ছাত্র-তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) স্বাগত জানালেও তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে ভিন্ন অবস্থানে বিএনপি। বিশেষ করে নতুন দলের নেতাদের সেকেন্ড রিপাবলিক ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি নিয়ে বিএনপিতে ‘সন্দেহ’ তৈরি হয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করার লক্ষ্য নিয়ে এ দাবি সামনে আনা হয়েছে।

বিএনপির নেতাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে—এখন পর্যন্ত ছাত্র-তরুণদের যে তৎপরতা, তাতে একটি বিষয় স্পষ্ট যে তাঁদের মূল লক্ষ্য সংবিধান পুনর্লিখন বা আমূল পরিবর্তন। এর জন্য তাঁরা গণপরিষদ নির্বাচনের কথা সামনে আনছেন। এর সূত্র ধরে সেকেন্ড রিপাবলিকের কথা সামনে আনা হচ্ছে; কিন্তু ছাত্র-তরুণেরা সংবিধানের আমূল পরিবর্তনের যে ভাবনা বা লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন, তাতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। এটি রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া কখনোই সম্ভব হবে না।

সংবিধানের মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য না হলে রাজনীতিতে বড় ধরনের বিভক্তি তৈরি করবে বলেও মনে করছেন বিএনপির নেতারা। এতে শেষবিচারে ছাত্র-তরুণদের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলেও ওই নেতারা মনে করেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের রাজনৈতিক দল এনসিপি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। সেদিন দলটির ঘোষণায় বলা হয়, এনসিপির লক্ষ্য—একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে। সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন দলটির অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আবারও বলেছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নতুন প্রজাতন্ত্র করতে হবে। তার জন্য নতুন সংবিধান এবং গণপরিষদ নির্বাচনের প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনও একসঙ্গে হতে পারে।

নতুন দলটির ঘোষণায় সেকেন্ড রিপাবলিক ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবির বিষয়টি আসার পর বিএনপির নেতারা এ দুটি বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।

এর মধ্যে গত রোববার রাজধানীর লেডিস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘নতুন দল এসেছে, আপনারা সাবধান থাকবেন। আমি কিন্তু তাদের স্লোগান বুঝি না। আমি কিন্তু বুঝিনি কাকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে। আমি এখনো বুঝিনি সেকেন্ড রিপাবলিক কী। কী বোঝায়, আপনার বুঝেছেন কি না, জানি না। অর্থাৎ একটা অসিলা ধরে জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে।’

এর আগের দিন শনিবার দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ এক অনুষ্ঠানে সেকেন্ড রিপাবলিক ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবির বিষয়ে কথা বলেন। তিনি এটাকে আরও দীর্ঘায়িত অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র আছে বলে মনে করেন।

বিএনপির নেতারা বলছেন, সংবিধান সংস্কারে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি কেন, সেটি তাঁদের কাছে বোধগম্য নয়। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, সরকার সংবিধান সংস্কার কমিশন করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো এই কমিশনে তাদের পৃথক সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এখন সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে কোন কোন জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলো একমত, কোথায় কোথায় ভিন্নমত, সে বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা হবে। তাহলে নতুন সংবিধানের কথা বলে গণপরিষদ নির্বাচনের প্রশ্ন আসছে কেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যার একটি সংবিধান আছে। সেই সংবিধানে শপথ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। যার প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সরকারের বয়স ছয় মাস পার হয়েছে। তাহলে এত দিন পর গণপরিষদের প্রয়োজন দেখা দিল কেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা বলছেন, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি চরম স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে, তারা জনরোষের মুখে পালিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কোনো নতুন রাষ্ট্র হয়নি, নতুনভাবে দেশ স্বাধীনও হয়নি। যে সময়ে দেশে কোনো সংবিধান রচিত থাকে না, তখন নতুন রাষ্ট্রের জন্য গণপরিষদের প্রয়োজন হয়। গণপরিষদের সদস্যরা সংবিধান প্রণয়ন করেন, যে সংবিধানের ভিত্তিতে পরে সংসদ নির্বাচন হয়। বাংলাদেশে সে রকম কিছু হয়নি; বরং বিগত আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, সংবিধানকে নিজেদের মতো তৈরি করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার বন্দোবস্ত করেছে। এখন সংবিধানকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের যে প্রত্যাশা, সেটির ভিত্তিতে তৈরি করতে হবে। এর জন্য গণপরিষদের প্রয়োজন পড়ে না।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে গণপরিষদ কেন? সংসদ কি সংবিধান সংশোধন করতে পারবে না? আর সেকেন্ড রিপাবলিকের মানে কী, তাহলে তারা কি স্বাধীনতা স্বীকার করে না? তারা হয়তো ভেবেছে, তারা যা বলবে, দেশের মানুষ তা-ই মেনে নেবে। ব্যাপারটা সে রকম নয়। আমরা তাদের এত কথার জবাব দিতে ইচ্ছুক নই। তারা যা খুশি বলুক, করুক, আমরা একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। এটাই আমাদের কথা।’

অবশ্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২২ অক্টোবর ‘সেকেন্ড রিপাবলিকের’ বিষয়টি প্রথম আলোচনায় এনেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। সেদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা ও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে ‘বিপ্লবী ছাত্র-জনতার গণজমায়েত’ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছিল। সেটিরই একটি ছিল জুলাই বিপ্লবের চেতনার আলোকে ২০২৪-পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন করে প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক ঘোষণা।

এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম রিপাবলিক হচ্ছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন। মুক্তিযুদ্ধের পর যে সংবিধান প্রণীত হয়েছে, সেই সংবিধানে কিছু কাঠামোগত ত্রুটির কারণে সরকার ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃত্বপরায়ণ ও ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠে। এই কাঠামো বারবার সংশোধন করা হয়েছে।’

আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে হবে, যাতে নাগরিকেরা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জনগণের রক্ষক হয়। এই পরিবর্তনগুলো করতে হলে সংবিধানে খুব র‌্যাডিকেল পরিবর্তন প্রয়োজন। এটিকেই আমরা “সেকেন্ড রিপাবলিক” বলছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ক ন ড র প বল ক ব এনপ র ন ত র জন ত ক র জন য এনস প প রথম সরক র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ ১৫ অক্টোবরের মধ্যে

জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ৫ অক্টোবর আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ১০ অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারকে দিতে চায় কমিশন। তাদের লক্ষ্য ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সব দলের স্বাক্ষরের মাধ্যমে সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া।

তবে জুলাই সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা কাটেনি। বিএনপি চায় প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন হবে জাতীয় নির্বাচনের পর, সংসদের মাধ্যমে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন এবং এর ভিত্তিতে নির্বাচন চায়। ফলে কমিশনের লক্ষ্য কতটা পূরণ হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।

৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ।

বাস্তবায়নের উপায় ঠিক করতে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তিন দিন আলোচনা হলেও এখনো ঐকমত্য হয়নি। আপাতত আলোচনা মুলতবি রয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, ৫ অক্টোবর আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। কমিশনের পরিকল্পনা হলো, ওই দিনই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ করা। এরপর দলগুলোর সঙ্গে আর আলোচনা করা হবে না। সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মোটাদাগে ছয়টি সুপারিশ পেয়েছিল কমিশন। সেগুলো হলো পূর্ণাঙ্গ সনদ বা তার কিছু অংশ নিয়ে গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে বাস্তবায়ন, গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন, ত্রয়োদশ সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন, সংসদকে সংবিধান সংস্কার সভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে সনদের বিষয়গুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে এই মর্মে মতামত চাওয়া যে অন্তর্বর্তী সরকার এই সনদ বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছিলেন, জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ জারি করা যেতে পারে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সংবিধান আদেশ নিয়ে গণভোট করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন টেকসই করতে হলে গণভোট বা গণপরিষদ সবচেয়ে ভালো বিকল্প।

বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব সমন্বয় করে ১০ অক্টোবরের আগেই বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন। আলী রীয়াজ, সহসভাপতি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, কমিশন সরকারকে বাস্তবায়নের একাধিক বিকল্প পদ্ধতি সুপারিশ করবে। এখন যে কয়টি পদ্ধতি আলোচনায় আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে বিকল্প পদ্ধতির সংখ্যা কমিয়ে আনতে চায়। যদি দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হয়, তাহলে ৫ অক্টোবর দলগুলোর মতামত শোনার পর কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করবে। ৮-৯ অক্টোবর বাস্তবায়নের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দিতে চায়। ১৫ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশনের বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে। এর মধ্যেই কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করতে চায়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব সমন্বয় করে ১০ অক্টোবরের আগেই বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন। সেখানে একাধিক বিকল্প পদ্ধতি সুপারিশ করা হবে। সবচেয়ে ভালো হয় সমাধানের প্রস্তাবটা রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে এলে। কারণ, এখানে কমিশন অনুঘটক মাত্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই রাজনৈতিক মতভিন্নতার মধ্যে শেষ পর্যন্ত ১৫ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ, বাস্তবায়ন পদ্ধতি মনমতো না হলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক দলের জুলাই সনদে সই না করার আশঙ্কা আছে।রাজনৈতিক মতভিন্নতা

সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান পুরোপুরি ভিন্ন। বিএনপি মনে করে, সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের একমাত্র বৈধ পথ বা ফোরাম হচ্ছে জাতীয় সংসদ। আগামী সংসদের মাধ্যমে এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনো উপায়ে সংবিধান সংস্কার করা সম্ভব কি না, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ারও পক্ষে দলটি।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী চায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। এর ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হতে হবে। আগামী সংসদের হাতে বাস্তবায়ন ছেড়ে দেওয়া হলে এসবের বাস্তবায়ন ঝুলে যাবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায় গণপরিষদের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হোক। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ গণপরিষদ এবং নিয়মিত সংসদ হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মনে করে দলটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই রাজনৈতিক মতভিন্নতার মধ্যে শেষ পর্যন্ত ১৫ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ, বাস্তবায়ন পদ্ধতি মনমতো না হলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক দলের জুলাই সনদে সই না করার আশঙ্কা আছে।

১৫ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ৫ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনা করবে। সেখানে কী হয়, সেটা দেখার পর এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা লম্বা সময়ের জন্য মুলতবি রাখার একটি উদ্দেশ্য ছিল যেন দলগুলো এ সময়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঐকমত্যে আসতে পারে। ইতিমধ্যে কিছু দল নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেও। কিন্তু প্রধান দলগুলোর মধ্যে সে অর্থে কার্যকর আলোচনা হয়নি।

১৫ অক্টোবরের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব বলে মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ প্রথম আলোকে বলেন, আরও আগেই এটা করা সম্ভব ছিল। কমিশনের চেষ্টাও ছিল। তবে বিশেষ বিশেষ দলের বিরোধিতার কারণে সেটা হয়নি। যদি আবারও একই কায়দায় দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বাধা প্রয়োগ করা হয় আর কমিশন শক্ত অবস্থান নিতে না পারে, তাহলে হবে না। দলগুলোর মতামত থাকবে। কিন্তু জনগণের আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতার অগ্রগতি এখনো লক্ষণীয় নয়, তবে এ সুযোগ এখনো আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ ১৫ অক্টোবরের মধ্যে