স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হোক
Published: 6th, March 2025 GMT
সব দেশে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের রেওয়াজ নেই। ২০০৮ সালের আগে বাংলাদেশেও ছিল না। ২০০৮ সালে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রথম রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনপদ্ধতি চালু করে।
আইন অনুযায়ী দলীয় প্রতীকে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে তাদের নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত হতে হয়। এ জন্য জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নতুন বিধান যুক্ত করা হয়। ওই বিধান অনুযায়ী, কোনো দলকে নিবন্ধন পেতে হলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কার্যালয় এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন (মহানগর) থানায় কার্যালয় থাকতে হবে এবং প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।
সে সময় রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নিবন্ধনের আগে কোনো দলের পক্ষে এই শর্ত মানা কঠিন। তদুপরি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিগত কমিশনগুলো চরম পক্ষপাতিত্বের পরিচয় দিয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। অনেক দল সব শর্ত পূরণ করেও নিবন্ধন পায়নি, যে কারণে বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আবার অনেক দল শর্ত পূরণ না করেও নিবন্ধন পেয়েছে ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতা থাকার কারণে।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধনের জন্য ৯৩টি দল আবেদন করেছিল। গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ ১২টি দলের মাঠপর্যায়ের তথ্য যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন দিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) নামের দুটি ‘ভুঁইফোড়’ দলকে।
এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন দল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে যে কিছু শর্ত শিথিল করেছে, তা ইতিবাচক বলে মনে করি। তারা বলেছে, নিবন্ধন পেতে একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে। অন্তত এক-দশমাংশ জেলায় কার্যকর জেলা কার্যালয় এবং অন্তত ৫ শতাংশ উপজেলায় বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর কার্যালয় থাকতে হবে। দলের সদস্য হিসেবে ন্যূনতম পাঁচ হাজার ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে। এতে নতুন দলের পক্ষে নিবন্ধন পাওয়া সহজ হবে।
কিন্তু নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন যে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের (বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, সাংবাদিক–মানবাধিকারকর্মীর ওপর হামলা, অর্থ পাচার) মামলায় কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগপত্র গ্রহণ করলে দলের সদস্য হওয়ার অযোগ্য হবেন বলে যে সুপারিশ করেছে, তা বিতর্ক বাড়াবে। কোনো ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণিত হলে দলের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারে। কিন্তু অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করলেই তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না, দলের সদস্য হতে পারবেন না—এই শর্ত আইনে টিকবে না। বিচারের আগে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চালু করা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট দলের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে। বাস্তবে সেটা হয়নি। নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দলের সব স্তরের কমিটিতে ২০২০ সালের মধ্যে এক–তৃতীয়াংশ নারী সদস্য রাখার কথা বলা হয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলো সেই শর্ত পূরণ করতে না পারায় সময়সীমা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। দল নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে কেন্দ্র থেকে সর্বস্তরের কমিটি যে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে গঠনের কথা বলা হয়েছিল, সেটাও কেউ মানছে না। দলের আয়–ব্যয়ের হিসাব দাখিলের যে বিধান আছে, সেটা যাচাই–বাছাই করার সুযোগ নেই।
এখানে শর্ত কতটা শিথিল বা কঠোর হলো, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। দল নিবন্ধন আইন যদি সেটা করতে না পারে, তাহলে আরও অনেক আইনের মতো এটাও কাগুজে আইনে পরিণত হতে বাধ্য।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দল র সদস য হ হয় ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আত্মসমর্পণের পর কারাগারে খালেদা জিয়ার ভাগ্নে তুহিন
দুর্নীতি ও কর ফাঁকির পৃথক দুই মামলায় খালেদা জিয়ার ভাগ্নে শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন আদলাতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়েছেন। আদালত তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকার পৃথক দুই বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। মামলার শুরু থেকে পলাতক ছিলেন তিনি। রায় ঘোষণার ১৭ বছর পর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তুহিন।
দুই মামলার মধ্যে প্রথমে কর ফাঁকির মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক কবির উদ্দিন প্রামাণিকের আদালতে তার আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক প্রদীপ কুমার রায়ের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে এ আদালতও তার জামিন নামঞ্জুর করেন।
এসময় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তার চিকিৎসা ও ডিভিশন চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন বলে জানান আদালতকে। এ জন্য ব্যক্তিগত খরচে তাকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করা হয়। আদালত কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন ও চিকিৎসার নির্দেশ দেন।
জানা যায়, কর ফাঁকির অভিযোগ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমশিন (দুদক)।
এর মধ্যে কর ফাঁকির মামলায় ২০০৮ সালে পৃথক দুই ধারায় তিন বছর ও পাঁচ বছর করে মোট আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। দুই ধারার সাজা একত্রে চলবে বিধায় তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজা ভোগ করতে হবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।
এছাড়া, অবৈধ সম্পদের মামলায় ২০০৮ সালে তাকে পৃধক দুই ধারায় তিন বছর এবং ১০ বছর অর্থাৎ ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ঢাকা/এম/ইভা