চট্টগ্রাম নগরের বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন। পত্রপত্রিকায় খবর পেয়েছেন, চট্টগ্রামে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেঁধে দিয়েছে প্রশাসন। সে আশায় নগরের বহদ্দারহাট বাজারে এসেছেন তিনি। তবে বাজারে এসে দেখলেন ভিন্ন চিত্র। প্রশাসন যে দাম নির্ধারণ করেছে, তার থেকে ৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে খোলা সয়াবিন।

আজ বুধবার সকালে বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে কথা হয় পেশায় চাকরিজীবী মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুকে ও আজ বুধবার সকালে পত্রিকাতেও দেখলাম, খোলা সয়াবিন ১৬০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না। অথচ বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন ১৯২ টাকা চাইছে। তারা তো প্রশাসনকেও মানছে না।’

মামুনের মতো অধিকাংশ ক্রেতাই সয়াবিনের দাম নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন। দেশে গত নভেম্বর মাস থেকে সয়াবিনের বাজারে সংকট। বাজারে খোলা সয়াবিনের দাম বাড়তি আবার বোতলজাত সয়াবিন প্রায় নেই–ই বলা চলে। গত ৯ ডিসেম্বর সরকার খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৫৭ ও বোতলজাত সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।

তবে এ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে না সয়াবিন তেল। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার আমদানিকারক, মিলমালিক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এতে আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত খোলা সয়াবিন পাইকারি পর্যায়ে ১৫৫ এবং খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে এ দর কার্যকর হয়নি বাজারে।

নগরের বহদ্দারহাট ও চকবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা দোকানগুলোতে খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৯০ থেকে ১৯৩ টাকা চাওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে তাঁরা আগে বেশি দরে কিনেছেন। সেই তেল শেষ হলে এরপর নতুন তেল কিনবেন। পাইকারি বাজার থেকে কম দামে কিনতে পারলে কম দামে বিক্রিতে তাঁদের আপত্তি নেই।

পবিত্র রমজানে নিত্যপণ্যের দাম তদারকিতে বাজার পরিদর্শন করেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন। আজ দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ি বাজারে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে প্রপাগান্ডার সয়লাব

১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন তৎকালিন বাকশাল সরকার চারটি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় রেখে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। এতে হাজারো সাংবাদিক রাতারাতি বেকার হয়ে দুঃসহ জীবনে পতিত হন। জনগন সঠিক তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ খবর জানা থেকে বঞ্চিত হয়। গোটা দেশে যেন অন্ধকার নেমে আসে। জবরদস্তিমূলকভাবে তখন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশাজীবীদেরকে  বাকশালে যোগদানে বাধ্য করা হয়। 
অনেক সাংবাদিক সেদিন জীবন-জীবিকার ভয়ে বাকশালের ফরম পূরণ করেন। তাই সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত। আজ দিবস আর কালো নেই। তথ্য প্রবাহের যুগে এখন মন খূলে লেখা যায়, প্রচার করা যায়। বিশেষ করে গেলো বছরের ৫ আগষ্টে ফ্যাসিবাদের পতনের পর গনমাধ্যমে অনেকটা স্বাধীনতা বেড়েছে। গণভবনের তেল তেলা তোষামদি প্রশ্ন এখন আর চলে না। বলা চলে গণমাধ্যম বিগত ১৬ বছরের চাইতে এখন বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। তবে একটা প্রশ্ন রয়েই গেছে তা হলো পেশাদার কিছু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে । এসব মামলা বেশির ভাগই আক্রোশের কারনে হয়েছে। বাদীকে না জানিয়ে একটা মহল মামলায় সাংবাদিকের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। এটা নিন্দনীয়। একজন সাংবাদিক মানুষ খুনের মামলার আসামী এটা মেনে নেয়া  দুস্কর । 
৫ আগষ্টে আগে যারা তোষামদি করতো , সঠিক সংবাদ লিখতে কিংবা প্রচার করতো পারতো না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দোহাই দিয়ে যারা গনমাধ্যমের কন্ঠ রোধ করে রেখেছিল তাদের ভয়ে আতংকে থাকতো। তাদের অনেকে এখন গনমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে মিথ্যা প্রপ্রাগান্ডা চড়াচ্ছে। গনহত্যাার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি একটা দলের প্রতি বিশেষ দরদ দেখিয়ে মিথ্যা তথ্য চড়াচ্ছে। অনেকে তাদের ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। যাচাই বাছাই ছাড়া  মিথ্যা তথ্য শেয়ার করছে। তাদের এখনই থামা দরকার। সত্য প্রকাশ করা একজন সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব । এ পেশাগত দায়িত্বের কেউ অপব্যবহার করলে মুলত তিনিই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। একসময় তার মিথ্যা সংবাদ পরিবেশের কারনে কেউ তার পাশে আর থাকবেন না। তাকে পেশাদার সাংবাদিক নয়, একজন দালাল হিসেবে চিহ্নিত  হয়ে  আস্তুাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। 
পেছনের কথায় ফিরে  আসি, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন সংবাদ পত্রের কালো দিবস পেরিয়ে  ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার অভাবনীয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর সাংবাদিকদের লেখার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত করেন।
জিয়াউর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক সব কালাকানুন শিথিল করে দেশের সব জায়গা থেকে সংবাদপত্র প্রকাশে উৎসাহ প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, প্রকাশিত সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখা সরকারেরই দায়িত্ব বলেই তিনি মনে করতেন। তিনি রাজশাহী থেকে ‘দৈনিক বার্তা’ নামে একটি প্রথম শ্রেণীর পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। এ পত্রিকা ঘিরে সমগ্র উত্তরাঞ্চলে তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে। বহু সাংবাদিকের কর্মসংস্থান হয়।ডিক্লারেশনের শর্ত শিথিল করার কারণে সে সময় ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয়, জেলা এমনকি থানা পর্যায় থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশ হতে থাকে। এসব পত্রিকা টিকিয়ে রাখতে জিয়াউর রহমান সরকারি বিজ্ঞাপন বণ্টননীতিও শিথিল করেন। বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বণ্টন ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেন। একই সঙ্গে সরকারি বিজ্ঞাপনের ৬০ ভাগ ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় এবং বাকি ৪০ ভাগ মফস্বল থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় বণ্টনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে সারা দেশে সংবাদপত্র প্রকাশনায় নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। 
শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই  প্রথম টার্গেট করে সংবাদমাধ্যমকে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও একই পথে হাঁটে দলটি। গত প্রায় ১৫ বছরে আমার দেশ, দিনকাল, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, সিএসবিসহ জনপ্রিয় সংবাদপত্র, বেসরকারি টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে কয়েক হাজার সাংবাদিককে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দিয়েছিল । ৬০ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে। একের পর এক কালাকানুন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। কথায় সাংবাদিক গ্রেফতার তখন নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাংবাদিক পরিচয়ে একদল চাটুকার আওয়ামীলীগের দু:শাসনের মদদ দিয়ে জাতির উপর জুলুমের মাত্রা আরো বাড়িয়েছিল। ছাত্রজনতার বিপ্লবে ফ্যাসিবাদের ভয়াবহ পতনে মানুষ যেমন স্বস্তি ফিরে পেয়েছে তেমনি গণমাধ্যম ফিরেছে অবাধ স্বাধীনতায়। 

লেখক : সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)

সম্পর্কিত নিবন্ধ