ট্রাম্পের নীতিতে বিশ্বব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কোন দিকে
Published: 6th, March 2025 GMT
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে ওঠা আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা তথা বিশ্বব্যবস্থার ভবিষ্যৎকে সংকটে ফেলে দিয়েছেন। তাঁর সাম্প্রতিক ভাষণে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে রাশিয়াকে সমর্থন দিয়েছেন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন ভোটে তাঁর প্রশাসন রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে।
ট্রাম্পের শুল্কসংক্রান্ত হুমকি দীর্ঘদিনের মৈত্রী সম্পর্ক ও বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থার ভবিষ্যৎকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলো মোকাবিলায় সহযোগিতা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এভাবে যুক্তরাষ্ট্র যদি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ও আত্মকেন্দ্রিক নীতিতে চলে যায়, তাহলে বিশ্বশৃঙ্খলায় গুরুতর প্রভাব পড়বে। রাশিয়া এই সুযোগ নিয়ে ইউরোপে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে। এমনকি তারা ইউরোপে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আধিপত্য কায়েম করতে পারে।
এ অবস্থা তৈরি হলে ইউরোপকে তখন আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং নিজেদের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নিজেদেরই নিতে হবে; যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা তখনো গুরুত্বপূর্ণ থাকবে।
একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অনুপস্থিতির সুযোগে চীনও এশিয়ায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করবে। কারণ, বেইজিং ইতিমধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এশিয়ার দেশগুলো এ পরিস্থিতি নিয়ে নিশ্চিতভাবেই সতর্ক রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরস্পর যুক্ত। তাই একটি দেশের পরিবর্তন অন্য দেশগুলোকেও প্রভাবিত করে। রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার শক্তির ভারসাম্য, আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী নীতিমালা এবং যৌথভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা নির্ভর করে।
একটি বিশ্বব্যবস্থা ধাপে ধাপে পরিবর্তিত হতে পারে। তাতে সামগ্রিক অবস্থায় বড় ধাক্কা লাগে না। তবে নেতৃত্বদানকারী শক্তির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যদি আচমকা বড় পরিবর্তন আসে, তাহলে পুরো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়তে পারে।
এক রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেক রাষ্ট্রের সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। তাই রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের মধ্যকার শৃঙ্খলাব্যবস্থাকে আসলে একটা আপেক্ষিক ব্যাপার বলা যেতে পারে।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার আগে এই শৃঙ্খলা সাধারণত বলপ্রয়োগ ও যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতো এবং এটি আঞ্চলিক সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল (যেমন চীন ও রোমান সাম্রাজ্য)।
শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে যুদ্ধ ও শান্তির বিষয়টি মূলত নির্ভর করত ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর; নীতি বা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নয়।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ফরাসি বিপ্লব রাজতান্ত্রিক নিয়মকানুন ও ইউরোপের শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখার প্রচলিত বিধিনিষেধগুলো ভেঙে দেয়। নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়; বিশেষ করে মস্কো থেকে তাঁর পিছু হটার পর এই ব্যর্থতার শুরু হয়েছিল। তবে তাঁর সেনাবাহিনী ইউরোপের অনেক প্রচলিত ভূখণ্ডের সীমান্ত পরিবর্তন করেছিল এবং নতুন নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছিল।উদাহরণস্বরূপ, রোমান ও পারস্য (বর্তমান ইরান অঞ্চলের) সাম্রাজ্যে পাশাপাশি সীমানা থাকায় তাদের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধ হতো। কিন্তু রোমান সাম্রাজ্য চীন এবং মেসোআমেরিকার সাম্রাজ্যগুলো ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকায় তারা সরাসরি সংঘাতে জড়ায়নি।
তখনকার দিনে শক্তিপ্রয়োগ (হার্ড পাওয়ার) ও প্রভাব (সফট পাওয়ার) উভয়ের ওপর নির্ভর করে সাম্রাজ্যগুলো টিকে থাকত। চীনের ঐক্য বজায় থাকত সাধারণ নীতিমালা, উন্নত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং পারস্পরিক অর্থনৈতিক স্বার্থের মাধ্যমে। রোম সাম্রাজ্যেও বিশেষ করে প্রজাতন্ত্রের আমলে একই অবস্থা ছিল।
রোম সাম্রাজ্যের পতনের পর ইউরোপে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (পোপতন্ত্র) ও বংশগত রাজতন্ত্রের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠে। তখন অঞ্চলগুলোর শাসন পরিবর্তিত হতো মূলত রাজবংশীয় বিয়ে ও পারিবারিক জোটের মাধ্যমে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ইচ্ছার তোয়াক্কা করা হতো না।
যুদ্ধগুলোর পেছনে সাধারণত বংশগত স্বার্থ কাজ করত। তবে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ধর্মীয় উত্তেজনা ও রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের কারণে নতুন ধরনের যুদ্ধ শুরু হয়। প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলন, রোমান ক্যাথলিক চার্চের অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার প্রতিযোগিতা এসব সংঘাতকে আরও তীব্র করে তোলে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ফরাসি বিপ্লব রাজতান্ত্রিক নিয়মকানুন ও ইউরোপের শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখার প্রচলিত বিধিনিষেধগুলো ভেঙে দেয়। নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়; বিশেষ করে মস্কো থেকে তাঁর পিছু হটার পর এই ব্যর্থতার শুরু হয়েছিল। তবে তাঁর সেনাবাহিনী ইউরোপের অনেক প্রচলিত ভূখণ্ডের সীমান্ত পরিবর্তন করেছিল এবং নতুন নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছিল।
এর ফলে ১৮১৫ সালের ভিয়েনা কংগ্রেসে প্রথমবারের মতো সচেতনভাবে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ভিয়েনা কংগ্রেস-পরবর্তী ইউরোপে একটি ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল। এটিকে ‘কনসার্ট অব ইউরোপ’ বলা হয়। তবে এই শৃঙ্খলা বেশ কিছু সময় ধরে বিভিন্ন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ১৮৪৮ সালে ইউরোপজুড়ে যে জাতীয়তাবাদী বিপ্লব হয়, সেটি এ ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দেয়। এরপর ওট ফন বিসমার্ক জার্মানিকে একত্র করতে একাধিক যুদ্ধ করেন এবং এর ফলে দেশটি ইউরোপের কেন্দ্রীয় শক্তি হয়ে ওঠে। ১৮৭৮ সালের বার্লিন কংগ্রেসে এই শক্তির প্রতিফলন দেখা যায়।
বিসমার্ক রাশিয়ার সঙ্গে মিলে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ১৮৯০ সালে জার্মান সম্রাট তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিলে এই স্থিতিশীলতা ভেঙে যায়।
এরপর শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধ ১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়। এরপর বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে ‘লিগ অব নেশনস’ গঠিত হয়। তবে লিগ অব নেশনস একপর্যায়ে ব্যর্থ হয়। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথ তৈরি হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ এবং ব্রেটন উডস চুক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মতো প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়।
এসব উদ্যোগ বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের অংশ ছিল। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র তখন সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ এবং এসব প্রতিষ্ঠান তাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল, তাই ১৯৪৫ সালের পরের সময়কে ‘আমেরিকান শতক’ বলা হয়।
এরপর ১৯৯১ সালে স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হলে যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হয়ে ওঠে। এরপর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তির মতো বড় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কোনোটি গঠিত হয়, কোনোটিকে আগের চেয়ে শক্তিশালী করা হয়।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগেও কিছু বিশ্লেষক মনে করতেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থা শেষের পথে। একবিংশ শতাব্দীতে বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যে পরিবর্তন এসেছে। এটিকে অনেকেই এশিয়ার উত্থান (বা সঠিকভাবে বললে, পুনরুদ্ধার) হিসেবে বর্ণনা করেন।
১৮০০ সালের দিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে এশিয়ার অংশ ছিল সবচেয়ে বড়। কিন্তু পাশ্চাত্যে শিল্পবিপ্লবের ফলে এশিয়া পিছিয়ে পড়ে। তা ছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক ও যোগাযোগপ্রযুক্তির উন্নতির ফলে তারা নতুন উপনিবেশবাদ চালু করে। এটি অন্যান্য অঞ্চলের মতো এশিয়ারও ক্ষতি করে।
এখন এশিয়া আবার বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হয়ে উঠছে। তবে এশিয়ার অগ্রগতির জন্য ইউরোপকে মূল্য দিতে হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে নয়।
আসলে যুক্তরাষ্ট্র এখনো বৈশ্বিক অর্থনীতির এক-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে, যা ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক ব্যবধান কমিয়ে আনলেও এখনো সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করতে পারেনি—না অর্থনৈতিকভাবে, না সামরিকভাবে, না কূটনৈতিক মিত্রতার দিক থেকে।
আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা যেভাবে ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে, তাতে চীনের উত্থানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও সমানভাবে দায়ী। এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কি যুক্তরাষ্ট্রের পতনের একেবারে নতুন এক যুগে প্রবেশ করছি, নাকি ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে ‘আমেরিকান সেঞ্চুরি’র প্রতিষ্ঠান (যেমন ন্যাটো, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ) ও মিত্রজোটগুলোর ওপর আক্রমণ শুধুই একটি চক্রাকার পতন (ইতিহাসে আমেরিকার শক্তি কখনো কমেছে, কখনো বেড়েছে। ট্রাম্পের নীতিও হয়তো এমনই একটি অস্থায়ী পতন, স্থায়ী পতন নয়) হিসেবে প্রমাণিত হবে?
এর সঠিক উত্তর হয়তো ২০২৯ সালের আগে জানা যাবে না।
জোসেফ এস নাই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী প্রতিরক্ষাসচিব
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ শত ব দ যবস থ র প রচল ত ব যবস থ ল র ওপর ইউর প র র জন ত কর ছ ল আম র ক অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
টাইব্রেকারে দুটি শট আটকে ফারইস্টকে বিদায় করে এআইইউবিকে ফাইনালে তুললেন রাজীব
ইস্পাহানি-প্রথম আলো তৃতীয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের ফাইনালে উঠেছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি)।
জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ প্রথম সেমিফাইনালে টুর্নামেন্টের গত আসরের রানার্সআপ এআইইউবি জিতেছে রোমাঞ্চকর টাইব্রেকারে। টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের রানার্সআপ ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিপক্ষে নির্ধারিত ৭০ মিনিটে ম্যাচটি ছিল ২-২ সমতায়। এরপর টাইব্রেকারে এআইইউবি জেতে ৬-৫ গোলে।
টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপার চূড়ান্ত লড়াইয়ের টিকিট পেয়েছে এআইইউবি। নির্ধারিত সময়ে দুবার পিছিয়ে ম্যাচে ফিরেছে তারা, টাইব্রেকারেও একপর্যায়ে পিছিয়ে ছিল দলটি। টাইব্রেকারে দুটি শট আটকে এআইইউবিকে ফাইনালে তুলে নেন গত মৌসুমে দেশের শীর্ষ লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে খেলা গোলকিপার রাজীব ইসলাম।
জাতীয় স্টেডিয়ামে গোটা ম্যাচজুড়েই ছিল টান টান উত্তেজনা। টাইব্রেকারে প্রথম চারটি শটে দুই দলই গোল করে। এআইইউবির আজিজুল হক অনন্তর নেওয়া পঞ্চম শট পোস্টে লাগে। এরপর এআইইউবির গোলকিপার রাজীব প্রতিপক্ষ গোলকিপার আরমান হোসেনের শট আটকে দলকে ম্যাচে রাখেন। তখন স্কোর দাঁড়ায় ৪-৪।
এরপর সাডেন ডেথের প্রথম শটে দুই দলই গোল করে, ৫-৫। কিন্তু সাডেন ডেথে ষষ্ঠ শটে এআইইউবি গোল করলেও ফারইস্টের সালমান গোল করতে পারেননি। তাঁর শট আটকে দেন এআইইউবির গোলকিপার রাজীব। আরমান ও সালমান দুই ভাই।
দুজনই টাইব্রেকারে শট মিস করেন। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৬-৫ গোলে জেতে এআইইউবি।
ফারইস্টের দুর্ভাগ্য, দুবার এগিয়ে গিয়েও এবং টাইব্রেকারে লিড নিয়েও তারা জিততে পারেনি। পারেনি এআইইউবির গোলকিপার রাজীব ইসলামের দৃঢ়তায়। জয়ের পর গোলকিপার রাজীবকে নিয়ে এআইইউবি মেতে ওঠে উল্লাসে। ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন এআইইউবির জয়ের নায়ক রাজীব।
মূল ম্যাচে এআইইউবির প্রাধান্য ছিল। তবে নির্ধারিত ৭০ মিনিটে তারা জিততে পারেনি। ৩০ মিনিটে গোল করে ক্ষয়িষ্ণু শক্তির দল নিয়ে মাঠে নামা ফারইস্টকে এগিয়ে দেন ব্রাদার্সের ফরোয়ার্ড মেরাজ প্রধান।
বাঁ দিক থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে প্লেসিং করেন তিনি। ৪৪ মিনিটে সেই গোল শোধ করেন এআইইউবির আরিফুল হক। ৫৪ মিনিটে আবার গোল করে ফারইস্টকে এগিয়ে নেন মেরাজ। তবে দ্রুতই সেই গোল শোধ হয়ে যায়। ৫৯ মিনিটে গোলাম রাব্বি গোল করে ম্যাচে ২-২ সমতা ফেরান। এরপর ম্যাচ গড়ায় সরাসরি টাইব্রেকারে, যেখানে শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করে এআইইউবি।
ফারইস্ট আজ তাদের কয়েকজন সেরা খেলোয়াড়কে পায়নি। বাংলাদেশ লিগে খেলা থাকায় খেলতে পারেননি আবাহনীর ফরোয়ার্ড আসাদুল মোল্লা, একই দলের গোলকিপার পাপ্পু হোসেন, পুলিশের মিডফিল্ডার এমএস বাবলু, ফকিরেরপুলের ফরোয়ার্ড স্বাধীন হোসেন, প্রথম বিভাগের ডিফেন্ডার লিহান উদ্দিন এবং অধিনায়ক আল আমিন ও সেনাবাহিনীর গোলকিপার আশরাফুল।
ফারইস্ট পেয়েছে প্রিমিয়ার লিগে খেলা শুধু মেরাজকে। সেই মেরাজ দুই গোল করেও দলকে জেতাতে পারেননি।
অন্যদিকে প্রিমিয়ার লিগের আরামবাগের মিডফিল্ডার ওমর ফারুক মিঠু ও আক্কাস আলী, মোহামেডানের স্ট্রাইকার সৌরভ দেওয়ান, ডিফেন্ডার আজিজুল হক ও জাহিদ হাসানকে পেয়েছে এআইইউবি। আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় খেলতে পারেননি রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডার আলফাজ মিয়া।
ম্যাচসেরার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান ও জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, টুর্নামেন্টের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ইমতিয়াজ সুলতান জনি, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. মো. মঞ্জুর ই খোদা তরফদার, ইস্পাহানি টি লিমিটেডের বিপণন মহাব্যবস্থাপক ওমর হান্নান, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য, জাহিদ হাসান এমিলি ও মামুনুল ইসলাম।
গত বছর ফাইনালে এআইইউবি হেরে যায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কাছে। এবার তাদের ফাইনালের প্রতিপক্ষ হবে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ও চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালের জয়ী দল। ম্যাচটি আজই জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।