ইরানের অর্থমন্ত্রী আবদোলনাসের হেম্মতি বরখাস্ত
Published: 3rd, March 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা এবং ইরানি রিয়ালের ব্যাপক দরপতন রোধে ব্যর্থতার দায়ে অর্থমন্ত্রী আবদোলনাসের হিম্মাতিকে অব্যাহতি দিয়েছে ইরানের পার্লামেন্ট। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থার বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
হিম্মাতি দেশের অর্থনীতির পদে থাকবেন কি না- এ প্রশ্নে রোববার (২ মার্চ) ভোট হয় ইরানের পার্লামেন্টে। তাতে হিম্মাতির বিপক্ষে ভোট দেন ১৮২ জন ও পক্ষে ভোট দেন ৮৯ এমপি। ফলে ভোটের পরেই কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায় হিম্মাতির বিদায়, যিনি ৭ মাস আগে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের গঠিত মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর পদে ছিলেন।
বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা ও কালো তালিকায় থাকার কারণে ইরানি রিয়াল বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রাগুলোর মধ্যে একটি। আবদোলনাসের হিম্মাতি অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর রিয়ালের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়।
গত বছর যখন তিনি মন্ত্রী হন, সে সময় এক ডলারের বিপরীতে পাওয়া যেতো ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০, বর্তমানে ডলারের বিপরীতে রিয়ালের মান নেমে পৌঁছেছে ৯ লাখ ২৭ হাজারে। অর্থাৎ হিম্মাতি মন্ত্রী হওয়ার পর ইরানি রিয়ালের মান কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
মুদ্রার মান ব্যাপকভাবে নেমে যাওয়ায় গত এক বছরে মূল্যস্ফীতিও তীব্র আকার নিয়েছে ইরানে। রোববার পার্লামেন্টে ভোটের সময়ে একাধিক এমপি বলেন, খাবার, ওষুধ এবং আবাসনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য-পরিষেবার মূল্য নিয়ন্ত্রণেও ব্যর্থ হয়েছেন হিম্মাতি।
হিম্মাতি অবশ্য বরাবরই বলে আসছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং ফ্রান্সভিত্তিক সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের কালো তালিকা থেকে মুক্তি না মিললে ইরানের অর্থনীতির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। নিজ মেয়াদে গৃহীত বিভিন্ন পরিকল্পনায় এ বিষয়টিকে অগ্রাধিকারও দিচ্ছিলেন তিনি।
তবে বিরোধী এমপিরা মনে করতেন, হিম্মাতির উচিত ছিল নিষেধাজ্ঞা-কালো তালিকা থেকে মুক্তি নয়, বরং এগুলোকে অকার্যকর করে দিতে পারে- এমন পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হওয়া।
অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে ২০১৭ সাল থেকেই ব্যাপক চাপে আছেন ইরানের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত লোকজন। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক চাপও বাড়ছে তাদের ওপর। এই মুহূর্তে ইরানে ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থি শাসকের সমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দেশটির ভঙ্গুর ও টালমাটাল অর্থনীতি।
সূত্র: রয়টার্স
বিএইচ
.উৎস: SunBD 24
কীওয়ার্ড: মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’
মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।