ড্যাবের উপস্থিতি অধিকতর দৃশ্যমান হবে বলে অনেকেই মনে করেন।
নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য খাতে ড্যাবের উপস্থিতি অধিকতর দৃশ্যমান হবে বলে অনেকেই মনে করেন।ভোটার তালিকায় ৩ হাজার ১৩৯ জনের নাম আছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষের চিকিৎসকেরাই জানিয়েছেন, ভোটার তালিকায় কিছু ত্রুটি আছে। ড্যাবের আজীবন সদস্য—এমন কিছু চিকিৎসকের নাম তালিকায় নেই। আবার মারা গেছেন—এমন চিকিৎসকদের নাম তালিকায় আছে। অন্যদিকে নতুন যে তিন শর মতো চিকিৎসক সদস্য হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন, যাঁরা বিতাড়িত আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এ নিয়ে কারও কারও মধ্যে ক্ষোভ বা অসন্তুষ্টি দেখা গেলেও প্রকাশ্যে কেউ বিরোধিতা করছেন না বা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাও কেউ বলছেন না।
ড্যাবের নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিজন কান্তি সরকার গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আর কিছু করার নেই। যা আছে তা মেনে নিয়েই সবাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে।’
প্রায় দেড় দশকে দেখা গেছে, ড্যাবের মধ্যেও দুটি ধারা বা পক্ষ আছে। গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শিশু হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ড্যাবের মধ্যেই দুটি পক্ষ স্পষ্ট। একটি পক্ষ ড্যাবের সাবেক মহাসচিব ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের অনুসারী। অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক ও অধ্যাপক আবদুস সাকুর খানের প্যানেলটি এদিকে আছে। জাহিদ হোসেন–বিরোধী বলে পরিচিত ড্যাবের সদস্যদের একটি অংশ আছে প্রতিদ্বন্দ্বী অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও জহিরুল ইসলাম শাকিল প্যানেলে।
ড্যাবের কোনো পক্ষেরই সমর্থক তিনি নন, কারও ঘোর বিরোধীও নন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই অংশ। এই নির্বাচন থেকে চিকিৎসকেরা এবং দেশবাসী সৎ ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।ড্যাবের আজীবন সদস্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল অনুষদের ডিন শাখাওয়াত হোসেনগতকাল দুই প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী এ কে এম আজিজুল হক ও হারুন আল রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী।
ড্যাবের আজীবন সদস্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল অনুষদের ডিন শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ড্যাবের কোনো পক্ষেরই সমর্থক তিনি নন, কারও ঘোর বিরোধীও নন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই অংশ। এই নির্বাচন থেকে চিকিৎসকেরা এবং দেশবাসী সৎ ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।