চলছে পুণ্য ও পবিত্রতার মাস মাহে রমজান। রমজানের পবিত্রতা বিরাজ করছে সর্বত্র। এই আমেজ থেকে বাদ যায়নি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও। শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধভাবে ইফতারের আয়োজন করছেন মলচত্বর, টিএসসি, বটতলাসহ হলের মাঠ ও গার্ডেনগুলোতে।
বিভিন্ন জেলা সংগঠন, হলভিত্তিক নানা সংগঠন, হলের বিভাগকেন্দ্রিক গ্রুপ, বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত হচ্ছে ইফতার মাহফিল।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন, বিজয় ৭১, জিয়াউর রহমান, রোকেয়া হলসহ সাতটি হল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি হলের গেট এবং গেটের ভেতরে পবিত্র মাহে রমজানকে উপলক্ষে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। গেটগুলোতে দেওয়া হয়েছে শুভেচ্ছা বার্তাও।
ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, শরবত, কলা, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ইফতারসামগ্রী থাকছে শিক্ষার্থীদের এ আয়োজনে। কেউ ছবি তুলে পোস্ট করছেন ‘ইফতারি ডান’, কেউ বা লিখছেন হ্যাশট্যাগ দিয়ে ‘মাহে রমাদান’।
শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে মিলেমিশে করছেন এ ইফতার আয়োজন। কারো দায়িত্ব হলপাড়া থেকে ভাজাপোড়া কেনার, কেউ বা দায়িত্ব নিয়েছেন শরবত তৈরির, আবার কারো ওপর পড়েছে ছুরি দিয়ে ফলমূল কেটে প্লেটে সাজানোর।
ঢাবির প্রায় সব বিভাগে ক্লাস থাকায় বাড়িতে যেতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। তাই মা-বাবা-স্বজনকে দূরে রেখে বন্ধু-বান্ধব-সহপাঠী মিলেই যেন পরিবারের অভাব পূরণ করছেন তারা।
বিকালের পরই উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয়ে যায় ইফতার তৈরি ও বাজারের কার্যক্রম। দলবেঁধে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের নির্ধারিত জায়গায় জড়ো হয়ে একসঙ্গে বসে ইফতার প্রস্তুতের ফাঁকে সবাই মিলে ভাববিনিময় করেন। বিভিন্ন হলের টিভিরুম বা অডিটোরিয়ামেও আয়োজিত হচ্ছে ইফতার মাহফিল।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত ১৭ বছরে রমজানকে ঘিরে তারা নানা পরিকল্পনা নিলেও ফ্যাসিবাদীরা ইসলামের যেকোন আয়োজনকে বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে পণ্ড করেছে। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মন খুলেই ইসলামের ঐতিহ্যগত অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারছে। ইফতার মাহফিল উপলক্ষে আলোকসজ্জা হয়েছে। নারীদের হলেও হচ্ছে আযান। হলগুলোতে এবার অন্যরকম পরিবেশ দেখা যাচ্ছে, খুব ভালো লাগছে।
তবে এবারের আয়োজনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের গণইফতার কর্মসূচি এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইফতার বিতরণ কর্মসূচি।
প্রথম রোজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গণইফতার কর্মসূচি পালন করেছে সদ্য গঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাবি শাখা। এ আয়োজনে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন। নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া প্রতিদিনই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হলের সামনে ইফতার বিতরণ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবির। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থীকে ইফতার দিচ্ছেন শিবির নেতাকর্মীরা। এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি বলে দাবি করেছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায় ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছেন রহিম উদ্দিন। তিনি বলেন, “রমজান মাসকে কেন্দ্র করে আমাদের একটা আলাদা লক্ষ্য থাকে। আলহামদুলিল্লাহ, এবার অন্য যে কোন দোকানেরর চেয়ে বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। এবার খাবারের আইটেমও বাড়িয়েছি। এবার দোকানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও আমার বেচাকেনা বেড়েছে।”
এ বিষয়ে ঢাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, “গত বছর বা এর আগে গণইফতার কর্মসূচি, সাজসজ্জার মতো আয়োজনকে মৌলবাদি, জঙ্গিসহ, শিবিরের কার্যক্রম আখ্যা দিয়ে হামলা চালাতো ছাত্রলীগ। গত বছর রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের ইফতার কর্মসূচি করতে হয়েছিল। আজ আমরা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে সুন্দরভাবে রমজানকে উদযাপন করতে পারছি।”
ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের মাজহারুল ইসলাম বলেন, “আমরা দেখলাম রমজানকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবের আমেজ চলছে। যা পূর্বে সম্ভব হয়নি। এ বছর প্রথম আমরা জসীমউদ্দিন হলকে শিক্ষকদের অনুমতি নিয়ে সাজাই। রমজানের একদিন আগেই আমরা যখন হলগুলোকে সাজিয়ে গ্রুপগুলোতে দেই, তখন তা খুব সাড়া ফেলে। এরপর শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উদ্যোগে সেজেছে হলগুলো। বাকি যেসব হল রয়েছে, তারাও নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে সাজাবে “
শুধু ইফতার নয়, সেহরিতে শিক্ষার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করেন। হলের কোন কোন কক্ষে বন্ধুরা মিলে প্রস্তুত করেন সেহরি। আবার দলবদ্ধভাবে হল ক্যান্টিন বা নিকটস্থ মামা হোটেলেও যান কেউ কেউ। রমজানের এ পবিত্রতা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বিরাজ করুক সারা বছর জুড়ে- এমনটাই প্রত্যাশা ঢাবি শিক্ষার্থীদের।
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব শ করছ ন ইসল ম রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি
ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’
২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।
মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।
অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’
জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখমাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।
আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’
রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’
রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।
জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’
২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ
তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী। স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।
কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।