শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার মোস্তফা আসিফের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মামলার বাদী তাঁর মামলা প্রত্যাহারের জন্য থানায় আবেদন করেন। পরে মামলার বাদীর আবেদন আদালতে জমা দিয়েছে। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত এক হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন।

আরও পড়ুনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্তা, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার১৫ ঘণ্টা আগে

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করেছে শাহবাগ থানা-পুলিশ। হেনস্তার শিকার নারী এ বিষয়ে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেন এবং পরে শাহবাগ থানায় মামলা করেন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ওই ব্যক্তি ছাত্রীটিকে তাঁর পোশাক নিয়ে রাস্তায় হেনস্তা করেন। ছাত্রীটি এ নিয়ে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেন এবং পরে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেন। পরে বিকেলে শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তকে শনাক্ত করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসে। এ সময় ওই ব্যক্তি ছাত্রীটিকে হেনস্তার করার কথা স্বীকার করে। পরে তাঁকে শাহবাগ থানায় পাঠানো হয় এবং গ্রন্থাগারকে এ বিষয়ে জানানো হয়।

হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তির মোস্তফা আসিফের মুক্তির দাবিতে শাহবাগ থানায় অবস্থান নেন একদল ব্যক্তি। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত থেকে তাঁরা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত থানায় ছিলেন।

আরও পড়ুনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্তা, গ্রেপ্তার কর্মচারীর মুক্তির দাবিতে শাহবাগ থানায় একদল ব্যক্তি৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এক বিপুল ব্যয়ের পরও কেন ত্রুটিপূর্ণ স্থাপনা

প্রতি কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে বাংলাদেশের ব্যয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি, বিশ্বেও অন্যতম শীর্ষে। এরপরও মেট্রোরেলের পথে ৪৫টি ত্রুটি ও ঘাটতি থাকাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এসব ত্রুটি ও ঘাটতির কারণে চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৩০-৪০ বার মেট্রোরেল বন্ধ রাখতে হয়েছে।

গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে পথচারীর মৃত্যুর পর আধুনিক এই জনপরিবহনব্যবস্থার নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়েও বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল) অবশ্যই জননিরাপত্তাকে কেন্দ্রে রেখে মেট্রোরেলের ত্রুটি ও ঘাটতিগুলোকে জরুরি উদ্যোগ নিয়ে কাটিয়ে উঠতে হবে। না হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে নাগরিক আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা মেট্রোরেল নিয়েও জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই মতিঝিল-উত্তরা পর্যন্ত পথে যে ৪৫টি ত্রুটি ও ঘাটতি পেয়েছে, তার বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এর মধ্যে সংকেত ও টেলিযোগাযোগ কাজে ১০টি, বৈদ্যুতিক কাজে ১৬ ধরনের, পুরকৌশল কাজে ১০ ধরনের এবং ট্রেন ও এর সঙ্গে যুক্ত ব্যবস্থাপনায় ৯ ধরনের ত্রুটি ও ঘাটতি রয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ১৬টি স্টেশনের অন্তত ৮৯টি জায়গায় বৃষ্টির পানি ঢোকে। স্টেশনের ছাদের ফাঁক এমনভাবে তৈরি করা যে লাইনের পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মেও পানি পড়ে। যাত্রীরাও অভিযোগ করেছেন, বৃষ্টির সময় প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষার সময় ভিজে যেতে হয়। অনেক স্টেশনে ট্রেন নির্দিষ্ট জায়গায় না থেমে কিছুটা আগে-পরে থামছে।

তিন বছরের কম সময় আগে চালু হওয়া মেট্রোরেলের কিছু যন্ত্রাংশে কেন মরিচা পড়বে কিংবা শীতাতপনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কেন মাঝেমধ্যে অকার্যকর থাকবে। স্টেশনের লিফট ও এস্কেলেটরেও কেন অসংগতি থাকবে? চালুর একেবারে শুরু থেকেই টিকিট কাটার যন্ত্র ও স্বয়ংক্রিয় ভাড়া আদায়ের ব্যবস্থা কাঙ্ক্ষিত মানের না হওয়ায় যাত্রীদের নানা সময়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত সমাধান না মেলাটা দুঃখজনক।

ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব ত্রুটি ও ঘাটতির কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই। যেখানে বিয়ারিং প্যাড মাথায় পড়ে নাগরিকের মৃত্যু হতে পারে, সেখানে এই ভাষ্য কতটা আশ্বস্ত করতে পারে? এসব ত্রুটির কারণে হুটহাট মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকা এবং এর ফলে যে জনদুর্ভোগ ও আর্থিক ক্ষতি হয়, সেটাও তো বিবেচনায় নিতে হবে।

মেট্রোরেলে এসব ত্রুটি ও ঘাটতি থাকার কারণ হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজগুলো ঠিকঠাকভাবে করেনি কিংবা চুক্তি অনুযায়ী যতটুকু কাজ করার কথা ছিল, সেটা তারা করেনি। মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় শুধু পাঁচ গুণ বেশি ব্যয়ই হয়নি, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পেছনেও যে ব্যয় করা হয়েছে, সেটাও অস্বাভাবিক। এরপরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে বারবার করে চিঠি দেওয়ার পরও চাহিদামতো সমাধান না পাওয়াটা দুঃখজনক।

মেট্রোরেল নির্মাণে যে বিপুল ব্যয় হয়েছে, তাতে ঋণ পরিশোধ করতে এমনিতেই চাপের মুখে পড়তে হবে। এরপর যদি ত্রুটিপূর্ণ স্থাপনার কারণে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেড়ে যায়, সেটা হবে ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’। ঠিকাদার ও পরামর্শকের দিক থেকে বিয়ারিং প্যাডের ৫ শতাংশ বিচ্যুতি সহনীয় বলে আশ্বস্ত করা হলেও বাস্তবে সেটা ঘটেনি। আমরা মনে করি, শুধু চিঠি দেওয়াটাই সমাধান নয়, ত্রুটিপূর্ণ স্থাপনার জন্য ঠিকাদার ও পরামর্শককে জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন। এত বিপুল ব্যয়ের পরও কেন এমন ত্রুটিপূর্ণ মেট্রোরেল?

সম্পর্কিত নিবন্ধ