শামি রোজা না রেখে খেলায় ভারতের মাওলানাদের মধ্যে বিতর্ক
Published: 7th, March 2025 GMT
মুসলিমদের সিয়াম-সাধনার পবিত্র মাস রমজান চলছে। সুস্থ ও সক্ষম সব মুসলিমের জন্য এই সময়ে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে ব্যস্ত থাকায় রোজা রাখছেন না ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি।
এ নিয়ে ভারতের মুসলিম সমাজে তোলপাড় চলছে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম জামাতের সভাপতি মাওলানা শাহাবউদ্দিন রাজভি বারেইলভি তো সরাসরি দাবি তুলেছেন, রমজান মাসে রোজা না রেখে বড় অপরাধ করছেন শামি। তাঁকে সৃষ্টিকর্তার কাছে জবাব দিতে হবে। তবে পরিবার, কোচসহ ভারতের মুসলিম সমাজেরই আরেকটি অংশ ৩৪ বছর বয়সী পেসারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
শামি যে রোজা রাখছেন না, তা জানাজানি হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও থেকে। দুবাইয়ে গত মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে বাউন্ডারির কাছে ফিল্ডিং করার সময় জুস পান করছিলেন তিনি। এরপরই একটি মহল তাঁর সমালোচনা শুরু করে।
পরে সেই বিতর্কে ঘি ঢালেন অল ইন্ডিয়া মুসলিম জামাতের সভাপতি মাওলানা শাহাবউদ্দিন রাজভি। ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, ‘মুসলিমদের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক। রোজা না রেখে শামি অপরাধ করেছে। তার এটা করা উচিত হয়নি। শরিয়াহ আইন অনুযায়ী, সে একজন অপরাধী। এ জন্য তাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’
শাহাবউদ্দিন রাজভি আরও বলেন, ‘কোনো সুস্থ নর-নারী (রমজান মাসে) রোজা না রাখলে ইসলামের দৃষ্টিতে বড় অপরাধী হয়ে যাবেন। মোহাম্মদ শামি ভারতের বিখ্যাত ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব। সে ম্যাচ চলার সময় পানি বা কোমল পানীয় জাতীয় কিছু পান করেছে। সবাই তা দেখেছে। যেহেতু সে খেলেছে, এর মানে সে সুস্থ। এরপরও রোজা না রাখলে তা মানুষকে ভুল বার্তা দেয়।’
তবে শাহাবউদ্দিন রাজভির এই কথার বিরোধিতা করেছেন অল ইন্ডিয়া ব্যক্তিগত মুসলিম আইন বোর্ডের কার্যনির্বাহী সদস্য মাওলানা খালিদ রশিদ ফারাঙ্গি মাহলি। তাঁর দাবি, শামি যেহেতু সফরে আছেন, তাই রোজা নাও রাখতে পারেন।
শামির বাড়ি ভারতের উত্তর প্রদেশের আমরোহায়। সেখান থেকে দুবাইয়ের দূরত্ব ২৩৫০ কিলোমিটারের মতো। মাওলানা খালিদ রশিদ জানিয়েছেন, ইসলামে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তি তাঁর অবস্থান (বসবাসের স্থান) থেকে দূরে কোথাও যাত্রা করলে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়।
এএনআইকে তিনি বলেছেন, ‘রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক, বিশেষ করে রমজান মাসে। যদিও আল্লাহ কোরআনে পরিষ্কার উল্লেখ করেছেন যে যদি কোনো ব্যক্তি সফরে যান বা অসুস্থ হন, তাহলে তিনি রোজা নাও পালন করতে পারেন। মোহাম্মদ শামি সফরে গেছে। তাই সে রোজা পালনে ছাড় পেয়েছে। কেউ তার দিকে আঙুল তুলতে পারবেন না। এ নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করা উচিত নয়।’
শিয়াদের ধর্মগুরু মাওলানা মির্জা ইয়াসুব আব্বাসও শাহাবউদ্দিন রাজভির কথার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মোহাম্মদ শামিকে লক্ষ্য করে বারেইলভির একজন মাওলানার দেওয়া বক্তব্য কেবল সস্তা প্রচারের জন্য। যেখানে বাধ্যবাধকতা আছে, সেখানে কোনো ধর্ম নেই। যেখানে ধর্ম আছে, সেখানে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। প্রত্যেক মুসলিম জানেন যে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাঁকে রোজা রাখতে হবে। যদি কেউ রোজা রাখতে না পারেন, তাহলে এটি তাঁর ব্যক্তিগত ব্যর্থতা। এর সঙ্গে সম্প্রদায় বা ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা রমজানে রোজা রাখেন না। তিনি তাঁদের সম্পর্কে কিছু বলেননি কেন? রোজা ও রমজানকে বিতর্কে জড়ানো ভুল।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে ৩ উইকেট নিয়েছেন শামি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ শ ম র জন য অপর ধ রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ফেসবুকে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য না করার নির্দেশনা সিলেট জেলা বিএনপির
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দায়িত্বহীন, অশালীন বা বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট, মন্তব্য কিংবা তথ্য শেয়ার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি। দলের কেউ এ নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
গতকাল রোববার রাতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন জেলা বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম।
এদিকে দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ ও শিষ্টাচার–বহিভূর্ত মন্তব্য করায় গতকাল রাতে বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবেদুর রহমানকে (আছকির) সাময়িক বহিষ্কারের পাশাপাশি সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছে জেলা বিএনপি। এ ছাড়া অনলাইন গণমাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী বক্তব্য দেওয়ার জন্য জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফখরুল ইসলামকে (ফারুক) সতর্কীকরণ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট জেলা বিএনপির আওতাধীন কিছু ইউনিটের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কার্যক্রমে অনভিপ্রেত ও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বনাথ উপজেলা, বিশ্বনাথ পৌরসভা ও ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মীর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, কটূক্তি ও বিভাজন সৃষ্টিকারী পোস্ট প্রচারিত হয়েছে। যা দলীয় শৃঙ্খলা ও ঐক্যের পরিপন্থী।
বিএনপি সব সময় সংগঠনের ঐক্য, শালীনতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের রাজনীতি বিশ্বাস করে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দলের কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মীর কাছ থেকে বিভেদমূলক আচরণ, বিদ্বেষ ছড়ানো বা প্রকাশ্যে অপপ্রচার কখনোই কাম্য নয়। অতএব জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটের নেতা-কর্মীদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হচ্ছে, যেন ভবিষ্যতে তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বহীন, অশালীন বা বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট, মন্তব্য বা শেয়ার থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকেন।
যোগাযোগ করলে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি ফেসবুকে কিছু নেতা-কর্মীকে একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় জেলা বিএনপি একটি নির্দেশনা দিয়েছে। তা অমান্যকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।