টাঙ্গাইল থেকে পিঠাপিঠি দুই বোন এসেছেন। ছোটজন ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করেন আর বড়জন করেন পা দিয়ে দাপাদাপি। তারা দু’জনই উচ্চশিক্ষিত এবং অত্যন্ত ঘুম সচেতন। ঘুম জীবনের জন্য অপরিহার্য। একদম না ঘুমিয়ে ১৭ দিনের বেশি মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা দুরূহ। ভালো খাবার না হলেও জীবন এতটা কষ্টের হয় না, যতটা হয় ঘুমের অভাবে।
ভালো ঘুমের অভাবে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে–এমন ধারণাকে সাধারণ ভাষায় গভীর ঘুমের প্রতি ইঙ্গিত করা হলেও নাক ডেকে ঘুমানো কখনও ভালো ঘুমের লক্ষণ নয়। ঠিক একইভাবে হা করে ঘুমানো বা ঘুমানো অবস্থায় অধিক নড়াচড়া করা বা পায়ের নড়ন-চড়ন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
ঘুমে পায়ের অস্থিরতায় এক ধরনের অস্বস্তিকর অনুভূতি জেগে উঠে, যা রোগীর মনে পা নড়াচড়া বা পা সরানোর জন্য এক অপ্রতিরোধ্য তাগিদ তৈরি করে। এতে পা চুলকানি, টানাটানি বা হামাগুড়ি দেওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। স্বভাবতই এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। শুয়ে থাকার সময় এটি বেশি হয়।
এ সমস্যা থেকে স্বস্তি পেতে রোগী হাঁটতে, পা প্রসারিত করতে বা পা নাড়াতে থাকে। এ সমস্যায় ভোগে ৫ থেকে ১০% প্রাপ্তবয়স্ক এবং ২ থেকে ৪% শিশু। পুরুষের তুলনায় নারীর মধ্যে বেশি দেখা যায়। এটি যে কোনো বয়সে হলেও গুরুতর লক্ষণগুলো প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
এ রোগের কারণ জানা না গেলেও একে কখনও কখনও বংশগত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। রোগীর মা-বাবা, ভাইবোন বা ছেলেমেয়েদের মধ্যে এ রোগ দেখা দিতে পারে। অ্যালকোহল, পান-সিগারেট, কফি, ঘুমের ওষুধ, বমি বা ঠান্ডার ওষুধ বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে এ রোগের লক্ষণ প্রকট হতে পারে।
রাতে ঘুম ভালো না হলে মাথাব্যথা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, ব্লাডপ্রেশার, ডায়াবেটিস, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, শিশুদের বুদ্ধি কম হওয়াসহ নানাবিধ জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এ রোগের চিকিৎসা জরুরি।
সমস্যা সমাধানে ওষুধের পাশাপাশি ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি পালন করা জরুরি—
lশোবার ঘরে ঘুমের পরিবেশ বজায় রাখা, রুম অন্ধকার রাখা, মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা, টেলিভিশন না দেখা, তাপমাত্রা সহনীয় রাখা।
lরুটিনমাফিক ঘুম প্রয়োজন। অন্ধকারে ৬-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
lসন্ধ্যার পর অ্যালকোহল, ধূমপান এবং কফি গ্রহণ না করা।
lশারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এ রোগের উপসর্গগুলোকে বাড়িয়ে দেয়। তাই ঘুমানোর আগে ব্যায়াম এই রোগ মুক্তিতে সহায়ক হতে পারে।
lপা উদ্দীপিত করার জন্য ম্যাসাজ এবং গরম পানিতে গোসলের পরামর্শ রয়েছে। কম্প্রেশন ডিভাইস ব্যবহার, যা পায়ে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে এ সমস্যা থেকে আরাম দিতে পারে। v
[অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান,
নাক কান গলা বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ]
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
আজ শ্রাবণের ১৬ তারিখ। প্রকৃতির নিয়মে এ মাসে বৃষ্টি বেশি ঝরে। আজও ঢাকার আকাশ মেঘলা। বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও ঝুম বৃষ্টি কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি। তবে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রয়েছে ভূমিধসের ঝুঁকি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অতিভারী বৃষ্টির কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াসহ বাস, রিকশা ও সাধারণ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী ও সমুদ্রবন্দর এলাকায় অবস্থানরত নৌযানগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শনিবারও সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অধিকাংশ এলাকায় এবং অন্যান্য বিভাগে অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
রবিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার ৬৮ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা/ইভা