বিল গেটসের যেসব ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়নি
Published: 5th, March 2025 GMT
মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস পাঁচ দশক ধরে আলোচিত প্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব। মাইক্রোসফটকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সফল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার পাশাপাশি বিশ্বের নানা প্রান্তের বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনসংক্রান্ত গবেষণার বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন বিল গেটস। আর তাই দীর্ঘ পেশাগত জীবনে বেশ কয়েকবার প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তিনি। তবে এসব ভবিষ্যদ্বাণীর বেশ কয়েকটি সত্য হয়নি। বিল গেটসের কিছু ব্যর্থ ভবিষ্যদ্বাণী কথা জেনে নেওয়া যাক।
ইন্টারনেট ব্যর্থ হবেনব্বই দশকের শুরুর দিকে বিল গেটস ইন্টারনেটের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে অবমূল্যায়ন করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে তিনি জানিয়েছিলেন, পরবর্তী দশকে ইন্টারনেটের জন্য সামান্য বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। ইন্টারনেট নিয়ে তাঁর সংশয়ের কথা ১৯৯৫ সালে লেখা ‘দ্য রোড অ্যাহেড’ বইতে প্রতিফলিত হয়েছিল। সেখানে তিনি ইন্টারনেটের আসন্ন আধিপত্যকে তেমন স্বীকৃতি দেননি। যদিও এক বছরের মধ্যে তাঁর ভাবনায় পরিবর্তন আসে, যা মাইক্রোসফটকে দ্রুতবর্ধনশীল ইন্টারনেট বিস্তৃতির সঙ্গে তাল মেলাতে সহায়তা করেছিল।
২০১৩ সালের মধ্যে ভয়েস সার্চ কি–বোর্ড অনুসন্ধানকে ছাড়িয়ে যাবে২০০৮ সালে কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় বিল গেটস আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, আজ থেকে পাঁচ বছর পরে কি–বোর্ডের চেয়ে কথার মাধ্যমে অনলাইনে বেশি অনুসন্ধান করা হবে। ২০১৩ সালে তাঁর সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য পরিণত হয়নি। সিরি, অ্যালেক্সা ও গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো ভার্চ্যুয়াল সহকারীর কারণে ভয়েস সার্চ বৃদ্ধি পেলেও অনলাইনে এখনো কি–বোর্ডভিত্তিক অনুসন্ধান বেশি করা হয়।
আরও পড়ুননিজের যে সিদ্ধান্তের জন্য অনুতপ্ত বিল গেটস২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫২০১২ সালের মধ্যে ছাপানো ফোন ডিরেক্টরি হারিয়ে যাবে২০০৭ সালে বিল গেটস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ইয়েলো পেজের মতো ছাপানো ফোন ডিরেক্টরি ২০১২ সালের মধ্যে হারিয়ে যাবে। যাঁদের ৫০ বছরের কম বয়স, তাঁরা আর ছাপানো ফোন ডিরেক্টরি ব্যবহার করবেন না। ছাপানো ডিরেক্টরির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেলেও ২০১২ সালের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়নি। যদিও বর্তমানে বিল গেটসের ভবিষ্যদ্বাণীর মিলে গেছে। ডিজিটাল এই যুগে ছাপানো ফোন ডিরেক্টরির ব্যবহার নেই বললেই চলে।
২০০৭ সালের মধ্যে ট্যাবলেট কম্পিউটার জনপ্রিয় হবে২০০২ সালে বিল গেটস জানিয়েছিলেন, পাঁচ বছরের মধ্যে ট্যাবলেট কম্পিউটার যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় কম্পিউটার হিসেবে পরিচিতি পাবে। কিন্তু জনপ্রিয়তা পেলেও ২০০৭ সাল পর্যন্ত ডেস্কটপ কম্পিউটার ও ল্যাপটপের তুলনায় কম বিক্রি হয়েছে ট্যাবলেট কম্পিউটার।
আরও পড়ুনবিল গেটসের শৈশব কেমন ছিল২২ ডিসেম্বর ২০২৪২০০৬ সালের মধ্যে স্প্যাম ই-মেইল নির্মূল হবে২০০৪ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস অদ্ভুত এক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল, অনাকাঙ্ক্ষিত স্প্যাম ই-মেইল আগামী দুই বছরের মধ্যে হারিয়ে যাবে। তবে তাঁর এই ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ই-মেইল ফিল্টারিং প্রযুক্তির অগ্রগতি সত্ত্বেও এখনো স্প্যাম ই-মেইল একটি বড় সমস্যা।
পাসওয়ার্ড অপ্রচলিত হয়ে যাবে২০০৪ সালে একটি সাইবার নিরাপত্তা সম্মেলনে বিল গেটস জানিয়েছিলেন, পাসওয়ার্ড একসময় অপ্রচলিত হয়ে যাবে, কারণ, ভবিষ্যতে মানুষের কাছে বায়োমেট্রিক ছাপ ও অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থা জনপ্রিয় হবে। কিন্তু ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং, ফেসিয়াল রিকগনিশন ও টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন প্রযুক্তি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা পেলেও পাসওয়ার্ড এখনো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আরও পড়ুনবিল গেটস ম্যাকডোনাল্ডসে বিনা মূল্যে খাওয়ার সুযোগ পান কেন?১৬ জুন ২০২৪কম্পিউটার মাউস বিলুপ্ত হয়ে যাবে২০০৮ সালে কনজ্যুমারস ইলেকট্রনিকস শোতে বক্তব্যের সময় বিল গেটস মাউস নিয়ে একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল, কম্পিউটার মাউস শিগগিরই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মাউসের পরিবর্তে টাচ, ভয়েস ও স্টাইলাসভিত্তিক যন্ত্র জনপ্রিয় হবে। বর্তমানে টাচস্ক্রিন ডিভাইস ও ভয়েসনিয়ন্ত্রিত সিস্টেম জনপ্রিয়তা পেলেও মাউস তার আবেদন ধরে রেখেছে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ল গ টস র কর ছ ল ন জনপ র য বছর র ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
২৫ বছর পর রিয়ালে ব্যালন ডি’অরজয়ী কেউ রইলেন না
ক্লাব বিশ্বকাপ খেলেই চলতি মাসে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে এসি মিলানে যোগ দিয়েছেন লুকা মদরিচ। ক্রোয়াট কিংবদন্তির প্রস্থানে শূন্য হয়েছে রিয়াল–সমর্থকদের হৃদয় থেকে ক্লাবটির ড্রেসিংরুম। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালের ট্রফি কেবিনেটে ২৮টি শিরোপায় ঘাম জমে আছে মদরিচের। তাঁর ব্যক্তিগত ট্রফি কেবিনেটও হয়েছে সমৃদ্ধ। রিয়ালে থাকতেই ২০১৮ সালে জিতেছেন ব্যালন ডি’অর। মদরিচের প্রস্থানের সঙ্গে রিয়ালেও ব্যালন ডি’অরজয়ী আর কেউ রইলেন না।
আরও পড়ুনসেই কলম্বিয়ার কাছে হেরেই কোপার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় আর্জেন্টিনার১ ঘণ্টা আগেচলতি শতাব্দীর প্রথম চতুর্থাংশে, অর্থাৎ গত ২৫ বছরে এমন কিছু কখনো দেখা যায়নি। আরেকটু ভেঙে বলা যায়, গত ২৫ বছরে রিয়ালের স্কোয়াডে এমন অন্তত একজন খেলোয়াড় ছিলেন যিনি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। মদরিচের চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আড়াই দশক পর ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়শূন্য হয়ে পড়েছে মাদ্রিদের ক্লাবটি। গত ২৫ বছরে ৮ জন ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়কে ড্রেসিংরুমে পেয়েছে রিয়াল।
বর্ষসেরার ব্যক্তিগত পুরস্কার ব্যালন ডি’অর দেওয়া শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। সেবার জেতেন ব্ল্যাকপুলের ইংরেজ কিংবদন্তি স্ট্যানলি ম্যাথুজ। পরের তিনটি বছরেই এই ট্রফি উঠেছে রিয়ালের ঘরে। ১৯৫৭ ও ১৯৫৯ সালে জেতেন কিংবদন্তি আলফ্রেদো ডি স্টেফানো এবং তার মাঝখানে ১৯৫৮ সালে জেতেন ফরাসি কিংবদন্তি রেমন্ড কোপা।
অবিশ্বাস্য ব্যাপার, এরপর চার দশকের বেশি সময় রিয়ালে ব্যালন ডি’অর জয়ী কাউকে দেখা যায়নি। ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ ২০০০ সালে ক্লাবটির সভাপতি হওয়ার পর ‘গ্যালাকটিকোস’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে দলে ভেড়ান বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের। সেই পথ ধরেই ২০০০ সালের জুলাইয়ে রিয়ালে নাম লেখান পর্তুগিজ কিংবদন্তি লুইস ফিগো। সে বছরের ১৯ ডিসেম্বর ব্যালন ডি’অর জেতেন ফিগো এবং শুরু হয় রিয়ালের ২৫ বছরের ধারা—যেখানে ড্রেসিংরুমে অন্তত একজন ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়কে দেখা গেছেই।
আরও পড়ুনগার্দিওলার এ কোন চেহারা, ভাবনায় ফেললেন ভবিষ্যৎ নিয়েও১২ ঘণ্টা আগেফিগো যোগ দেওয়ার পরের বছর রিয়ালে নাম লেখান জিনেদিন জিদান। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জেতায় সে বছরই ব্যালন ডি’অর জেতেন ফরাসি কিংবদন্তি। ২০০২ সালে যোগ দেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিও। ১৯৯৭ সালে ব্যালন ডি’অর জেতার পাশাপাশি ২০০২ সালে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতানোয় সে বছরও বর্ষসেরার এ ট্রফি জেতেন রোনালদো।
২০০৪-০৫ মৌসুমে রিয়ালে ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড় ছিলেন চারজন—ফিগো, জিদান, রোনালদো ও মাইকেল ওয়েন। ফিগো ও ওয়েন ২০০৫ সালে রিয়াল ছাড়েন, রোনালদো ২০০৭ সালে। এর মধ্যেই অবশ্য ব্যালন ডি’অরজয়ী আরেকজনকে দলে ভেড়ায় রিয়াল। ২০০৬ সালে উড়িয়ে আনা হয় ইতালির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ফাবিও কানাভারোকে। সে বছরই ব্যালন ডি’অর জেতেন কানাভারো। রোনালদোর প্রস্থানের পর প্রায় আড়াই বছর রিয়ালের স্কোয়াডে একমাত্র ব্যালন ডি’অরজয়ী হিসেবে দিন কেটেছে কানাভারোর।
কানাভারো রিয়াল ছাড়েন ২০০৯ সালে। সে বছরই ক্লাবটিতে যোগ দেন ২০০৭ সালে ব্যালন ডি’অরজয়ী কাকা ও ২০০৮ সালে জয়ী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ২০২২ সালে ব্যালন ডি’অরজয়ী করিম বেনজেমাও রিয়ালে নাম লেখান সে বছর (২০০৯)।
রোনালদো এরপর ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে জেতেন ব্যালন ডি’অর। ২০১৮ সালের মে মাসে রোনালদো রিয়াল ছাড়েন। এরপর মাত্র কয়েক মাস ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়শূন্য ছিল রিয়াল। শূন্যতাটা ঘুচে যায় সে বছরই ৩ ডিসেম্বর মদরিচ ব্যালন ডি’অর জেতায়। এরপর বেনজেমা ব্যালন ডি’অর জিতলেও ২০২৩ সালে তিনিও রিয়াল ছাড়েন। থেকে গিয়েছিলেন শুধু মদরিচ। তাঁর প্রস্থানের মধ্য দিয়ে রিয়ালে এখন ব্যালন ডি’অর জয়ী কেউ রইলেন না।
তবে ইঙ্গিত আছে জয়ের। গত বছর ব্যালন ডি’অর জয়ে রদ্রির সঙ্গে পেরে ওঠেননি রিয়ালের উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। দ্বিতীয় স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রাজিলিয়ান তারকাকে। যদিও চলতি বছর ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে রিয়ালের খেলোয়াড়েরা বেশ পিছিয়ে। কিন্তু নতুন কোচ জাবি আলোনসোর অধীন নিশ্চয়ই এ খরা ঘুচিয়ে ফেলবে রিয়াল—সমর্থকেরা সে আশায় বুক বাঁধতেই পারেন।