পথে, মাঠে, ঘরে নারীর প্রতি বিদ্বেষ-সহিংসতা
Published: 8th, March 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময়ের একটি ছবি সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়েছে। বোরকা আর টি–শার্ট-প্যান্ট পরা দুই নারী লাঠি হাতে পাশাপাশি দাঁড়ানো। আন্দোলনের সময়ে পোশাক নিয়ে প্রশ্ন না উঠলে এখন কেন? কেন এই যুগে এসে ‘ওড়না গায়ে থাকা না-থাকা নিয়ে’ একটি মেয়েকে হেনস্তার শিকার হতে হয়? কেন নিপীড়নকারীকে ‘বরণ’ করা হয় ফুলের মালা দিয়ে? এসব প্রশ্ন ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এক তরুণীর সাক্ষাৎকার ভাইরাল হয়েছে এই সময়ে। তরুণীর প্রতি প্রশ্ন ছিল, ‘২৪ ঘণ্টার জন্য যদি পৃথিবী থেকে সমস্ত পুরুষ উধাও হয়ে যায়, আপনি কী করবেন?’—উত্তরে তরুণী বলেছিলেন, ‘রাতে একা হাঁটতাম। রাত তিনটা বাজে হেঁটে দেখব কেমন লাগে।’
এ দেশে একজন নারীর রাতে একা হাঁটতে চাওয়ার ইচ্ছা যে কত ‘বড় ইচ্ছা’, তা নারীমাত্রই উপলব্ধি করতে পারেন। এখানে দিনের বেলাও নারীর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয়। পথ, জনপরিসর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, খেলার মাঠ, ঘরে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন, নিপীড়ন ও হেনস্তার ঘটনাগুলোই নারীর ভয় বাড়িয়েছে।
অসহনশীল ও অনিরাপদ পরিবেশ নারী ও মেয়েদের স্বাভাবিক চলাচলকে ব্যাহত করছে।
গণ-অভ্যুত্থানের পরপরই আন্দোলনকারী নারীদের বিরুদ্ধে অনলাইনে নিপীড়নমূলক অপপ্রচার থেকে শুরু করে সম্প্রতি জনপরিসরে নারী নিপীড়নের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা উন্নত করার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো উদ্যোগ তো নেয়নি, বরং তাদের এই নীরবতা ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের প্রতি নতজানু সমর্থনকে প্রকাশ করছে।অধিকারকর্মী মারজিয়া প্রভা১ মার্চ মোহাম্মদপুরে ‘পাবলিক প্লেসে’ (জনপরিসরে) ধূমপান করাকে কেন্দ্র করে দুই নারীকে ‘মব’ (একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা) সৃষ্টি করে মেরে রক্তাক্ত করা হয়। ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে ‘ওড়না পরা’ নিয়ে হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে মোস্তফা আসিফ অর্ণব নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ওই ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে সহকারী বাইন্ডার। মেয়েটি মামলা করায় গ্রেপ্তার করা হয় ওই ব্যক্তিকে। ঘটনা শুধু এখানেই শেষ নয়, অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে এবং ওই মেয়ের বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠী তৎপর হয়ে ওঠে। পরদিন জামিনে মুক্ত হওয়ার পর ওই ব্যক্তিকে ফুলের মালা দিয়ে, পাগড়ি পরিয়ে বরণ করে ওই গোষ্ঠী–সমর্থিত লোকজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া মোস্তফা আসিফ (লাল পলো শার্ট পরা)। পরে তিনি জামিন পান.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে মারা গেলেন সাবেক কাউন্সিলর
পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর কামাল হোসেন (৫৫) মারা গেছেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে নগরীর দাসপুকুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের পরিবার বলছে, পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন কামাল হোসেন। তবে পুলিশ বলছে, তারা কামাল হোসেনকে ধরতে সেখানে যাননি। গিয়েছিলেন অন্য কাজে।
নগরীর দাসপুকুর এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কামাল হোসেনের নামে চারটি মামলা হয়। তিনি এলাকায় আত্মগোপনে থাকতেন। পরিবারের ধারণা, মামলা থাকায় পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে কিংবা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
কামাল হোসেনের ছেলে সোহান হোসেন শাকিল বলেন, রাতে আমাদের এলাকায় পুলিশ এসেছিল। পুলিশ দেখে আমার বাবা তবজুল হক নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতে যান। সিঁড়িতেই অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান।
নগর পুলিশের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম জানান, কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা আছে। তিনি আত্মগোপনে থাকতেন। রাতে তিনি মারা গেছেন।
ওসি আরও বলেন, রাতে দাসপুকুর এলাকায় পুলিশ একটি কাজে গিয়েছিল। তবে সেখানে কামাল হোসেন আছেন কিনা তা জানতো না। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। তার পরিবার লাশ দাফনের কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, তিনি রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বিএনপির রাজনীতি করলেও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সরকারি দলের রাজনীতিতে যুক্ত হন। তবে তার দলীয় কোনো পদ ছিল না। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তার নামে চারটি মামলা হয়। তখন থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।