ভারতের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে পর্দা নামলো আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি-২০২৫ এর। আজ রোববার (০৯ মার্চ, ২০২৫) রাতে নিউ জিল্যান্ডকে ৪ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে এক যুগ পর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ভারত।
ভারতের শিরোপা জয়ের ক্ষেত্রে ফাইনালে দারুণ ভূমিকা পালন করেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিনি রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন। ৮৩ বলে ৭৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে দলের জয়ের ভিত গড়ে দিয়ে যান। তাতে ম্যাচসেরার পুরস্কারও পান তিনি।
অন্যদিকে সিরিজ সেরা হয়েছেন নিউ জিল্যান্ডের অলরাউন্ডার রাচিন রবীন্দ্র। তিনি টুর্নামেন্টে মাত্র ৪ ম্যাচ খেলে দুই সেঞ্চুরিতে রান করেন ২৬৩টি। পাশাপাশি উইকেট নেন ৩টি। তাতে সিরিজ সেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতে।
আরো পড়ুন:
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির চ্যাম্পিয়ন ভারত
যে কাজের পর নাঈম শেখের ব্যাটে ছুটছে রানের ফোয়ারা
ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে এসে রোহিত বলেছেন, ‘‘এটা দারুণ অনুভূতি। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। ফল আমাদের পক্ষে আসায় আনন্দটা আরও বেড়ে গেছে।’’
নিজের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং নিয়ে অধিনায়ক বলেন, ‘‘আক্রমণাত্মক খেলার ধরণ আমার স্বাভাবিক নয়, কিন্তু এটা আমি সত্যিই করতে চেয়েছিলাম। যখন কিছু ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করেন, তখন দলের ও ম্যানেজমেন্টের সমর্থন থাকা খুব জরুরি। আমি আগে রাহুল (রাহুল দ্রাবিড়) ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, এখন গৌতি (গৌতম গম্ভীর) ভাইয়ের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। এটা আমি সত্যিই করতে চেয়েছিলাম। এত বছর ধরে আমি ভিন্নভাবে খেলেছি, আর এখন এই নতুন ধরনে ভালো ফল আসছে।’’
দুবাইর উইকেট ও নিজের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক বলেন, ‘‘পিচের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য বুঝতে হয়, আর আমি শুরুতে প্রথম পাঁচ-ছয় ওভার কিভাবে খেলতে চাই, সে ব্যাপারে একদম পরিষ্কার ছিলাম। আগে কখনো কখনো আউটও হয়েছি, তবে সঠিকভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাটাই মূল বিষয়। ব্যাটিং লাইনআপের গভীরতা আমাকে স্বাধীনতা দেয়, যা আমার জন্য সহায়ক।’’
ম্যাচ শেষে পুরস্কার নিতে এসে রাচিন বলেছেন, ‘‘এটা অবশ্যই মিশ্র অনুভূতি। ফাইনালটা ছিল দারুণ। ব্যক্তিগত স্বীকৃতি পাওয়া ভালো লাগে, তবে দলের হয়ে খেলা আরও বড় ব্যাপার।’’
আইসিসি টুর্নামেন্টে এত ভালো খেলার পেছনের রহস্য জানিয়ে সিরিজ সেরা এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘‘সম্ভবত ভালো পিচে খেলার সুযোগ পাই। টুর্নামেন্ট ক্রিকেট খেলতে ভালো লাগে। কারণ, এখানে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। আমার অতীত পারফরম্যান্স নিয়ে গর্বিত। অনেক মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। যদি ট্রফি জেতা যেত, তাহলে সবকিছু আরও সুন্দর হতো, কিন্তু ক্রিকেট আসলেই নির্মম খেলা।’’
‘‘দলের প্রতিটি সদস্যের ভূমিকা থাকে। এখানে কেউ অভিজ্ঞ বা নতুন বলে আলাদা নয়। আমরা সবাই একসঙ্গে খেলি, দল হিসেবেই এগিয়ে যাই।’’ যোগ করেন তিনি।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।
উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’
গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’
প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।
আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)
সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।
আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।
কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।
আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫