বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই নারীরা আজও নানা ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শারীরিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সমাজে একদিকে উন্নয়ন ও পরিবর্তন ঘটলেও নারীর প্রতি সহিংসতা, বৈষম্য ও শোষণ অব্যাহত রয়েছে। কর্মক্ষেত্র, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনপরিসরে নারীরা প্রায়ই বৈষম্য ও নির্যাতনের সম্মুখীন হন। বিশেষ করে নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহ এবং পারিবারিক নির্যাতন আজও আমাদের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত।

সমাজের একটি বড় অংশ নারীকে দুর্বল হিসেবে দেখে এবং তাঁর অধিকার ও মর্যাদাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে না। এই সমস্যা শুধু শহরেই নয়, গ্রামীণ এলাকাতেও বিদ্যমান, যেখানে নারীরা অনেক সময় মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।

২০২৫ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন।’  স্লোগানটি সমাজে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীদের প্রতি ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে প্রতিফলিত করে।

আমাদের দেশে নারী দিবসকে উপলক্ষ করে বিভিন্ন সভা, সেমিনার, র‍্যালি, পোস্টার প্রচারণা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন করা হয়, যা সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হলেও এগুলো একমাত্র সমাধান নয়। নারীর প্রকৃত নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত স্তরে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে নারীদের জীবনমান উন্নয়নে কোনো বাস্তব অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হবে না।

দেশে নারী নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র

বাংলাদেশের জনসংখ্যা ও আবাসন শুমারি ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ৯৯। অর্থাৎ দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি অংশ নারীদের। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক, এই নারীরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি নির্যাতনের প্রধান ধরনের মধ্যে ধর্ষণ সবার শীর্ষে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই সময়কালে দেশে মোট ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৭ হাজার ৪৭৯টি, যার মানে প্রতিবছর গড়ে ৫ হাজারেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। একই সময়ে দেশে ৫৯ হাজার ৯৬০টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যা শুধু নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রাকে প্রকাশ করে না, বরং সামাজিক ও আইনি ব্যবস্থার অক্ষমতা এবং অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরে। ২০২৪ সালে যৌতুকের দাবিতে ৩৬ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন, যা সমাজ ও দেশের জন্য অত্যন্ত আশঙ্কার বিষয়।

দেশে কন্যাশিশুরাও নিরাপদ নয়। ২০২৪ সালে ২২৪টি কন্যাশিশু ধর্ষণের ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, যদিও অনেকেই মনে করেন, এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ, অধিকাংশ সময় শিশুরা এ ধরনের ঘটনাগুলো বর্ণনা করতে ভয় পায়। একই বছরে ধর্ষণের পর ৮১টি কন্যাশিশুর হত্যার ঘটনা ঘটে এবং ১৩৩টি কন্যাশিশু ধর্ষণের পর আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশের নারীদের বর্তমান পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরছে। তাঁরা পারিবারিক নির্যাতনের পাশাপাশি বাইরে বের হলেও ধর্ষণ ও সহিংসতার মতো ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের কারণগুলো

বাংলাদেশে নারী নির্যাতন এবং বিশেষ করে ধর্ষণের মতো অপরাধ দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি না হওয়াকে দায়ী করা হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষকেরা আইনের দুর্বলতার কারণে পার পেয়ে যায়, যা তাদের আরও অপরাধে জড়াতে উৎসাহিত করে।

নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থা ‘নারীপক্ষ’-এর গবেষণা অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪ হাজার ৩৭২টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৫টি মামলায় দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এই পরিসংখ্যানই স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে ধর্ষণের বিচারব্যবস্থা কতটা দুর্বল এবং অপরাধীরা কীভাবে পার পেয়ে যায়।

বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি ধর্ষকদের দৌরাত্ম্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বিচারহীনতার কারণে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন।

অনেক নারী অধিকারকর্মী ধর্ষণের বিচারহীনতার জন্য বিদ্যমান বিচারব্যবস্থা এবং আইনগত দুর্বলতাকে দায়ী করেন। এখনো বাংলাদেশে ধর্ষণের সংজ্ঞা ১৯৬২ সালের আইনের ভিত্তিতে নির্ধারিত, যেখানে ধর্ষণের অভিযোগ আনলে ভুক্তভোগীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে অধিকাংশ নারী মামলায় হেনস্তার শিকার হন এবং তাঁরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।

বিভিন্ন কারণে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা নারীদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করে। আদালতে বারবার কঠোর জেরা, সামাজিক লজ্জা এবং ধর্ষকের দ্বারা হুমকি—এসবের সম্মুখীন হয়ে অনেক নারী বিচারপ্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে বাধ্য হন। অনেক মানবাধিকার সংগঠন এ ধরনের আদালতের জেরাকে ‘দ্বিতীয় ধর্ষণ’ বলে অভিহিত করে।

নারীরা ধর্ষণের পর মামলা করতে গেলে তাঁদের হুমকি ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় যে ধর্ষণের শিকার হওয়া ব্যক্তির পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়, এমনকি হত্যার মতো নৃশংস ঘটনাও ঘটে থাকে।

ফেনীর নুসরাত জাহানের ঘটনা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি তাঁর মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তাঁকে হয়রানি করে। পরে সেই শিক্ষক তাঁর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নুসরাতকে হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে হত্যা করে। এ ঘটনা পুরো দেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল এবং নারী নির্যাতনের ভয়াবহ বাস্তবতা আবারও সামনে নিয়ে আসে।

বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনামলে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে শুধু জনগণের ভোটাধিকারই কেড়ে নেওয়া হয়নি, বরং নারীদের নিরাপত্তাহীনতাও চরমে পৌঁছেছে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ক্ষমতার কাছের ব্যক্তিরাই এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনের সময় নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক গৃহবধূ নৌকা মার্কায় ভোট না দেওয়ার কারণে দলীয় ক্যাডারদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন। এই ঘটনা নারীদের রাজনৈতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাহীনতার চিত্র স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

নারী নিরাপত্তা ও সমতা নিশ্চিতে জরুরি পদক্ষেপগুলো

বাংলাদেশের নারীদের সঠিকভাবে সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে তাঁরা দেশ গঠনে অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হবেন। এর উদাহরণ হিসেবে সাম্প্রতিক জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের সাহসিকতাপূর্ণ অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। যেখানে স্কুলছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের নারীরা রাস্তায় নেমে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো, এই অভ্যুত্থানের পরও নারীদের প্রতি সহিংসতা কমেনি। চলন্ত বাসে ধর্ষণের মতো মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা এখনো ঘটছে, যা জাতিকে হতবাক করছে। ফলে নারীর নিরাপত্তা ও সমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য–

১.

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নৈতিকভাবে শক্তিশালী করা:

নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করা জরুরি। অতীতের শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়। তাই বাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া উচিত। নারীরা যেন যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নির্ভয়ে সহায়তা চাইতে পারেন, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রতিটি থানায় নারী নির্যাতন–সংক্রান্ত আলাদা ইউনিট গঠন করা যেতে পারে, যেখানে নারীরা সহজে তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন।

২. আইনি কাঠামোকে শক্তিশালী করা:

২০২০ সালে বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হলেও ধর্ষণের হার কমেনি। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা ও আইনি কাঠামোর দুর্বলতা। দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলার কারণে অনেক ভুক্তভোগী আর্থিক ও মানসিক চাপে মামলা চালিয়ে যেতে অক্ষম হয়ে পড়েন। নারী নির্যাতনের মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা উচিত, যাতে ন্যায়বিচার দ্রুত নিশ্চিত করা যায়।

এ ছাড়া নির্যাতিত নারীদের আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারি উদ্যোগকে আরও বর্ধিত করতে হবে। ফৌজদারি আইন সংস্কার করে ধর্ষণের প্রমাণ সংগ্রহ ও বিচারপ্রক্রিয়া আরও সহজতর করা যেতে পারে, যাতে অপরাধীরা কোনোভাবেই আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে।

৩. সচেতনতা বৃদ্ধি করা:

বর্তমানে নারীদের জন্য আইনি সহায়তা ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ থাকলেও অনেক নারী এ সম্পর্কে অবগত নন। তাই এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। পাশাপাশি, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত।

স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে নারী অধিকার ও আত্মরক্ষার কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। নারীরা কীভাবে আইনি সহায়তা পেতে পারেন, কোথায় অভিযোগ জানাতে পারেন—এসব তথ্য সহজলভ্য করা উচিত।

৪. প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তাব্যবস্থা চালু করা:

ডিজিটাল নিরাপত্তাব্যবস্থা নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নারীদের জন্য এমন একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা যেতে পারে, যার মাধ্যমে তাঁরা যখনই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন, তখনই দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা পেতে পারেন। এ ছাড়া আত্মরক্ষার জন্য স্মার্ট ডিভাইস বা প্রযুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তাব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে, যা নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। অপরাধ প্রতিরোধের জন্য রাস্তা, গণপরিবহন ও কর্মস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে।

৫. সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা:

বর্তমানে সরকার নারী নিরাপত্তা ও সহায়তা বৃদ্ধির জন্য ‘নারী সহায়তা কেন্দ্র’ চালু করেছে, তবে এর সংখ্যা মাত্র ৭। অথচ দেশের প্রতিটি উপজেলাতেই নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাই প্রাথমিকভাবে প্রতিটি জেলা এবং পরবর্তী সময় প্রতিটি উপজেলায় এই ধরনের সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করা প্রয়োজন, যাতে নারীরা সহজেই সহায়তা পেতে পারেন।

এ ছাড়া, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেট বৃদ্ধি করে নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসন এবং আইনি সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ আরও সম্প্রসারিত করা উচিত। নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে নারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

সর্বোপরি নারীদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা অপরিহার্য, যেন তারা সমান অধিকার, সুযোগ ও ক্ষমতা পান। নারীরা নিরাপদ থাকলে, তারা সমাজ ও দেশের উন্নয়নে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন। নারী নির্যাতন বন্ধে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামাজিক সংগঠন ও সাধারণ জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত না করা গেলে জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তাই এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

সৈয়দা লাসনা কবীর অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মোহাম্মাদ ঈসা ইবন বেলাল গবেষণা সহযোগী, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র দ র জন য ন শ চ ত করত ন শ চ ত কর ব যবস থ অপর ধ দ পদক ষ প আম দ র গ রহণ ক ষমত সরক র ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ

চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।

এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।

বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।

এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেই

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা

অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।

সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল