সিলেটে ইফতার মানেই আখনি ও পাতলা খিচুড়ি
Published: 5th, March 2025 GMT
মেহমানদারি কিংবা ঘরোয়া পরিসরে ইফতারে আখনি ও পাতলা খিচুড়ি সিলেটিদের কাছে পছন্দের শীর্ষে থাকে। তাই প্রায় বাড়িতেই ইফতারের আয়োজনে অনেকটা ঐতিহ্যগতভাবেই এখন পাতলা খিচুড়ি ও আখনি করা হয়। দোকানেও এসব পদের বিক্রি বেশি।
পাতলা খিচুড়ি ও আখনিকে স্থানীয় ঐতিহ্য হিসেবে ধরে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন প্রায় ৮৯ বছরের পুরোনো কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও গল্পকার সেলিম আউয়াল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইফতারে নানা পদের পাশাপাশি এ দুটো পদ থাকবেই। এটা সিলেটে ইফতার আয়োজনে একধরনের রেওয়াজ। এ ছাড়া আদা-কাঁচা মরিচ দিয়ে কাঁচা ছোলার প্রচলনও এখানে খুব বেশি।’
একাধিক রোজদার বলেন, এক দশক ধরে নানা উপাদেয় ও বৈচিত্র্যময় ইফতারের সামগ্রী সিলেটের বাজারে বিক্রি করে আসছে খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে অতীতের ঐতিহ্য ধরে রেখে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোও আখনি, ভুনা খিচুড়ি ও পাতলা খিচুড়ি বাজারজাত করছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি পরিবারে অন্যান্য ইফতারির পাশাপাশি এ দুটি পদও থাকে।
গত সোমবার দুপুরে নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, শিবগঞ্জ, মীরাবাজার, উপশহর, শাহি ঈদগাহ, টিলাগড়, টুকেরবাজার ও হুমায়ুন রশীদ চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় দুপুর থেকেই ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। প্রতিটি দোকানে অসংখ্য ইফতারি পদের পাশাপাশি আখনি ও খিচুড়ি সমানতালে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও অবশ্য পাতলা খিচুড়ির পাশাপাশি ভুনা খিচুড়িও বিক্রি হচ্ছে।
দোকানিরা জানিয়েছেন, প্রতি কেজি পাতলা খিচুড়ি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি বক্স ভুনা খিচুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। প্রতি কেজি বিফ আখনি ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা এবং চিকেন আখনি ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোয় দাম এই দামের চেয়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে বেশি।
সিলেট নগরের প্রতিটি দোকানে অসংখ্য ইফতারি পদের পাশাপাশি আখনি সমানতালে বিক্রি হয়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইফত র র
এছাড়াও পড়ুন:
বাসাবাড়িতে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু নিয়োগ বন্ধে আইন করার সুপারিশ
বাসাবাড়ির কাজে তথা গৃহকর্মে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধে কঠোর আইন করার পাশাপাশি কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন।
বাংলাদেশ জাতীয় শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাজ করানো হলে তা শিশুশ্রমের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫-তে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে গৃহকর্মে নিয়োগ করা যাবে না।
শ্রম সংস্কার কমিশন এ প্রসঙ্গে বলেছে, গৃহকর্মে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে। একই সঙ্গে এই আইনের কার্যকর বাস্তবায়নেও গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, সেখানে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৃহশ্রমিকদের বাংলাদেশ শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও মর্যাদা দিতে হবে। এর আগপর্যন্ত নিশ্চিত করতে হবে ‘গৃহকর্মীর কল্যাণ ও সুরক্ষা নীতিমালা–২০১৫’–এর যথাযথ বাস্তবায়ন।
নিয়োগের ক্ষেত্রে আবাসিক, অনাবাসিক, খণ্ডকালীন বা স্থায়ী—সব ধরনের গৃহশ্রমিকদের জন্য কর্মঘণ্টা, বেতন, ছুটি, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুবিধা উল্লেখ করে একটি স্বচ্ছ ও নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্মসংস্থান চুক্তি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। পাশাপাশি নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে শ্রমিকের কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি কার বরাবর, কোন স্থানে এবং কীভাবে দায়ের করবেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাসহ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
গৃহশ্রমিকদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি ও নতুন দক্ষতা অর্জনের জন্য সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মাধ্যমে গৃহকর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া গৃহকর্মীদের সংগঠন বা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রদানেরও সুপারিশ করেছে কমিশন।
পারলারের কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নেওয়ার পরামর্শ
এদিকে বিউটি পারলার খাতের শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে এ খাতের কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা ও তাঁদের সন্তানদের জন্য শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র বা ডে কেয়ার সুবিধা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতের কথা বলেছে কমিশন।
অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ খাতে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের সুপারিশও করেছে কমিশন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মীদের কাজের মান ও ঝুঁকি বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা এবং তাঁদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে পদোন্নতি কাঠামো তৈরি করতে হবে।
দেশের সব বিউটি পারলার শ্রমিকদের পেশাগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা সুরক্ষার জন্য শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়া, অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।
বিউটি পারলারের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করাসহ সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নির্দেশিকা প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিউটি পারলারের কর্মীদের বড় একটি অংশ রাতে বাসায় ফেরে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে ও রাত্রিকালীন বাড়ি ফেরার সময় তাঁদের হয়রানি প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব শ্রমিকের সামাজিক মর্যাদা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে কমিউনিটিভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।