স্বাদের ক্ষেত্রে খেজুর যেমন অনন্য, ঠিক তেমনি এর রয়েছে অসাধারণ সব পুষ্টিগুণ। প্রাকৃতিকভাবে চিনির বিকল্প হিসেবেও খেজুর বেশ জনপ্রিয়। আজকাল চিনির বিকল্প হিসেবে খাবারে মিষ্টতা বাড়াতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন খেজুর। এতে খাবারের স্বাদ বাড়ার পাশাপাশি শরীরেও তেমন ক্ষতিকর কোনো প্রভাব পড়ে না; বরং খেজুরে উপস্থিত প্রাকৃতিক চিনি, ফাইবার, ভিটামিন, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও খনিজ শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি থেকে শুরু করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, শক্তি বৃদ্ধি—এমনকি ত্বক ভালো রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহানের মতে, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় খেজুর রাখলে শরীর সুস্থ ও সক্রিয় থাকে। বিশেষভাবে রমজানের সময় এটি আদর্শ একটি খাবার হিসেবে বিবেচিত। কারণ, এটি দ্রুত শক্তি জোগাতে পারে। সেই সঙ্গে এটি ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া এটি কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে ও রক্তশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের গ্রাহকদের খেজুরের চাহিদা পূরণে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে ঘরেরবাজার। চলুন জানা যাক, খেজুরের অসাধারণ কিছু স্বাস্থ্য-উপকারিতা সম্পর্কে।  

ত্বক ভালো রাখে

খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি, যা ত্বকের কোষগুলোর ক্ষয় প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। খেজুর ত্বকে কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা বাড়ায়। যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখে, ফলে সহজে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না এবং ত্বক আরও উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত দেখায়। এ ছাড়া খেজুরে উপস্থিত পলিফেনল ও ক্যারোটিনয়েড ত্বককে ফ্রি-র‍্যাডিক্যালের হাত থেকে বাঁচায়। যা ত্বকের অকালবার্ধক্য প্রতিরোধে বেশ কার্যকর। নিয়মিত খেজুর খেলে ত্বকের শুষ্কতা কমে এবং প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। শুধু ত্বক নয়, এতে উপস্থিত বায়োটিন ও আয়রন চুলের গোড়া মজবুত করে, চুল ঝরা কমায় এবং চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে; অর্থাৎ এটি ত্বকের পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে

খেজুরে উপস্থিত উচ্চমাত্রার ফাইবার হজমক্রিয়া উন্নত করতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি অন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য করে। যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য খেজুর হতে পারে একটি প্রাকৃতিক সমাধান। এ ছাড়া খেজুরে উপস্থিত প্রোবায়োটিক অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে, যা খাদ্য পরিপাক এবং পুষ্টিশোষণ প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে তোলে। নিয়মিত খেজুর খেলে গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটির সমস্যা হ্রাস পায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

যাঁদের উচ্চরক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য খেজুর অত্যন্ত উপকারী। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, যা শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া খেজুরের ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়াম রক্তনালির প্রসারণ ঘটিয়ে রক্তসঞ্চালন সহজ করে, ফলে হৃৎযন্ত্রের কার্যকারিতা ভালো থাকে। এতে উপস্থিত অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও পলিফেনল হৃৎপিণ্ডের প্রদাহ কমিয়ে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে  

খেজুর আয়রনের অত্যন্ত চমৎকার একটি উৎস, যা শরীরে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষভাবে, যাঁরা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য খেজুর অত্যন্ত উপকারী। এতে উপস্থিত ভিটামিন বি-৬ ও ফলিক অ্যাসিড শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং অক্সিজেন পরিবহন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। ফলে শরীরের দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ও ক্লান্তিভাব দূর হয়।

হাড়ের গঠন মজবুত করে

হাড় মজবুত রাখতেও খেজুরের জুড়ি নেই। হাড়ের জন্য ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেশিয়াম অত্যন্ত জরুরি, যা খেজুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। নিয়মিত খেজুর খেলে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়, অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে, হাড়ের ক্ষয়প্রক্রিয়া ধীর হয়, বয়সজনিত কারণে হাড়-দুর্বলতা প্রতিরোধ হয়। বিশেষভাবে বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী ও বেড়ে ওঠা শিশুদের জন্য খেজুর অত্যন্ত উপকারী।

খেজুরের ধরন ও প্রকারভেদ

খেজুর মূলত অঞ্চলভেদে ভিন্ন স্বাদ, আকৃতি ও গুণাগুণের হয়ে থাকে। বিশ্বের ১০টি জনপ্রিয় খেজুর হলো আজওয়া, আম্বার, সাফাভি, সুক্কারি, বারহি, সাগাই, খুদরি, জাহিদি, খালাস ও মেডজুল। মিষ্টি ও ক্যারামেল স্বাদের জন্য সুক্কারি বেশ জনপ্রিয়। আর ‘খেজুরের রানি’ হিসেবে সমাদৃত মেডজুল। এটি এর ঘ্রাণ এবং বড় আকারের জন্য বেশি পরিচিত। এই খেজুরগুলোর মধ্যে সুক্কারি, আজওয়া, মেডজুল, মাবরুম খুব সহজেই পেয়ে যাবেন ঘরেরবাজারের ওয়েবসাইটে।

ইফতার ও সাহ্‌রিতে যেভাবে রাখবেন খেজুর

ইফতারে দুধ বা শরবতের সঙ্গে প্রাকৃতিক মিষ্টতা যোগ করতে ব্যবহার করতে পারেন খেজুর। এটি শরীরে দ্রুত শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।

সাহ্‌রিতে ওটস্ বা দইয়ের সঙ্গে খেতে পারেন খেজুর, এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

ড্রাই ফ্রুট সালাদে কাজু, কাঠবাদাম, বাদাম ও কিশমিশের সঙ্গে মিশিয়ে ইফতারে পরিবেশন করা যেতে পারে।

দুধ, কলা ও বাদামের সঙ্গে ব্লেন্ড করে ইফতারে স্বাস্থ্যকর স্মুদি বানানো যেতে পারে।তবে খেজুর কেনার সময় অবশ্যই এর গুণগত মান যাচাই করে নেওয়া ভালো। সরাসরি বাজারে কিংবা আজকাল বিভিন্ন অনলাইন স্টোরেও পাওয়া যাচ্ছে উন্নতমানের খেজুর।

যেমন ঘরেরবাজার ওয়েবসাইটে ঢুকলেই হরেক রকম পণ্যের পাশাপাশি দেখতে পাবেন বিভিন্ন রকমের খেজুরের সমাহার। স্বাদ ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খেজুরের জন্য যাচাই-বাছাই করে কেনাই উত্তম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র জন য খ জ র স হ য য কর উপস থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

আরো পড়ুন:

খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’

‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।

মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।

বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন। 

জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’

‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ