অচল ইটভাটায় অভিযান সচল ভাটায় পুড়ছে বন
Published: 8th, March 2025 GMT
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের লোহাগাড়া চুনতি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রয়েছে তিনটি ইটভাটা। এবিসি, এসবিএম ও এলবিএম নামের এসব ইটভাটা ফসলি জমি ও বনের জায়গায় গড়ে উঠেছে। চকরিয়া উপজেলাধীন তিনটি ইটভাটার মধ্যে তিন বছর ধরে বন্ধ এলবিএম, এক বছর ধরে উৎপাদন নেই এবিসিতেও। কিন্তু পাহাড়ের মাটি ও বনের কাঠ পুড়িয়ে ‘সগৌরবে সচল’ অবৈধ এসবিএম ইটভাটা। প্রায় এক মাস আগে বন্ধ ইটভাটা দুটো গুঁড়িয়ে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। অথচ অভিযান চালানো হয়নি অনুমোদনহীন সচল ইটভাটা এসবিএমে। বনবিট ও রেঞ্জ কার্যালয়ের নাকের ডগায় আইন অমান্য করে ইটভাটাটি চলছে। প্রতিদিন এই ইটভাটায় পুড়ছে পাহাড় কাটা মাটি ও বনের গাছ।
জানা যায়, ১১ ফেব্রুয়ারি বন্ধ ইটভাটা এবিসি ও এলবিএমে অভিযান পরিচালনা করেন চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো.
স্থানীয় লোকজন জানান, বন্ধ ইটভাটায় অভিযান চালানো হলেও চালু ইটভাটায় অভিযান হয়নি। এসবিএম নামের ইটভাটায় পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। নেই জেলা প্রশাসনের অনুমোদন। গড়ে উঠেছে ফসলি ও বনের জায়গায়। পোড়ানো হয় বনের কাঠ ও পাহাড়ের মাটি। কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তারপরও উপজেলা প্রশাসন নীরব।
চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফান উদ্দিন বলেন, ‘বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়েছে।’ বন্ধ ইটভাটায় কেন অভিযান চালানো হয়েছে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উৎপাদনে থাকা ইটভাটাগুলোয় অভিযান না চালাতে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে।’
ইট তৈরিতে কী পরিমাণ মাটির ব্যবহার ও একটি ভাটায় বছরে কী পরিমাণ ইট তৈরি হয়, এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কথা হয় ইটভাটার এক শ্রমিকের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, ইটের সাইজ অনুসারে একটি কাঁচা ইট তৈরিতে মাটি লাগে শূন্য দশমিক শূন্য ৯৫ ঘনফুট। বছরের অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি ভাটায় কমপক্ষে গড়ে আট রাউন্ড ইট পোড়ানো হয়। প্রতি রাউন্ডে ১০ লাখ ইট থাকে। একেকটি ভাটায় বছরে কমপক্ষে ৮০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। এ হিসেবে
এসবিএম ইটভাটার জন্য বছরে আনুমানিক ১ কোটি ঘনফুট মাটি প্রয়োজন।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন উত্তর হারবাং গয়ালমারা এলাকায় এসবিএম ইটভাটার অবস্থান। শামসুল আলমের মালিকানাধীন এসবিএম ভাটার অধিকাংশ জমি চুনতি সংরক্ষিত বনের। বনের জমি ও ফসলি জমিতে ১৮ বছর ধরে এই ইটভাটা চলছে। এই ইটভাটা থেকে হারবাং বন বিটের দূরত্ব মাত্র অর্ধ কিলোমিটার। প্রতিদিন ইটভাটার পাশ দিয়ে বনবিভাগের লোকজনের যাতায়াত থাকলেও তারা যেন কিছুই দেখেন না। সন্ধ্যা নামলেই ট্রাকে করে পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি এবং বনের কাঠ আসে এই ইটভাটায়।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে উল্লেখ আছে, সংরক্ষিত বনের ভেতর তো নয়ই, অন্তত ৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ধরনের ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ সংরক্ষিতে বনের খেতর দেড়যুগ ধরে চলছে এসবিএম ইটভাটা। বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই।
এ প্রসঙ্গে চুনতি রেঞ্জ কর্মকর্তা আবির হাসান বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। ইটাভাটার ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইটভ ট ইটভ ট র ও বন র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক
ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইলের দূরত্বকে হার মানিয়েছে ভালোবাসা। ভালোবাসার টানে এক তরুণীকে বিয়ে করতে বাংলাদেশে এসেছেন চীনের এক যুবক। গত শুক্রবার রাতে চীন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক তরুণীর বাসায় আসেন তিনি। আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁরা বিয়ে সম্পন্ন করবেন।
চীনের যুবকের নাম ওয়াং তাও (৩৬)। চীনের হোয়ানান প্রদেশের ওয়াং ইচাং চাওয়ের ছেলে তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের তাহের মিয়ার মেয়ে সুরমা আক্তারের (২২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে তাঁর। সুরমা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং ঢাকার লালবাগে থাকেন। আজ রোববার তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন বলে তরুণীর পরিবার জানিয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছান চীনের যুবক ওয়াং তাও। বিমানবন্দর থেকে চীনের যুবককে আতিথেয়তা দিয়ে নিজ বাড়ি নাসিরনগরের কুন্ডার কোনাপাড়ায় নিয়ে আসেন তরুণী সুরমাসহ তাঁর পরিবারের লোকজন।
স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও তরুণীর পরিবারের দাবি, দেড় থেকে দুই মাস আগে ডেটিং এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে সুরমার পরিচয় হয়। তাঁরা নিয়মিত চ্যাটে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। বিষয়টি চীনের যুবক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণী নিজ নিজ পরিবারকে জানান। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাঁরা একে অপরকে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। পরে চীনের যুবক বাংলাদেশ ও চীনের দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে দুপুরের পর থেকে চীনের যুবককে দেখার জন্য সুরমার বাড়িতে ভিড় করেন স্থানীয় লোকজন।
সুরমা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘ওয়ার্ল্ড টক’ অ্যাপের মাধ্যমে চীনের যুবক ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে চ্যাট করতেন। একপর্যায়ে তাঁরা পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
সুরমার মা নুরেনা বলেন, ‘আমার মেয়ের ভালোবাসা পেতে চীন থেকে যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলে এসেছে। ওই যুবক কোনো ধর্মই বিশ্বাস করে না। মেয়েকে বিয়ে করতে প্রয়োজনে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। আগামীকাল (আজ) রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে মুসলিম রীতি মেনে সুরমাকে বিয়ে করবে চীনের যুবক। এতে দুই পরিবারের সম্মতি আছে। আমরা এই বিয়েতে আনন্দিত। মেয়ের খুশিই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
নাসিরনগর থানার কুন্ডা বিট উপপরিদর্শক (এসআই) জাহান-ই-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে কুন্ডা গ্রামে যাই। পাসপোর্ট দেখে নিশ্চিত হলাম যে যুবক চীনের নাগরিক। ওই তরুণী ঢাকার লালবাগে থাকেন। ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। একপর্যায়ে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। চীনের যুবক ইংরেজি বোঝেন না। তাই কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে কথা বলতেন। তরুণী ও তাঁর পরিবার জানিয়েছে, রোববার হলফনামার মাধ্যমে চীনের যুবক মুসলিম হবেন। তারপর তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।’ তরুণীর বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, চীনের যুবক এক থেকে দেড় মাস থাকবেন। যাওয়ার সময় হয় ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বা পরে নিয়ে যাবেন।