নেই কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য; নন কোনো বেসরকারি সংস্থার প্রধান। তবু নিজের উদ্যোগে গরিব মানুষকে রমজানজুড়ে ইফতারি খাওয়ান ফরিদপুরের বেলায়েত হোসেন। প্রতিদিন গড়ে বিভিন্ন বয়সের দুই শতাধিক মানুষ তার মেহমানখানায় ইফতারি খেয়ে থাকেন।

ফরিদপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন পশ্চিম গোয়ালচামট এলাকার বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন মোল্লা। মাঝবয়সী এ ব্যক্তি পেশায় ঠিকাদার। রয়েছে ছোটখাটো এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের ব্যবসা। গত কয়েক বছর ধরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পথচারী ও স্থানীয় গরিব মানুষকে ইফতারি খাওয়ান তিনি।

সরেজমিন দেখা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় তিনি ও তার পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী সবাই মিলে করছেন ব্যতিক্রমী এ আয়োজন। ধর্মীয় ও সামাজিক দুটি দিক বিবেচনা করে তাদের এই শুভ উদ্যোগ। স্থানীয় মাদ্রাসার এতিম, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বাসস্ট্যান্ডে আসা পথচারী ও যাত্রীসাধারণ এবং এলাকার নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ যারা হাত পেতে কিছু চাইতে পারেন না, তাদের জন্যই এ ইফতার।

ইফতার করতে আসা সাধারণ মানুষ ও আয়োজনের সহযোগী যারা তাদের সঙ্গে কথা হয়। বেলায়েত হোসেন মোল্লার বড় ভাই এনায়েত মোল্লা, ভাতিজা ইকবাল হোসেন, ব্যবসায়ী হারেজ মোল্লা, স্বেচ্ছাসেবী সজীব মণ্ডল, আক্কাস শেখ, শান্ত সিকদার ও ইমন শেখ জানান, প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষকে তৃপ্তির সঙ্গে ইফতার করিয়ে আনন্দ পান তারা। এ জন্য দুপুরের পর থেকে তাদের কাজে নেমে পড়তে হয়। পেশাদার বাবুর্চি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করা হয়, যাতে মান ঠিক থাকে। এর সঙ্গে দেশি ফল ও সরবত দেওয়া হয় ইফতারিতে।

বেলায়েত হোসেন মোল্লা বলেন, প্রতিষ্ঠিতরা যার যার মহল্লায় এ ধরনের উদ্যোগ নিলে অসহায় দরিদ্র মানুষ ইফতারে ভালো কিছু খেতে পারেন। একই সঙ্গে পেতে পারেন মনের অনাবিল আনন্দ ও মানুষের জন্য কিছু করতে পারার তৃপ্তি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইফত র ইফত র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা

হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।

চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।

শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।

আরো পড়ুন:

বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।

শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’

শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন  রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’

চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’

ঢাকা/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ