অনেকের মাঝে বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে যে রোজা রেখে রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করলে রোজা ভেঙে যায়। শুরুতেই বলে রাখা দরকার রোজা অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।
কেন চিনির মাত্রা জানতে হবে
ইনসুলিন এবং ডায়াবেটিস চিকিৎসার কিছু ওষুধ রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। রক্তে বিদ্যমান চিনির মাত্রা নির্দেশ করবে আপনার পরবর্তী করণীয়। আজকাল বাসায় বসে রোগী খুব সহজেই গ্লুকোমিটার দিয়ে এই পরীক্ষা করতে পারেন। রক্তে চিনির মাত্রা কমে গেলে শরীরে ব্যাপক বিপত্তি দেখা দিতে পারে, এমনকি রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। দীর্ঘসময় চিনির মাত্রা কমে গিয়ে স্থায়ী স্নায়ুবৈকল্য হতে পারে। মৃত্যু পর্যন্ত নেমে আসতে পারে।
রক্তে চিনির মাত্রা ৩.
কাদের জন্য প্রয়োজন
রক্তে চিনির মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। ডায়াবেটিসের ধরন এবং চিকিৎসার জন্য সেবন করা ওষুধের মাঝে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। যাদের রোজা রাখলে বিপদের ঝুঁকি বেশি তাদের ক্ষেত্রেও রক্তে চিনির মাত্রা পরখ করা জরুরি। যাদের রোজা রাখলে ঝুঁকির মাত্রা মৃদু তাদের দিনে একবার গ্লুকোজের মাত্রা নির্ণয় করা যথেষ্ট। যাদের ঝুঁকির মাত্রা তীব্র তাদের বারবার এটি নির্ণয় করার দরকার। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুবৈকল্যের কারণে চিনির মাত্রা নিচে নেমে গেলেও অনেক সময় তারা তা ঠাওর করতে পারেন না। সেজন্য এসব রোগীকে মাঝে মধ্যেই চিনির মাত্রা জেনে নেওয়া দরকার। যারা দীর্ঘদিন ধরে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ভুগছেন কিংবা যাদের কিডনি বিকল হয়ে গেছে তারা তীব্র ঝুঁকির ভেতরে অবস্থান করছেন। সুতরাং এ সমস্ত রোগীকে বারবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরখ করা জরুরি।
কখন চিনির মাত্রা জানবেন
সাধারণত সাহ্রির সময়, সকালে, মধ্যাহ্নের পর, ইফতারের আগে, ইফতারের ২ ঘণ্টা পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা জেনে নেওয়া জরুরি। এছাড়া যে কোনো সময় যখন রোগী তার রক্তে চিনির মাত্রা কমে বা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ অনুভব করবেন তখনই তিনি তার মাত্রা জেনে নেবেন।
করণীয়:
রক্তে চিনির মাত্রা বিপদসীমার নিচে নেমে গেলে অবশ্যই তাৎক্ষণিকভাবে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। চিনির মাত্রা যদি অনেক বেড়ে যায় তাহলে প্রয়োজনবোধে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। যারা স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ইনসুলিন নিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে হবে। রোজা রেখে ইনসুলিন এর মাত্রা বাড়ানো বা কমানোতে কোনো ক্ষতি নেই। মনে রাখা দরকার রোজা রেখে দিনের বেলায় ইনসুলিন নেওয়া যায়।
[মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট
সিএমএইচ, বরিশাল]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইনস ল ন পর ক ষ দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?