Prothomalo:
2025-06-16@03:57:30 GMT

নিরাপদ থাকুক বনের প্রাণীরা

Published: 3rd, March 2025 GMT

একটি অসুস্থ বুনো পুরুষ হাতিকে পাওয়া গেল রাঙামাটির লংগদু এলাকায়। হাতিটির পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ভালো করে চলাফেরা করতে পারছিল না। এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। খাবারের অভাবে হাতিটি মারা যাওয়ার উপক্রম। এ রকম এক অবস্থায় বন অধিদপ্তর আর স্থানীয় হাতি সংরক্ষণ দল হাতিটির চিকিৎসায় এগিয়ে এল। তাকে অজ্ঞান করে চিকিৎসা দিয়ে বনে আবার ছেড়ে দেওয়া হলো। সুস্থ হয়ে গত দুই মাসে হাতিটি বনের ভেতর স্বাভাবিক চলাফেরা করছে। মানুষের আঘাতে হাতিসহ অন্য বুনো প্রাণীদের এ রকম অনেক ঘটনা হরহামেশাই ঘটে। বেশির ভাগ সময়ই আহত বুনো প্রাণীরা মারা পড়ে। লংগদুর হাতিটির জীবন ফিরে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।

এ দেশে হাতির বসবাস উপযোগী বন নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ এলাকায় হাতি–মানুষের দ্বন্দ্ব হচ্ছে। গত এক যুগে মারা গেছে শতাধিক হাতি। হাতি মারা পড়লে খবরটি পাওয়া যায়; কিন্তু অন্য প্রাণীর খবর পাওয়া বিরল। ২০১৬ সালে এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, আমাদের বনে হাতি এখন টিকে আছে মাত্র ২৬৮টি। গত দশ বছরে কত হাতি মারা গেল সেই তথ্য জানা আছে; কিন্তু কী পরিমাণ হাতির বাচ্চা আমরা পেয়েছি সেই তথ্যটি অজানা। কেবল হাতি গণনা করলেই তা আবার জানা যাবে।

ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ টাঙ্গুয়ার হাওরে গেলাম পাখিশুমারি করতে। ১০ হাজার হেক্টরের এই হাওরটি পৃথিবীবাসীর কাছে বুনো হাঁসের স্বর্গ নামে পরিচিত। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে এই হাওরে লক্ষাধিক বুনো হাঁস দেখা যায়। এ বছর পাখিগণনায় পাওয়া গেল তার উল্টো ফল। পাখি দেখা গেল মাত্র ২২ হাজার। এত পাখি কমে যাওয়ার বড় কারণ হাওরটি ভালো নেই। চায়না জাল দিয়ে সারা হাওরে অবৈধ উপায়ে মাছ ধরা আর সঙ্গে পাখি শিকার। এ কারণে কমে গেছে পাখি। তাই এবার শীতের পাখিশুমারিতে যেকোনো বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম পাখি পাওয়া গেছে।

এ বছরের প্রথম দিকে সোনাদিয়ায় গিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বিরল পাখি চামুচঠুঠো বাটানের দেখা পাইনি। তবে জানুয়ারির শেষ ভাগে মহেশখালীর সোনাদিয়ায় দেখা গেছে তিনটি আর দুটি পাখির দেখা মিলেছে সন্দ্বীপের কাছাকাছি গাংগুরিয়া চরে। সোনাদিয়া ছিল এই পাখিটির সবচেয়ে ভালো আবাস। আস্তে আস্তে এই দ্বীপটিও পাখিটির অনুপোযোগী হয়ে গেল।

গত দুই বছর আরেকটি পাখির গবেষণাকাজে নিয়মিত সুন্দরবন যাচ্ছি। এ সময়ের মধ্যে সুন্দরবনের ৩-৪টি খালে সুন্দরী হাঁস নামের এই পাখির উপস্থিতি পেয়েছি মাত্র ৬-৮টি। বাসার সন্ধান মিলেছে ২টি। এ বনে শতাধিক সুন্দরী হাঁস টিকে আছে বলে ধারণা করা হয়, যা গোটা পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশ। কিন্তু এখন এর অবস্থাও ভালো না। আমরা আসলে জানি না পাখিটি কী কারণে এত দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘দ্য লিভিং প্লানেট’ রিপোর্টে বলা হয়েছে, গোটা পৃথিবীর ৭৩ শতাংশ বুনো প্রাণীর সংখ্যা কমেছে। তারা বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমাদের দেশে বন্য প্রাণীর সংখ্যা ১১০০–এর কাছাকাছি। এত প্রজাতির বন্য প্রাণীর জন্য বন আছে আছে মাত্র ২.

৫৭ মিলিয়ন হেক্টর। আমাদের দেশের মোট বুনো প্রাণীর প্রায় ২৪ শতাংশ বিপদগ্রস্ত অবস্থায় আছে। আর ৩১ প্রজাতির প্রাণী চিরতরে এ দেশ থেকে হারিয়ে গেছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল সুন্দরবন দিবস। সম্প্রতি সুন্দবনের বাঘ গণনার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের জাতীয় প্রাণী বাঘের সংখ্যা বেড়ে এখন ১২৫টি হয়েছে। বিপন্ন একটি প্রাণীর সংখ্যা বনে বেড়েছে, যা নিশ্চয় ভালো খবর। এক বাঘ ছাড়া অন্য কোনো বুনো প্রাণীর বেড়ে যাওয়ার খবর আমরা শুনি না। বাঘ গবেষণায় সরকার বেশ ভালো কাজ করেছে। বন রক্ষার পাশাপাশি বাঘের নিরাপদ আবাস তৈরি করা হয়েছে।

আজ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে অর্থায়ন, মানুষ ও ধরিত্রীর উন্নয়ন’। বন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণে সরকারের ভূমিকা বাড়ানোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারলেই নিরাপদ বন হবে সব প্রাণীর।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন য প র ণ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ

জীব ও প্রাণ-বৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে সুন্দরবনকে বিশ্রাম দিতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১ জুন থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে বনজীবী থেকে শুরু করে পর্যটক, কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবন ঘুরেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা যুবদল ও মৎস্যজীবী দলের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী।

গত শুক্রবার তারা ভ্রমণে যান। সুন্দরবনের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়িতে অবস্থানকালে নিজেদের ছবি রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ নিয়ে জানতে চাইলে যুবদলের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব সুন্দরবনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এডিসি পদমর্যাদার একজনের মাধ্যমে বন বিভাগের কাছ থেকে ১০ জনের অনুমতি মেলে। ওই দলে তিনি যুক্ত হওয়ার পর স্থানীয় কিছু কর্মী-সমর্থক তাঁর সঙ্গে ট্রলারে উঠে পড়েন। এ সময় তাদের আর নামিয়ে দেওয়া যায়নি। 

উপসচিব বা তাঁর জন্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে যাওয়া উচিত ছিল কিনা– জানতে চাইলে আমিনুর বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা চলার তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’ কথা বলার জন্য ওই উপসচিবের নাম ও যোগাযোগ নম্বর চাইলে তিনি দেননি।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের জিয়াউর রহমান বলেন, এক উপসচিবের একান্ত সচিব (পিএস) পরিচয়ে ১০ জনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণের অনুমতি চাওয়া হয়। অনেকটা ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র মতো করে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একই সঙ্গে কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তির সুন্দরবনে যাওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের এমন আবদারে তারা অসহায় হয়ে পড়েন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ