আ’লীগের পর খাল দখলে মরিয়া বিএনপির দু’পক্ষ
Published: 7th, March 2025 GMT
খুলনার কয়রায় ৩০ একর পবনা খালের দখলে নিতে বিএনপির দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। কয়েক দিন ধরে খাল এলাকায় মহড়ার পর আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। সেখানে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
২০০৯ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঁধ ভেঙে শাকবাড়িয়া নদীর পানিতে প্লাবিত হয় এলাকা। সে সময় খালের দুই পাড়ের ফসলি জমিও ভেঙে যায়। এতে ৯ একর আয়তনের সরকারি খাল ৩০ একরে পরিণত হয়। পরবর্তী সময়ে খালের ইজারাদাররা খাসজমির সঙ্গে রেকর্ডীয় জমিও ভোগদখল করতে থাকেন। জমির অধিকার হারান কৃষকরা। চলতে থাকে দখল-পাল্টা দখল। ভূমি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
খাল-সংলগ্ন পূর্ব মঠবাড়ি গ্রামের রণজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘খালে আমাদের ৬ বিঘা জমি আছে। ১৫ বছর ধরে দখল পাচ্ছি না। আগের ইজারাদার পালিয়ে যাবার পর মনে করেছিলাম জমি দখলে নেব। কিন্তু এখন খালের পাড়ে দুই দলের মহড়া দেখে সাহস পাচ্ছি না।’
একই গ্রামের খুকু রানী মণ্ডল বলেন, ‘ভাঙনে জমি হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থা আমাগের। জমি বাবদ কিছু টাকা-পয়সা পালিও খাইয়ে পইরে বাঁচতি পারতাম। কিন্তু যারা খালে মাছ চাষ করতি আসে, তারা সরকারি খালের সাথে আমাগের জমিও দখল করে। তাগের কাছে টাকা চাতি সাহসে কুলায় না।’
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশ কিছুদিন শ্রমিক লীগ নেতা আল আমীন খালটি ভোগদখল করেছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর খালের দখল ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। এরপর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ বিশ্বাস খালের নিয়ন্ত্রণ নেন। কিছুদিন পর তাঁকে হটিয়ে যুবদল কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান হেলাল খাল দখল করেন। পরে প্রশাসন দুই পক্ষকে খাল থেকে উচ্ছেদের জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দিলে দুই মাস সেখানে কাউকে দেখা যায়নি।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে যুবদল নেতা হেলাল উদ্দীন ২০-২৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে খাল পাড়ে মহড়া দিয়ে চলে যান। ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে তিনি ফের খালটি দখল করেন। একই দিন বিকেলে বিএনপি নেতা আবু সাঈদ বিশ্বাসের লোকজন খাল পাড়ে গিয়ে হেলালের লোকজনকে সরিয়ে দেন। বর্তমানে খালে দুই পক্ষের কেউ না থাকলেও আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। মামলায় একে অপরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, লুটপাট ও মারধরের অভিযোগ করেছেন।
মঠবাড়ি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মওলা বকস বলেন, ওই খালে সরকারি খাস খতিয়ানের জমি আছে ৯ একর। নদী ভাঙনের ফলে ২০ একরের বেশি রেকর্ডীয় জমি ওই খালে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার ভাগনে খালটি দখলে রেখে মাছ চাষ করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পাশাপাশি জমি মালিকদের টাকা না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তিনি চলে যাওয়ার পর এখন বিএনপির দুই পক্ষ খালটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এ বিষয়ে যুবদল কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান হেলাল বলেন, খালের আগের দখলদার পালিয়ে যাওয়ার পর জমি মালিকদের কাছ থেকে লিখিত চুক্তি করে মাছ চাষ শুরু করেছিলাম। কিছুদিন পর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ বিশ্বাস আমার লোকজনকে তাড়িয়ে দিয়ে নিজে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
বিএনপি নেতা আবু সাঈদ বিশ্বাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, খালের জমির মালিকরা চান আমি সেখানে মাছ চাষ করি। একটি পক্ষ ভুয়া মালিকের সঙ্গে চুক্তিপত্র করে খাল দখলে নিতে চাইছে। আমি তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করছি।
কয়রা থানার ওসি এমদাদুল হক বলেন, দুই পক্ষকে নিবৃত্ত থাকতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় এমন কর্মকাণ্ডে কেউ জড়িত থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ঈদ ব শ ব স ব এনপ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।
ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।
১৫ দফা প্রস্তাবনা
সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।