সারাদিন রোজা থাকার কারণে আমাদের শরীরে পুষ্টি ও সঞ্চিত পানির পরিমাণ কমে যায়। ফলে আমরা দুর্বল ও ক্লান্তি বোধ করি। শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ ও সঞ্চিত পানির পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য ইফতারে পুষ্টিকর, মানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ফলের জুসসহ এবং দেশি ফল ও খেজুরসহ বিভিন্ন ধরনের ফল-মূল ইফতারে বেশি করে রাখা উচিত।

কারণ সারাদিনে দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকি পুষ্টিকর, মানসম্মত, স্বাস্থ্যকর খাবার ও বিভিন্ন ধরণের ফল-মূল থেকে । ইফতারি খাবার তালিকায় প্রচুর প্রোটিন সমৃদ্ধ, আঁশ জাতীয়, পুষ্টিকর,মানসম্মত, স্বাস্থ্যকর খাবার রাখা উচিত।

ইফতারের শুরুতে দুই-তিন পিস খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতারি করা ভালো। কারণ খেজুরে আছে প্রচুর ক্যালোরি, ফাইবার, প্রোটিন, ম্যাগ্নেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, এমিনো এসিড, কার্বোহাইড্রেড, সালফার, সুগার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, কপার, আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও ভিটামিন এ ও বি৬ প্রভৃতি উপাদান; যা শরীরের ক্লান্তি দূর করে শক্তি যোগায়, হজম কার্যে সহায়তা করে ও শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে এবং সারাদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূরণ করে থাকে।

লেবুর শরবত পান করতে পারেন কিন্তু লেবু খেলে যাদের এসিডিটি হয় তারা অল্প পরিমাণ লেবুর রস বেশি পরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে শরবত তৈরি করে পান করতে পারেন। এরপরও যদি পেটে এসিডিটি হয়, তাহলে লেবুর শরবত বর্জন করা উচিৎ । লেবুর শর্বতের পরিবর্তে মালটার জুস বা শরবত তৈরি করে পান করতে পারেন অথবা অন্যান্য ফলের জুস তৈরি করে পান করতে পারেন।

যেসব ফল খেলে পেটে গ্যাস তৈরি হতে পারে সেসব ফল পরিমানে কম করে খাবেন, গ্যাসের সমস্যা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, তার পরেও যদি পেটে গ্যাস হয়, তাহলে ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনার পেটে যেসব ফল সাপোর্ট করে, খেলে কোন প্রকার সমস্যা হয় না, সেই ধরনের ফল বেশি রাখুন ইফতারের তালিকায়।

অতিরিক্ত চিনির শরবত খাবেন না। কারণ চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবে কম চিনি দিয়ে টক দইয়ের শরবত খেতে পারেন। ইফতারিতে দই ও লালচিড়া রাখতে পারেন। কলায় থাকে প্রচুর পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম, যা পেটে হজম শক্তিকে বাড়ায় কিন্তু যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তারা সবরি ও বিচি কলা খাবেন না।

কারণ সবরিকলা ও বিচিকলায় কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা আছে, তারা ইসবগুল ও তোকমার শরবত খেতে পারেন। কিন্তু ইসুবগুল, তোকমাদানা খাওয়ার পরে যদি পেটে গুটগুট, পুটপুট করে তাহলে এই শরবত আপনার জন্য উপযোগী নয়। কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে বেলের শরবত ইফতারিতে খেতে পারেন।

যাদের আমাশা ও পাতলা পায়খানাr সমস্যা আছে তাদের বেলের শরবত না খাওয়াই ভালো। কারণ পেটে এ ধরনের সমস্যা থাকলে বেলের শরবত এই ধরনের সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। ইফতারিতে দেশি ফলসহ বিভিন্ন ধরনের ফল রাখতে পারেন, যেমন- বরই, তরমুজ, পেয়ারা, কলা, আনারস, পাকা পেঁপে, মাল্টা, আনার, আপেল, নাশপাতি প্রভৃতি ফল। ইফতারিতে সেদ্ধ ডিম, দুধ জাতীয় খাবার, ফল ও সবজির সালাত রাখুন, যা আপনার শরীরে ডিহাইড্রেশন রোধ করবে এবং পুষ্টির যোগান দিবে।

বেশি ভারী খাবার, রিচফুড, ও মসলাযুক্ত খাবার খেতে যাবেন না। কারণ এ খাবারগুলো আপনাকে আরো দুর্বল করে দিতে পারে। তবে একটু হালকা ভারি জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। যেমন দই-লালচিড়া, হালিম, মাছ-ভাত ইত্যাদি।

আলুরচপ, বেগুনি, পেঁয়াজু , জিলাপি, পাকোড়া, তেলে ভাজা পরোটা জাতীয় কোন খাবার, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার, ডালের বেসনে তৈরি করা কোন খাবার, ডুবো তেলে ভাজাপোড়া জাতীয় কোন খাবার, ছোলা এসব খাবার না খাওয়াই ভালো। এসব খাবার খালি পেটে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে, পেটে জ্বালাপোড়া করতে পারে, অস্বস্তি হতে পারে শরীরে।

তবে এসব খাবার ইফতারের এক-দেড় ঘন্টা পরে অল্প পরিমানে খাওয়া যেতে পারে। কারণ আমাদের সমাজের মানুষের এসব খাবার খেয়ে অভ্যস্ত তাই এসব খাবার না খেলে ভালোও লাগে না। তাই এসব খাবার অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।

স্থান, কাল, পাত্র ও অঞ্চল বেঁধে ইফতারের ধরন বিভিন্ন রকমের হতে পারে । তবে ইফতারিতে আপনি যাই খান না কেন, সে খাবারের তালিকায় যেন পুষ্টিকর, মানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর খাবার থাকে। পুষ্টির কথা বিবেচনা করে পুষ্টিকর খাবার বেশি খাবেন, তাতে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে এবং পরবর্তী রোজা থাকতে শরীরে শক্তি যোগাবে।

ইফতারির পরে কিছুক্ষণ পর পর পরিমাণ মতো পানি পান করবেন। সারাদিন রোজা থেকেছি, পেট খালি, তাই বলে ইফতারিতে একসাথে অনেক পরিমাণ খাবার খাবেন না, একসাথে অনেক পরিমাণ খাবার খেলে, পাকস্থলীতে গ্যাস জমে বা ফুট পয়জনিং হয়ে পেটে জ্বালাপোড়া, অস্বস্তিবোধ, বিরক্তিকর চাপবোধ, ফলস্বরূপ শরীরে জ্বালাপোড়া, অস্বস্তি ও ক্লান্তি দেখা দিতে পারে এবং পেট খারাপ করতে পারে।

তাই একটু কম পরিমাণ খাবার খেলে অর্থাৎ পেটের ২/৩ অংশ পরিমান খাবার গ্রহণ করলে উপরিউক্ত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে ২/১ ঘন্টা পরে ক্ষুধা লাগলে আবার খেয়ে নিবেন। একটা কথা মনে রাখবেন, পেট ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকবে।

- লেখক:
ডা.

গাজী খায়রুজ্জামান
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কলামিস্ট।
মোবাইল: ০১৭৪৩ ৮৩ ৪৮ ১৬

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: রমজ ন ন র য়ণগঞ জ ইফত র স ব স থ যকর খ ব র এসব খ ব র প ষ ট কর কর খ ব র প ন করত ইফত র র র সমস য ইফত র ত র শরবত পর ম ণ আপন র ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ