মেহমানদারি কিংবা ঘরোয়া পরিসরে ইফতারে আখনি ও পাতলা খিচুড়ি সিলেটিদের কাছে পছন্দের শীর্ষে থাকে। তাই প্রায় বাড়িতেই ইফতারের আয়োজনে অনেকটা ঐতিহ্যগতভাবেই এখন পাতলা খিচুড়ি ও আখনি করা হয়। দোকানেও এসব পদের বিক্রি বেশি।

পাতলা খিচুড়ি ও আখনিকে স্থানীয় ঐতিহ্য হিসেবে ধরে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন প্রায় ৮৯ বছরের পুরোনো কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও গল্পকার সেলিম আউয়াল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইফতারে নানা পদের পাশাপাশি এ দুটো পদ থাকবেই। এটা সিলেটে ইফতার আয়োজনে একধরনের রেওয়াজ। এ ছাড়া আদা-কাঁচা মরিচ দিয়ে কাঁচা ছোলার প্রচলনও এখানে খুব বেশি।’

একাধিক রোজদার বলেন, এক দশক ধরে নানা উপাদেয় ও বৈচিত্র্যময় ইফতারের সামগ্রী সিলেটের বাজারে বিক্রি করে আসছে খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে অতীতের ঐতিহ্য ধরে রেখে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোও আখনি, ভুনা খিচুড়ি ও পাতলা খিচুড়ি বাজারজাত করছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি পরিবারে অন্যান্য ইফতারির পাশাপাশি এ দুটি পদও থাকে।

গত সোমবার দুপুরে নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, শিবগঞ্জ, মীরাবাজার, উপশহর, শাহি ঈদগাহ, টিলাগড়, টুকেরবাজার ও হুমায়ুন রশীদ চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় দুপুর থেকেই ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। প্রতিটি দোকানে অসংখ্য ইফতারি পদের পাশাপাশি আখনি ও খিচুড়ি সমানতালে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও অবশ্য পাতলা খিচুড়ির পাশাপাশি ভুনা খিচুড়িও বিক্রি হচ্ছে।

দোকানিরা জানিয়েছেন, প্রতি কেজি পাতলা খিচুড়ি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি বক্স ভুনা খিচুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। প্রতি কেজি বিফ আখনি ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা এবং চিকেন আখনি ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোয় দাম এই দামের চেয়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে বেশি।

সিলেট নগরের প্রতিটি দোকানে অসংখ্য ইফতারি পদের পাশাপাশি আখনি সমানতালে বিক্রি হয়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইফত র র

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ