গারো পাহাড়ে ‘পরিকল্পিত আগুনে’ পুড়ল বিস্তীর্ণ সংরক্ষিত বন
Published: 8th, March 2025 GMT
শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের কাংশা ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি এলাকায় বিস্তীর্ণ বনভূমি আগুনে পুড়ে গেছে। এতে জঙ্গলে বসবাস করা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী ও বনজ গুল্মলতা আগুনে পুড়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ী ও বন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে শালবাগান ধ্বংস করে বনের জায়গা দখলে নিতেই পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হচ্ছে। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বনে পর্যটক ও গরুর রাখালদের বিচরণ থাকায় তাঁরা যে বিড়ি বা সিগারেট খান, তা থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। এ বিষয়ে মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।
গত বুধবার থেকে ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউনিয়নের হালচাটি, গান্ধীগাঁও, গজনী বিট, দরবেশ টিলা এলাকার বিস্তৃত শালবনে অন্তত ২০টি স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে উপকারী কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়সহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী ও চারা গাছ পুড়ে গেছে। বন বিভাগের কর্মীরা চেষ্টা চালিয়ে শুক্রবার আগুন নেভাতে সক্ষম হন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে একটি স্বার্থান্বেষী মহল গারো পাহাড়ে শালবন ও বন বিভাগের জমি দখলের তৎপরতা শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে দুর্বৃত্তরা বনের গাছ কাটার সুবিধার্থে ইচ্ছা করে আগুন লাগিয়ে দেয়। শুকনা মৌসুম থাকার কারণে শালবনের ঝরা পাতা এবং শুকনা ছোট গাছপালায় সহজে আগুন লেগে যায়। ফলে বনের শালগাছ সহজে কাটা সম্ভব হয়। আর এ সুযোগে অসাধু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লাখ লাখ টাকার গাছ কাটার পাশাপাশি বনের খালি জায়গা দখল করে বসতি স্থাপন করে।
স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ভয়েজের সাধারণ সম্পাদক মারুফুর রহমান বলেন, ‘গারো পাহাড়ের অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত। সংরক্ষিত শাল-গজারি বন ধ্বংস করার অভিপ্রায় বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এই কাজগুলো করা হচ্ছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে।’
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এস বি তানভীর আহমেদ বলেন, এখন শুকনা মৌসুমে শালপাতা খুবই শুষ্ক অবস্থায় বনে পড়ে স্তূপ হয়ে থাকে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দা ও গজনি অবকাশ এলাকায় ট্যুরিস্টদের আনাগোনা বেশি। এ ছাড়া বনে গরুর রাখালের বিচরণ থাকায় তাঁরা যে বিড়ি বা সিগারেট খান, সেই আগুন থেকেই জঙ্গলে আগুনের সূত্রপাত ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তানভীর আহমেদ আরও বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানের আগুনের নেভানো হয়েছে। এ ছাড়া মাইকিং করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করা হচ্ছে। তবে বনে কিছু গাছ কাটা হয়েছে। কাটা গাছ ইতিমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।