নব্বই কিংবা শূন্যের দশকে আমরা যাঁরা মফস্‌সলে বেড়ে উঠেছি, তাঁদের কাছে মজমা খুব পরিচিত বিষয়। স্কুল-কলেজে যাওয়ার পথে কিংবা হাটবাজারে, স্টেশন চত্বরে মজমা বসিয়ে নানা কিছু বিক্রির পথচলতি দৃশ্য মিলেনিয়াম প্রজন্মের স্মৃতির অতিপরিচিত দৃশ্য। হকাররা ক্রেতা আকৃষ্ট করতে বাক্‌চাতুর্যের পরিচয় দিতেন। ক্রেতা টানতে তাঁদের খুব পরিচিত একটি বাক্য ছিল, ‘যদি না হয়, তাহলে আপনার পায়ের জুতা আর আমার পিঠ.

..।’

একজন সমাজসেবা কর্মকর্তা যেভাবে একজন রিকশাচালককে জুতা পেটা করেছেন, সেই ভিডিও দেখার পর কয়েক দশক আগের সেই মজমার কথা মনে আসছিল। জুতা প্রসঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের ‘অয়োময়’ নাটকের একটি দৃশ্যের কথা মনে পড়ে গেল।

জমিদার বা মির্জাবাড়ির সামনে দিয়ে যেতে হলে পায়ের স্যান্ডেল খুলে বগলে নিয়ে বাড়ির রাস্তাটা পার হতে হতো। ভুল করলেই নেমে আসত শাস্তি।

ব্যাপারটা হলো, জমিদারেরা জুতা পরবে, চাষাভূষা ছোটলোকেরা কেন জুতা পরবে? ছোটলোকেরা জুতা পরলে মানি লোকের সম্মান আর থাকে কোথায়! জুতা তাই প্রজাশাসনের একটা বড় হাতিয়ার ছিল। এ থেকেই সম্ভবত ‘জুতাপেটা’ শব্দটির প্রচলন। একজন মানুষকে চূড়ান্ত অবমাননা করা হয় জুতা পেটা করে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) দুপুরের। ঘটনাস্থল রাজশাহীর পবা। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ব্যাটারিচালিত একটি রিকশায় চড়ে ওই সমাজসেবা কর্মকর্তা একটি বাসার সামনে নামছেন। এরপর রিকশাচালককে ভাড়া দিয়ে সামনে এগোতে থাকেন। একপর্যায়ে পেছনে ঘুরে পায়ের জুতা খুলে রিকশাচালককে পেটাতে থাকেন।

প্রথম আলোর খবর থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানা যাচ্ছে, ভিডিওতে দেখা যায়, একটি রিকশায় চড়ে সমাজসেবা কর্মকর্তা তাঁর বাসার সামনে নামেন এবং ৩০ টাকা ভাড়া দেন। তখন ওই রিকশাচালক তাঁকে বলেন, ‘বলে উঠবেনু’ (ভাড়া ঠিক করে)। এ সময় সমাজসেবা কর্মকর্তা  বলেন, ‘বলে উঠবোনি, কিন্তু ভাড়া ৩০ টাকার বেশি কেউ চায় না।’ এ সময় রিকশাচালক কিছু একটা বলেন। তখন পেছনে ঘুরে এসে জাহিদ হাসান বলেন, ‘...আরেকবার বলতেছ কেন? আরেকবার বল।’ এরপরই তিনি পায়ের জুতা খুলে রিকশাচালকের মাথায় ও গালে মারতে থাকেন। হতবিহ্বল রিকশাচালক রিকশার ওপরেই বসে থাকেন।

সমাজসেবা কর্মকর্তা এ সময় জুতা পরে নিয়ে পাশেই রাখা তাঁর প্রাইভেট কারের দিকে যান। গাড়ির পেছন থেকে লাঠি বের করে রিকশাচালককে মারতে থাকেন। কয়েকটি আঘাত রিকশায় লাগে। এ সময় তিনি বলতে থাকেন, ‘আগা, আগা (চলে যা)।’ তখন রিকশাচালক রিকশা নিয়ে দ্রুত চলে যান।

ভ্যানচালক নিজেই যেখানে খেতে পান না, সেখানে কুকুর পোষার বিলাসিতা তাঁর কোথায়? নিজের উপার্জন থেকে কিছু বাঁচিয়ে তিনি পথকুকুরগুলোকে খাবার দিতেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর হাকিমি মেজাজ দেখিয়েছেন ভ্যানচালকের পশ্চাৎদেশে লাঠিপেটা করে।

ওই ঘটনা নিয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তার  ভাষ্য হচ্ছে, নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে রিকশাচালক তাঁর কাছ থেকে লুঙ্গি কেনার জন্য ১০০ টাকা চেয়েছিলেন। সেটা না দেওয়ায় রিকশাচালক তাঁকে ‘লাটসাহেব’ বলে গালি দিয়েছেন। অবশ্য তিনি যে জুতা পেটা করেছেন, সেটা যে অত্যন্ত অন্যায় কাজ, সেটা তিনি স্বীকার করেছেন।

ভাবছিলাম, লাটসাহেব কবে ‘গালি’ হয়ে গেল যে, সেটা বলার কারণে একজন সমাজসেবা কর্মকর্তা রিকশাচালককে জুতা পেটা করতে পারেন? ঔপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশ শাসকদের (বড় লাট, ছোট লাট) লাটসাহেব বলে ডাকতেন সাধারণ মানুষ। আর এদেশীয়দের মধ্যে যাঁরা মেজাজমর্জি, চালচলনে ব্রিটিশ প্রভুদের অনুকরণ করতেন, ব্যঙ্গার্থে তাঁদেরও লাটসাহেব বলে ডাকা হতো। সমাজসেবা কর্মকর্তাকে লাটসাহেব বলায় জুতা পেটা করে তিনি ঠিকই তাঁর লাটসাহেবি মেজাজ দেখিয়েছেন।

লাটসাহেব আমাদের কাছে পরিচিত সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পণ্ডিতমশাই’ গল্পের মাধ্যমেও। পণ্ডিতমশাইয়ের আটজনের পরিবার ও লাটসাহেবের তিনঠেঙে কুকুরের গল্প পড়েছিলাম স্কুলের পাঠ্যবইয়ে। দরিদ্র স্কুলশিক্ষক পণ্ডিতমশাই বেতন পেতেন ২৫ টাকা। আর লাটসাহেবের তিনঠেঙে কুকুরের জন্য ব্যয় হতো মাসে ৭৫ টাকা। তাহলে আট সদস্যের দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবার লাটসাহেবের কুকুরের কয় ঠ্যাঙের সমান, প্রশ্নটি রেখেছিলেন হতভাগ্য পণ্ডিতমশাই।

রিকশাচালককে জুতা পেটা করার পর তার রিকশায় লাঠি দিয়েও আঘাত করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ল টস হ ব কর মকর ত পর চ ত এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন

র‍াস্টফ ব্যান্ডের ভোকাল আহরার মাসুদ মারা গেছেন। সেমাবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ভক্তদের কাছে দীপ নামে পরিচিত ছিলেন আহরার মাসুদ। 

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। 

আরো পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা

রাস্টফ ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে দীপের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, “এমন এক বেদনাদায়ক মুহূর্তে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া বা কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া—প্রায় অসম্ভব। প্রিয় ভোকালিস্ট, বন্ধু ও সহযাত্রী আহারার ‘দীপ’ মাসুদের মৃত্যুসংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা শোকে ভেঙে পড়েছি, এখনো অবিশ্বাসের ভেতর ডুবে আছি। গত রাতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।” 

দীপের শূন্যতা ব্যাখ্যা করে লেখা হয়, “তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্তরের সমবেদনা ও প্রার্থনা। আপনাদের মতো আমরাও এই অপূরণীয় ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি দীপের অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তার চেয়েও বড় কথা—মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে যে অমূল্য ছিলেন, তাকে স্মরণ করতে। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে পরিবার ও কাছের মানুষদের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন এবং তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন। শান্তিতে ঘুমাও, দীপ। তোমার শূন্যতা চিরকাল বেদনাময় হয়ে থাকবে।” 

তরুণদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি ব্যান্ড পাওয়ারসার্চও দীপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, “স্মরণ করছি আহরার মাসুদ দীপকে। কিছুক্ষণ আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এক সত্যিকারের শিল্পীকে। এক্লিপস, কার্ল, ক্যালিপসো ও সবশেষ রাস্টফ ব্যান্ডের অবিস্মরণীয় কণ্ঠ আহরার মাসুদ দীপ আমাদের মাঝে আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” 

পাওয়ারসার্চ আরো লেখেন, “আহরার মাসুদ দীপ শুধু একজন ভোকালিস্টই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তি, সৃজনশীলতা আর আবেগের প্রতীক, যিনি তার চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন; একই সাথে তার অত্যন্ত নমনীয় ব্যবহার, যা সবাইকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীই করে ফেলত! শান্তিতে থাকো ভাই, তুমি সব সময় আমাদের গল্পের অংশ হয়ে থাকবে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোররাতে রণক্ষেত্র: নরসিংদীতে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন