শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজের জমিনে ‍ফিউশনধর্মী মোটিফ ফুটিয়ে তুলতে পছন্দ করেন ‘খাদি বাই নুভিয়ার’ কর্ণধার ফাতেমা তুজ জোহরা নুভিয়া। ঈদ কালেকশন-২০২৫-এও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এবারেও খাদি’র ঈদ কালেকশনে থাকছে শাড়ি এবং সালোয়ার কামিজ। নুভিয়া সাধারণত পোশাকের জমিন রাঙিয়ে তুলতে পছন্দ করেন। নিজের তৈরি পোশাকে ক্লায়েন্টদেরও রাঙিয়ে তুলতে চান। নুভিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘উৎসব সামনে রেখে রঙিন-রঙিন শাড়ি ও সালোয়ার কামিজ কালেকশনে রেখেছে খাদি বাই নুভিয়াতে। এর পাশাপাশি গরমে আরামের কথা চিন্তা করে কিছু স্মুদি কালার নিয়েও কাজ করেছি।’’

ফ্লোরাল, লোকজ ও পপ–আর্ট মোটিফের নান্দনিক উপস্থাপনার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ‘খাদি বাই নুভিয়া’। নামে খাদি হলেও শুধু খাদি নিয়ে কাজ করছেন না নুভিয়া। শুরুটা হয়েছিল খাদি কাপড় নিয়েই। খাদির পোশাক, আর বৈচিত্রধর্মী নকশা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে। এরপর থেকে ক্রেতারা খাদি কাপড়ের পাশাপাশি অন্য ফেব্রিকের পোশাকের প্রতি চাহিদা দেখান। ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে খাদির পাশাপাশি সুতি ও লিলেন নিয়ে কাজ করা শুরু করেন নুভিয়া। এসব ফেব্রিকের পাশাপাশি এই ঈদে বিশেষ প্রাধান্য পাচ্ছে সিল্ক এবং মসলিন। খাদি বাই নুভিয়ার ঈদ কালেকশনের পোশাকে স্কিন প্রিন্ট থাকছে। এ ছাড়াও থাকছে ডিজেল প্রিন্ট।

নুভিয়া বলেন, ‘‘ডিজেল প্রিন্টের নকশা সুতি কাপড়ের জমিনে ফুটিয়ে তোলা কঠিন। ডিজেল প্রিন্ট ফুটিয়ে তোলার জন্য সিল্ক এবং মসলিন কাপড় বেছে নিয়েছি। 

আরো পড়ুন:

হাফসা মোসলেমের ঈদের গহনায় আভিজাত্য

নওশাবার ঈদ কালেকশন

ফোক আর ঐতিহ্যগত যেসব জিনিসপত্র আছে এবং বাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য, ফুল, পাখি, লতা, পাতা এসব মোটিফ প্রিন্ট করে আধুনিক উপায়ে পোশাকের জমিনে ফুটিয়ে তুলেছেন।

খাদি বাই নুভিয়ার কুর্তি, সালোয়ার কামিদের দরদাম শুরু হয় ১০০০ টাকা থেকে। শাড়িগুলোর দাম ২০০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ঈদের দিন কেমন পোশাক পরবেন এই ডিজাইনার, সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছিল রাইজিংবিডি। নুভিয়া বলেন, ‘‘আরামের কথা চিন্তা করে ঈদের দিন সকালে আমি সুতি ডেস পরবো। বিকালে একটি ফেস্টিভ লুক আনার জন্য মসলিন বা সিল্কের রঙিন কাপড় পরবো।’’

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ প শ ক ঈদ ক ল কশন

এছাড়াও পড়ুন:

মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী কৃষিশ্রমিক

‘১৫-২০ বছর ধইরা (ধরে), ই-খলায় (ধান মাড়াই ও শুকানোর স্থান) কাজ করি আমরা। আমরারে ৫০০ টেকা (টাকা) রোজ দেইন (দেন), আর বেটাইনতে (পুরুষরা) পাইন ৭০০ থেকে ৮০০ টেকা, দুপুরে আমরারে চিড়া-গুড় দেওয়া অয় (হয়) হেরার (পুরুষদের) লাগি ভাতের ব্যবস্থা করা অয়।’ 

কথাগুলো বলছিলেন তাহিরপুরের শনির হাওরপারের কালীবাড়ির সামনে একটি খলায় ধান শুকানো, ঝাড়াই ও বাছাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকা দুই নারীশ্রমিক গীতা বর্মণ ও লক্ষ্মী রানী বর্মণ।

কেবল তাহিরপুরের ধানের খলায় নয়। হাওর এলাকাজুড়েই ধানের খলায় কাজ করা নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের মজুরিতে বৈষম্য রয়েছে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদরের নতুনপাড়ার বারীক মিয়ার খলায় কাজ করছিলেন, পাশের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মধ্যবয়সী নারীশ্রমিক প্রেমলতা বিশ্বাস। কখন কাজে এসেছেন জিজ্ঞেস করতেই বললেন, সকাল ৮টায়। কয়টায় ছাড়বেন কাজ, বললেন বিকাল ৫টায়। মজুরি কত জানতে চাইলে বললেন, দিনে ৫০০ টাকা। পুরুষ শ্রমিকরা কত পায় প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, ৭০০ টাকা। আপনাকে কম দেওয়া হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রেমলতা বলেন, ‘ই-দেশও নিয়মওই এইটা, বেটাইনতে (পুরুষরা) বেশি পায়।’
মধ্যনগরের বংশিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা হাসিনা বেগম জানান, ধান মাড়াই, শুকানো ও গোলায় তোলার কাজ করেন তিনি। প্রতিদিনই সকালে আগে কাজে লাগেন এবং কাজ শেষে সবার পরে ফেরেন তিনি। কিন্তু মজুরি দেবার সময় তাঁকে দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। পুরুষ শ্রমিককে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকাও দেওয়া হয়।

দিরাই উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বড় গৃহস্থ সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছত্তার মিয়ার ভাষ্য, রাজাপুরে নারী কৃষিশ্রমিক কমে গেছে। পাশের ইসলামপুরে এখনও বেশির ভাগ কাজ করেন নারীরা। ওখানে নারী ও পুরুষ শ্রমিক অর্ধেক-অর্ধেক। এবার পুরুষ ও মহিলা শ্রমিককে কত টাকা চুক্তিতে গ্রামের বড় কৃষকরা কাজে লাগিয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, পুরুষ ২০ দিনে ১৬ মণ ধান এবং নারী শ্রমিকদের ৮ মণে করানো হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি এই মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে বলেন, ‘আমি এ নিয়ে কথাও তুলেছি, কিন্তু অন্যরা তাতে বিরক্ত হন, তারা বলেন, চেয়ারম্যান সাবে রেইট বাড়িয়ে সবাইকে বেকায়দায় ফেলতে চান।’ 

হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, হাওরের ফসল উৎপাদনে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় কৃষি শ্রমিকের চাইতে এক সময় বেশি ছিল নারী শ্রমিক। মজুরি বৈষম্যের কারণে এদের অনেকে এলাকার কাজ ছেড়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহরে চলে গেছে। 

সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য বললেন, কৃষিতে মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে গ্রামীণ এলাকা ছেড়ে উপজেলা, জেলা ও রাজধানীর গার্মেন্টসমুখী হয়েছে হাজার হাজার নারীশ্রমিক।  কৃষি ছাড়াও অন্যান্য পেশায়ও মজুরি বৈষম্য থাকায় নারীর উপস্থিতির সংখ্যা কমছে।

গৌরী ভট্টাচার্য্য আরও বলেন, এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গিয়ে কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত পুরুষদের পেশা কৃষক লিখলেও নারীর ক্ষেত্রে হয় না। নারীর প্রতি এমন বৈষম্য বন্ধ করতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ