শুরু হয়েছে রমজান মাস। এ মাসে ত্বকের যত্নের ব্যাপারে অনেকে উদাসীন হয়ে যান। এ কারণে কারও কারও ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ আবার কারও ত্বক তেলতেলে ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে। রমজান মাসে রোজা রাখার পাশাপাশি সময় ও সুযোগ বুঝে ত্বকের খেয়ালও রাখতে হবে। বিশেষ করে খাবারদাবার ও রোজকার রূপচর্চার রুটিনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে হবে। রোজায় ত্বকের যত্ন কেমন হবে– এ বিষয়ে জারা’স বিউটি লাউঞ্জের স্বত্বাধিকারী ও রূপ বিশেষজ্ঞ ফারহানা রুমি বলেন, ‘রোজায় ত্বকের যত্নে বিশেষ কিছু দিক খেয়াল রাখতে হবে। এখন বাইরে রোদের প্রখরতা বেড়ে গেছে। গরমের মধ্যে যেহেতু দীর্ঘ সময় পানি পান থেকে বিরত থাকতে হয়, সেহেতু ইফতারের পর থেকে খাদ্য তালিকায় পানি জাতীয় খাবার যেমন– বিভিন্ন ফলের জুস, শরবত বা পানি রাখতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে, যেন শরীরে পানির ঘাটতি কিংবা ভিটামিনের ঘাটতি দেখা না যায়। ফ্রেশ ফ্রুটস ত্বককে ভেতর থেকে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।’
ভিটামিন ‘সি’, ‘ই’ ও ‘এ’ জাতীয় খাবার গ্রহণ: ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে ভিটামিন সি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন ই। ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ত্বককে কোমল করে ভিটামিন এ। এ জন্য খাদ্য তালিকায় পেঁপে, কমলা, চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, ব্রকলি, গাজর-টমেটোর সালাদ, শাকসবজি ইত্যাদি রাখুন। পাশাপাশি ইফতার ও সাহ্রিতে তৈলাক্ত খাবার, ভাজাপোড়া খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
ধাপে ধাপে ত্বকের যত্ন
মুখ পরিষ্কার: রোদের তাপ, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকে ভয়ংকর প্রভাব ফেলে। এ জন্য বাইরে থেকে ফিরেই মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে। তারপর ত্বক অনুযায়ী ভালো মানের ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। তার আগে স্ক্রাবার দিয়ে ২ মিনিট স্ক্রাব করলে ত্বক কোমল থাকবে। যদি মুখে ব্রণ কিংবা ইনফেকশন থাকে, তাহলে স্ক্রাবার ব্যবহার না করা ভালো। এ ক্ষেত্রে বেসন দিয়ে মৃদু ম্যাসাজ করে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
টুইজার: স্ক্রাবিংয়ের পরও যেসব ব্ল্যাক হেডস বা হোয়াইট হেডস থেকে যাবে, তা টুইজার দিয়ে তুলে ফেলতে হবে। তবে আলতোভাবে চাপ দিতে হবে। এটি প্রতিদিন করতে হবে এমন নয়, বরং সপ্তাহে একদিন কিংবা মাসে দু’দিন করা যেতে পারে।
টোনার: মুখের পোরসের সমস্যা দূর করে টোনার। তাই ত্বক পরিষ্কার করার পর টোনার ব্যবহার করুন। টোনার না থাকলে বরফ দিয়ে ম্যাসাজ করুন। বরফ টোনারের কাজ করবে।
সিরাম: টোনার ব্যবহারের পর ত্বকের ধরন অনুযায়ী ভালো মানের সিরাম ব্যবহার করতে হবে। সিরাম ত্বকের বয়সের ছাপ, রিংকেলের সমস্যা দূর করবে। এটি ত্বককে টান টান করতে সাহায্য করে এবং পোরস মিনিমাইজ করে।
ময়েশ্চারাইজার: ফেসওয়াশ ব্যবহারের পর ত্বক অনেকটা শুষ্ক হয়ে যায়। তাই ত্বককে মসৃণ করতে মুখে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার লাগান। এতে ত্বক অনেক কোমল থাকবে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন করতে হবে। যেমন তৈলাক্ত ত্বকের জন্য জেলবেজড ময়েশ্চারাইজার, শুষ্ক ত্বকের জন্য অয়েলবেজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
সানস্ক্রিন: দিনের বেলা বাইরে গেলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। চুলার কাছে যাওয়ার আগেও ব্যবহার করুন। কারণ সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মি, চুলার তাপ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন
রূপবিশেষজ্ঞ ফারহানা রুমি ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিতে অ্যালোভেরা জেলের ওপর ভরসা করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, রোজায় প্রশান্তি পেতে মুখে ও ঘাড়ে সবুজ অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন। কেননা, অ্যালোভেরা একটি প্রশান্তিদায়ক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের কোষগুলোকে নিরাময় ও মেরামত করে। দইয়ের সঙ্গে লেবুর রস ও অ্যালোভেরার রস মেশান। মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। এতে ত্বক উজ্জ্বল হবে। মধুর সঙ্গে অ্যালোভেরার জেল মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বকের জন্য প্যাকটি খুব কার্যকর।
মসুরের ডাল গুঁড়া করে নিন। এর সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই ফেসপ্যাকটি স্ক্রাবার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
একটি পাকা কলার সঙ্গে মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক উজ্জ্বল হবে।
মুলতানি মাটি, চন্দনের গুঁড়া, টকদই ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী। v
মডেল: ইতি; ছবি: মঞ্জু আলম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত বক ব যবহ র কর ন র ব যবহ র র র পর ত বকক ন করত
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।