Samakal:
2025-05-01@05:18:32 GMT

মুখোশের অন্তরালে…

Published: 3rd, March 2025 GMT

মুখোশের অন্তরালে…

সন্ধ্যার আকাশে রমজানের চাঁদ দেখা যায়। বিনপুরের মসজিদ থেকে ঘোষণা আসে– ‘কাল থেকে রোজা শুরু, সবাই সেহরি খেয়ে নিয়েন!’ গ্রামের মানুষ রোজার প্রস্তুতি নেয়। কেউ সেহরির আয়োজন নিয়ে ভাবে, কেউ নামাজে মন দেয়। কিন্তু কিছু ঘরে নীরবতা, এক চাপা শোক ভাসে বাতাসে।
গ্রামের একপাশে বিশাল এক প্রাসাদ। ঝলমলে আলোয় আলোকিত চারপাশ। ভেতরে বসে আছে হাজি করিমউদ্দিন। একসময় ছিল ‘কালা করিম’। চাঁদাবাজি, জমি দখল আর লাঠিয়াল বাহিনীর ভয় দেখিয়ে গড়ে তুলেছিল সাম্রাজ্য। এখন ইসলামী পোশাক পরে, লম্বা দাড়ি রেখেছে, লোক দেখানো দান-খয়রাত করে বেড়ায়। রমজান এলেই বড় বড় ওয়াজ মাহফিল করে, গরিবদের জন্য ইফতারের আয়োজন করে। অথচ এই গরিবদের মধ্যেই আছে সেই রহমত চাচা, যার জমি কেড়ে নিয়ে এখানে প্রাসাদ বানিয়েছে সে।
রহমত চাচার ঘরে ইফতারি বলতে শুধু এক মুঠো মুড়ি আর পানি ছাড়া কিছুই জোটে না। পাশে বসে তার বিধবা মেয়ে আর ছোট্ট নাতি। নাতি প্রশ্ন করে, 
‘দাদু, একটু খেজুর ছিল না?’ রহমত চাচা চুপ করে থাকে। একসময় এই জমিতে ধানের ক্ষেত ছিল, এখন সেখানে করিমউদ্দিনের বাগানবাড়ি। মনে পড়ে, 
কীভাবে তার লোকেরা বন্দুকের ভয় দেখিয়ে জমি লিখিয়ে নিয়েছিল। ভয়ে কিছুই বলতে পারেনি সে।
মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। করিমউদ্দিন সুগন্ধি আতর মেখে ইফতারি করতে বসে। সামনে সাজানো বাহারি খাবারের পসরা– খেজুর, শরবত, বিরিয়ানি, কাবাব আরও কত কী! এক কর্মচারী বিনীত কণ্ঠে বলে, ‘হুজুর, রহমত চাচা খুব কষ্টে আছে, একটু সাহায্য করবেন?’ করিমউদ্দিন বিরক্ত হয়ে উত্তর দেয়, ‘যার কপালে যা আছে, সে তাই পাবে! আমি কারও ভাগ্য বদলাতে পারব না।’
রমজানের চাঁদ তখনও আকাশে জ্বলজ্বল করছে। করিমউদ্দিন আত্মতৃপ্তিতে ইফতারি করে আর রহমত চাচা আকাশের দিকে তাকিয়ে আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি কি শুধু তাদেরই দোয়া শোন, যারা ক্ষমতাবান?’
রমজান সংযমের শিক্ষা দেয়, সেই শিক্ষায় জীবন আলোকিত হয়। কিছু মানুষ শুধু মুখোশ হয়ে থাকে আর মুখোশের অন্তরালে তারা ভয়ংকর। 
সুহৃদ ঢাকা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রহমত চ চ রমজ ন ইফত র

এছাড়াও পড়ুন:

দরুদ কেন পড়ব

নবীজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠের উপকারিতা অনেক। সাধারণত প্রতিদান হিসাবে একবার দরুদ পাঠ করলে দশটি রহমত, দশটি পাপ মাফ এবং বেহেশতে দশ স্তরের মর্যাদার কথা জানা যায়। এ ছাড়াও দরুদ পাঠের আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা সাধারণত খুব একটা আলোচনা করা হয় না।

প্রথমত, দরুদ পড়া আল্লাহর হুকুম। আল্লাহর হুকুম পালন করলে তিনি খুশি হন এবং তার নৈকট্য অর্জন হয়। দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ রাসুলের ওপর ‘সালাত’ পড়েন। ইমানদারগণ, তোমরাও তার নামে দরুদ পড়ো এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৬)

দ্বিতীয়ত, দরুদ পড়া আমাদের ওপর নবীজির (সা.) একটি হক। দরুদ পড়লে তাঁর হক আদায় হয়। ইবনে আব্দুস সালাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, সেই ব্যক্তিকে যথাযথ প্রতিদান দিতে, যিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। যদি আমরা তাতে অপারগ হই, তবে যেন অন্তত দোয়া করি। আল্লাহ জানেন, আমরা রাসুলের (সা.) অনুগ্রহের প্রতিদান দিতে অপারগ। তাই তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন তার প্রতি দরুদ পাঠের। (ইমাম কাসতালানি, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যা, ৩/৩২২)

আরও পড়ুন‘আত-তাহিয়্যাতু’র মর্মবাণী কী১১ এপ্রিল ২০২৫

তৃতীয়ত, নবীজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠের মাধ্যমে তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন তাঁর ওপর রহমত করেন। আর দোয়া একটি ইবাদত। নু’মান ইবনে বাশির (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, ‘দোয়া হলো ইবাদত। তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো, আমি কবুল করব’ (সুরা গাফির: ৬০)।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,৪৬৯)

সুতরাং যখন আমরা বারবার দরুদ পড়ব, তখন প্রকারান্তরে আমরা ইবাদতের মধ্যে থাকব।

চতুর্থত, দরুদ পাঠের সওয়াব আল্লাহর কাছে জমা থাকে। যেমন, আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পড়বে, আল্লাহ তাকে দশবার রহমত করবেন।’ এই ‘রহমত’ দ্বারা উদ্দেশ্য কেবল পার্থিব নয়, বরং পরকালের কঠিন সময়ে আল্লাহর রহমতের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি।

পঞ্চমত, দরুদ পাঠ করা আল্লাহর পক্ষ হতে মুমিনদের জন্যে একটি সম্মান। সাইয়েদ কুতুব (রহ.) বলেছেন, ‘আল্লাহ মুমিনদের দুরুদকে তার দুরুদের সঙ্গে এবং তাদের সালামকে তার সালামের সঙ্গে মিলিয়ে নেন।’ (সুরা আহজাবের ৫৬ নম্বর আয়াতের তাফসির, তাফসিরে ফি জিলালিল কুরআন)

আরও পড়ুননামাজ: দাসের মহিমা০৪ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দরুদ কেন পড়ব