জাইকার অর্থায়নে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কারে দুই বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু আড়াই বছর হতে চললেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ২০ ভাগ। এ অবস্থায় চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন উপজেলার খোলপেটুয়া ও চুনা নদী তীরবর্তী পাউবোর ৫ নম্বর পোল্ডার এলাকার বাসিন্দারা। জলোচ্ছ্বাস ও অতি জোয়ারের হাত থেকে বসতঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ফসল রক্ষায় বর্ষা মৌসুমের আগেই উপকূল রক্ষা বাঁধ মেরামতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ উপলক্ষে গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার পূর্ব দুর্গাবাটি ও দাতিনাখালী উপকূল রক্ষা বাঁধের ওপর পৃথকভাবে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদ, বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে উপকূলীয় এলাকার সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে মন্ত্রীর ভাগনে পরিচয়ে জনৈক সবুজ খান জেভি ডকইয়ার্ড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে শ্যামনগরের উপকূল রক্ষা বাঁধের কাজগুলো বাগিয়ে নেন।একপর্যায়ে কাজ শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ না করার জেরে তাঁর অনুকূলে কার্যাদেশ পাওয়া প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ রেমাল তাণ্ডবে মারাত্মক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হলেও সবুজ খান বা তাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। ৫ নম্বর পোল্ডারের আওতাধীন খোলপেটুয়া ও চুনা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া লোকজন শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, বর্ষা মৌসুমের অতি জোয়ারে পুরো এলাকা নিশ্চিতভাবে প্লাবিত হবে।
পাউবো কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাইকার অর্থায়নে ২০২২ সালে প্রায় ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্যামনগরের ৫ নম্বর পোল্ডারের পাঁচটি পয়েন্টে কাজ শুরু হয়। দুই বছর মেয়াদি ওই প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ ২০২৫ সালের তৃতীয় মাসে এসেও কাজের মাত্র ২০ শতাংশ শেষ হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্প এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ২০২২ সালে সামান্য কিছু বালুভর্তি জিও ব্যাগ খোলপেটুয়া নদীতে ডাম্পিং করা হলেও পাঁচটি প্রকল্পের কোথাও মাটির কাজ হয়নি। মাঝেমধ্যে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের আওতায় পাউবোর পক্ষ থেকে কিছু কাজ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনো কাজ করেনি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মূলত সাতক্ষীরার তৎকালীন জেলা প্রশাসক হুমায়ন কবীরের সঙ্গে সখ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সবুজ খান ৫ নম্বর পোল্ডারের কাজ হাতিয়ে নিয়ে তাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু না হলে ঠিকাদার সবুজ খান ও তৎকালীন জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালতের যাওয়ারও হুমকি দেন তারা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেভি ডকইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী সবুজ খানের মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম জানান, পাথর ও বালুসহ আরও কিছু নির্মাণ সরঞ্জামের অভাবে মাঝে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করেছিল বলে দাবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির। বর্তমানে প্রকল্পের কাজের জন্য সিলেট থেকে পাথর আসতে শুরু করেছে। রোজার পর বাঁধ সংস্কারের কাজ আবারও শুরু করবে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি পাউবো কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করেছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, শেফালী মণ্ডল, আব্দুর রউফ, হাফিজুর রহমান, আবেদুর রহমান, মিঠু, মিলন হোসেন প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রনী খাতুনের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র ক শ য মনগর সব জ খ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বাসে হামলার প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্ষণিকা বাস এবং শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করেন ঢাবির ১৭টি বাস রুটে চলাচলকারী শিক্ষার্থীরা। এতে বাস রুট কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকগণও উপস্থিত ছিলেন।
তরঙ্গ বাস রুটের সভাপতি রাফিন বলেন, “বাস রুট ভিত্তিক চলাচলকারী শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আগে থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা নানা ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। পরিবহন খাতে বাজেট বাড়িয়ে আরো উন্নত করার প্রয়োজন রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ঢাবির বাসে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে হতাহতদের স্মরণে ঢাবিতে দোয়া মাহফিল
তিনি বলেন, “কিশোরগ্যাংগুলোকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে। ক্ষণিকা বাসে হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বাসে চলাচলকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয় প্রশাসন তৎপরতা না দেখালে আমরা উত্তরায় লং মার্চ করব।”
ক্ষণিকা বাস রুটের সভাপতি ফারজানা মুন্নি বলেন, “বাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরই আমি প্রক্টর স্যারকে জানায়। তিনি আমাদের সহযোগিতা করেছেন। ক্ষণিকা বাস কমিটির পক্ষ থেকে আমরা উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেছি। আমাদের জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া এখনো চলমান। আমরা এ ঘটনার সুস্থ বিচারের দাবি জানাচ্ছি।”
ঢাবি শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) ঢাবির ক্ষণিকা বাসে স্কুলের বাচ্চা ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা হামলা করে। গত ৫ আগস্টের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিতর্ক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাবির বাসে হামলা করাটা যৌক্তিক, এটা প্রচার করা হচ্ছে কিছু কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কন্টেন্টের ওপর ভিত্তি করে। এ ঘটনা ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ এ কিশোর গ্যাংগুলোকে পেলে-পুষে বড় করেছে। এদের এখন কোনো অভিভাবক নেই। ফলে এরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। ক্ষণিকা বাসে হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী