বিএনপির এক নেতার কাছ থেকে মারধরের হুমকি পেয়ে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির দুই প্রকৌশলী। এ ঘটনায় এক প্রকৌশলীকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার (৩ মার্চ) দুই নির্বাহী প্রকৌশলী লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম মোল্লা সোহাগ হোসেন। তিনি খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক।

আরো পড়ুন:

রিকশাচালককে জুতাপেটা করা সমাজসেবা কর্মকর্তা বরখাস্ত

চার জামায়াত নেতাকে ইউএনওর সামনে ‘মারধরের’ অভিযোগ

কুয়েটের উপাচার্যের কাছে দুই নির্বাহী প্রকৌশলী লিখিত অভিযোগে বলেছেন, কুয়েটের ১৩ নম্বর ভবনের ছাদে ওয়াটার প্রুফিংয়ের কাজের দর প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের প্রকৌশলীরা বাজারদরের সঙ্গে সরকারি নিয়মানুযায়ী ভ্যাট, আইটি ও ১০ শতাংশ প্রফিট (দাপ্তরিকভাবে পূর্বনির্ধারিত) যুক্ত করে দর নির্ধারণ করা হয়। ১০ শতাংশ প্রফিটে আপত্তি করেন বিএনপি নেতা ও ঠিকাদার মোল্লা সোহাগ। তাকে আরো বেশি প্রফিট দিতে হবে বলে মুঠোফোনে প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়াকে বলেন। এ কথা বলার পর প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন, কিন্তু কোনো কথা না শুনে ফোনেই নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া ও নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াতকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং মেরে ফেলার হুমকি দেন মোল্লা সোহাগ। এ অবস্থায় প্রকৌশলী দুইজন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেন।

প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াত বলেন, “গত রবিবার ৩টা বাজার কিছু আগে, খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘তুই চেয়ারের পরে বসে সবাইরে ১০ লাখ, ২০ লাখ টাকার কাজ দিস, আমাকে দিছিস টেন পারসেন্ট লাভে’ বলে আমাকে যাচ্ছেতাই বলে গালিগালাজ করেন। পাঁচ মিনিট পর ফোন দিয়ে একই রকমভাবে আমাকে দেখে ছাড়বে, আমার বাড়ি আক্রমণ করবে, ফুলবাড়ি গেটে গেলে আমাকে দেখে নেবে—এসব কথা বলে হুমকি দেওয়া হয়। গালিগালাজ করা হয়।”

এ ঘটনায় কুয়েট উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয় এ কারণে বিএনপি নেতা মোল্লা সোহাগ মারধর করেছেন উল্লেখ করে প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াত বলেন, “গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বাড়ির পাশের মহেশ্বরপাশা উত্তর বনিকপাড়া আল আকসা মসজিদ থেকে আসরের নামাজ পড়ে ফিরছিলাম। এ সময় দেখি, মোটরসাইকেলে সোহাগ মোল্লাসহ অন্য দুইজন। কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা আমার গায়ে হাত দেয় এবং আমার চশমা নিয়ে যায়।”

প্রকৌশলীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মোল্লা সোহাগ। তবে কোনো ধরনের ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত না বলে দাবি করেন। 

মোল্লা সোহাগ বলেন, “কুয়েট হচ্ছে থানা বিএনপির সেক্রেটারি আব্বাসের নিয়ন্ত্রণে। বাদামতলার ওপাশে থানা বিএনপির সভাপতি কাজী মিজানের নিয়ন্ত্রণে। আপনি যদি প্রমাণ দেখাতে পারেন, কুয়েটে আমার একটা টাকার কাজ আছে, তাহলে যা বলবেন মেনে নেব। এখানে কাজও করে আব্বাস, হুমকি দেয় ওরা, জোর–জুলুম করে ওরা। আমার নেতার অর্ডার আছে, আমি কখনো টেন্ডারে যাই না, কোনো ঠিকাদারিতে যাই না, কোন জায়গাতেই যাই না।”

মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে বিএনপির এই নেতা প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াতের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রধর ব এনপ ব এনপ র স ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ