ইফতারে যা খাওয়া উচিৎ যা উচিত নয়
Published: 5th, March 2025 GMT
সারাদিন রোজা থাকার কারণে আমাদের শরীরে পুষ্টি ও সঞ্চিত পানির পরিমাণ কমে যায়। ফলে আমরা দুর্বল ও ক্লান্তি বোধ করি। শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ ও সঞ্চিত পানির পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য ইফতারে পুষ্টিকর, মানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ফলের জুসসহ এবং দেশি ফল ও খেজুরসহ বিভিন্ন ধরনের ফল-মূল ইফতারে বেশি করে রাখা উচিত।
কারণ সারাদিনে দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকি পুষ্টিকর, মানসম্মত, স্বাস্থ্যকর খাবার ও বিভিন্ন ধরণের ফল-মূল থেকে । ইফতারি খাবার তালিকায় প্রচুর প্রোটিন সমৃদ্ধ, আঁশ জাতীয়, পুষ্টিকর,মানসম্মত, স্বাস্থ্যকর খাবার রাখা উচিত।
ইফতারের শুরুতে দুই-তিন পিস খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতারি করা ভালো। কারণ খেজুরে আছে প্রচুর ক্যালোরি, ফাইবার, প্রোটিন, ম্যাগ্নেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, এমিনো এসিড, কার্বোহাইড্রেড, সালফার, সুগার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, কপার, আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও ভিটামিন এ ও বি৬ প্রভৃতি উপাদান; যা শরীরের ক্লান্তি দূর করে শক্তি যোগায়, হজম কার্যে সহায়তা করে ও শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে এবং সারাদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূরণ করে থাকে।
লেবুর শরবত পান করতে পারেন কিন্তু লেবু খেলে যাদের এসিডিটি হয় তারা অল্প পরিমাণ লেবুর রস বেশি পরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে শরবত তৈরি করে পান করতে পারেন। এরপরও যদি পেটে এসিডিটি হয়, তাহলে লেবুর শরবত বর্জন করা উচিৎ । লেবুর শর্বতের পরিবর্তে মালটার জুস বা শরবত তৈরি করে পান করতে পারেন অথবা অন্যান্য ফলের জুস তৈরি করে পান করতে পারেন।
যেসব ফল খেলে পেটে গ্যাস তৈরি হতে পারে সেসব ফল পরিমানে কম করে খাবেন, গ্যাসের সমস্যা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, তার পরেও যদি পেটে গ্যাস হয়, তাহলে ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনার পেটে যেসব ফল সাপোর্ট করে, খেলে কোন প্রকার সমস্যা হয় না, সেই ধরনের ফল বেশি রাখুন ইফতারের তালিকায়।
অতিরিক্ত চিনির শরবত খাবেন না। কারণ চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবে কম চিনি দিয়ে টক দইয়ের শরবত খেতে পারেন। ইফতারিতে দই ও লালচিড়া রাখতে পারেন। কলায় থাকে প্রচুর পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম, যা পেটে হজম শক্তিকে বাড়ায় কিন্তু যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তারা সবরি ও বিচি কলা খাবেন না।
কারণ সবরিকলা ও বিচিকলায় কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা আছে, তারা ইসবগুল ও তোকমার শরবত খেতে পারেন। কিন্তু ইসুবগুল, তোকমাদানা খাওয়ার পরে যদি পেটে গুটগুট, পুটপুট করে তাহলে এই শরবত আপনার জন্য উপযোগী নয়। কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে বেলের শরবত ইফতারিতে খেতে পারেন।
যাদের আমাশা ও পাতলা পায়খানাr সমস্যা আছে তাদের বেলের শরবত না খাওয়াই ভালো। কারণ পেটে এ ধরনের সমস্যা থাকলে বেলের শরবত এই ধরনের সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। ইফতারিতে দেশি ফলসহ বিভিন্ন ধরনের ফল রাখতে পারেন, যেমন- বরই, তরমুজ, পেয়ারা, কলা, আনারস, পাকা পেঁপে, মাল্টা, আনার, আপেল, নাশপাতি প্রভৃতি ফল। ইফতারিতে সেদ্ধ ডিম, দুধ জাতীয় খাবার, ফল ও সবজির সালাত রাখুন, যা আপনার শরীরে ডিহাইড্রেশন রোধ করবে এবং পুষ্টির যোগান দিবে।
বেশি ভারী খাবার, রিচফুড, ও মসলাযুক্ত খাবার খেতে যাবেন না। কারণ এ খাবারগুলো আপনাকে আরো দুর্বল করে দিতে পারে। তবে একটু হালকা ভারি জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। যেমন দই-লালচিড়া, হালিম, মাছ-ভাত ইত্যাদি।
আলুরচপ, বেগুনি, পেঁয়াজু , জিলাপি, পাকোড়া, তেলে ভাজা পরোটা জাতীয় কোন খাবার, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার, ডালের বেসনে তৈরি করা কোন খাবার, ডুবো তেলে ভাজাপোড়া জাতীয় কোন খাবার, ছোলা এসব খাবার না খাওয়াই ভালো। এসব খাবার খালি পেটে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে, পেটে জ্বালাপোড়া করতে পারে, অস্বস্তি হতে পারে শরীরে।
তবে এসব খাবার ইফতারের এক-দেড় ঘন্টা পরে অল্প পরিমানে খাওয়া যেতে পারে। কারণ আমাদের সমাজের মানুষের এসব খাবার খেয়ে অভ্যস্ত তাই এসব খাবার না খেলে ভালোও লাগে না। তাই এসব খাবার অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।
স্থান, কাল, পাত্র ও অঞ্চল বেঁধে ইফতারের ধরন বিভিন্ন রকমের হতে পারে । তবে ইফতারিতে আপনি যাই খান না কেন, সে খাবারের তালিকায় যেন পুষ্টিকর, মানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর খাবার থাকে। পুষ্টির কথা বিবেচনা করে পুষ্টিকর খাবার বেশি খাবেন, তাতে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে এবং পরবর্তী রোজা থাকতে শরীরে শক্তি যোগাবে।
ইফতারির পরে কিছুক্ষণ পর পর পরিমাণ মতো পানি পান করবেন। সারাদিন রোজা থেকেছি, পেট খালি, তাই বলে ইফতারিতে একসাথে অনেক পরিমাণ খাবার খাবেন না, একসাথে অনেক পরিমাণ খাবার খেলে, পাকস্থলীতে গ্যাস জমে বা ফুট পয়জনিং হয়ে পেটে জ্বালাপোড়া, অস্বস্তিবোধ, বিরক্তিকর চাপবোধ, ফলস্বরূপ শরীরে জ্বালাপোড়া, অস্বস্তি ও ক্লান্তি দেখা দিতে পারে এবং পেট খারাপ করতে পারে।
তাই একটু কম পরিমাণ খাবার খেলে অর্থাৎ পেটের ২/৩ অংশ পরিমান খাবার গ্রহণ করলে উপরিউক্ত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে ২/১ ঘন্টা পরে ক্ষুধা লাগলে আবার খেয়ে নিবেন। একটা কথা মনে রাখবেন, পেট ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকবে।
- লেখক:
ডা.
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কলামিস্ট।
মোবাইল: ০১৭৪৩ ৮৩ ৪৮ ১৬
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: রমজ ন ন র য়ণগঞ জ ইফত র স ব স থ যকর খ ব র এসব খ ব র প ষ ট কর কর খ ব র প ন করত ইফত র র র সমস য ইফত র ত র শরবত পর ম ণ আপন র ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
অতিরিক্ত গরমে পেট ঠান্ডা রাখবেন যেভাবে
শরীরকে পানিশূন্য হতে দেবেন না
গরমে পেটের পীড়া তৈরির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে পানিশূন্যতা। গ্রীষ্মকালে প্রয়োজনের তুলনায় যেমন বেশি পানি খাওয়া হয়, তেমনি তা দ্রুত ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়েও যায়। যে কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি খাওয়া প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পানির অভাবে খাবারও ঠিকঠাক হজম হয় না। তৈরি হতে পারে কোষ্টকাঠিন্য ও অ্যাসিডিটি।
অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার ও পানীয় খাবেন নাগরমে ঠান্ডা পানি ও খাবারের লোভ সামলানো দায়। বাইরে থেকে এসে আইসক্রিম, ঠান্ডা পানি কিংবা জুস দেখলেই অনেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু এমন সময় ঠান্ডা খাবার ও পানীয় হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুনঠান্ডা-কাশি হলে কি টুথব্রাশ বদলানো জরুরি১০ এপ্রিল ২০২৫বাইরের খাবার বাদ দিনগরমকালে রাস্তার পাশে দেখা যায় শরবত, জুস কিংবা কুলফি মালাইয়ের দোকান। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বানানো এ ধরনের পানীয় বা খাবার থেকে তৈরি হতে পারে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা রকম পেটের পীড়া।
খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম করবেন নাগ্রীষ্মকালে খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম পেট একেবারেই নিতে পারে না। বিশেষ করে কিছুক্ষণ পরপর পানি খাওয়ার ফলে পেট সারা দিন ভরা ভরা লাগে। ধীরে ধীরে তা পরিণত হয় খাবারের অনিয়মে। এই অনিয়ম থেকে হতে পারে পেটের পীড়া।
সূর্যের তীব্রতা থেকে নিজেকে আড়াল রাখুনসারা বছর যাঁরা ছোটখাটো পেটের পীড়ায় ভোগেন, গ্রীষ্মকালে তাঁদের ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে। কারণ, গ্রীষ্মকালে সূর্যের তীব্র আলো শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে। সেই প্রদাহ থেকে পেটে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
আরও পড়ুনগরমে যেসব রঙের পোশাক পরলে আরাম পাবেন২২ এপ্রিল ২০২৫গরমেও সুস্থ থাকার উপায়পর্যাপ্ত পানি খান: গ্রীষ্মকালে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। এই পানির অভাব পূরণ করতে প্রতিদিন তেষ্টা বুঝে পানি খান। পানির পরিবর্তে ডাবের পানি, ঘরে তৈরি জুস, লেবুর শরবত খেতে পারেন। তবে কৃত্রিম মিষ্টি থেকে দূরে থাকাই ভালো।
মৌসুমি ফল খান: আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু থেকে শুরু করে তরমুজ, বেল, বাঙি—বাহারি ফলের মৌসুম গ্রীষ্মকাল। এসব ফল পেট শান্ত রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া ফলের রস পানিশূন্যতা দূর করতেও সহায়ক।
বাসার খাবার খান: গরমে বাইরের খাবার শরীরে বেশ বাজে প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত ঝাল, তেল, মসলা শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই গ্রীষ্মকালে চেষ্টা করুন ঘরে তৈরি খাবার খাওয়ার। এতে পেটের ওপর চাপ কম পড়বে।
ঠান্ডা খেতে চাইলে: ঘরের বাইরে থেকে এসেই ঠান্ডা কিছু খাওয়া কখনোই ভালো নয়। খাইতে চাইলে কিছুটা সময় নিন। তবে ঠান্ডা খাবার বলতে কেবল আইসক্রিম কিংবা ঠান্ডা পানীয়ই নয়, বেছে নিতে পারেন দই, ঘরে তৈরি লাচ্ছি অথবা মালাই।
খাবারে অনিয়ম করবেন না: গ্রীষ্মকালে যতই পেট ভরা লাগুক না কেন, সময়মতো তিন বেলা খাবার খেতে ভুলবেন না। সময়মতো খাবার খেলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায় সহজে।
সূত্র: জেম হসপিটাল ও কাইজেন গ্যাস্ট্রো কেয়ার
আরও পড়ুনগরমে ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস খাওয়া কি ঠিক০৬ এপ্রিল ২০২৫