ব্যাংক খাতে আমানত প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন পর্যায়ে
Published: 9th, March 2025 GMT
কোনো কোনো ব্যাংক এখন মেয়াদি আমানতে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে এত সুদ পাওয়া যায়নি। অথচ ব্যাংক খাতে আমানতে প্রবৃদ্ধি কমে গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। গত ডিসেম্বর শেষে এক বছরে ব্যাংক খাতে মাত্র ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ আমানত বেড়েছে। আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় ১৫টি ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) নির্ধারিত সীমার ওপরে উঠেছে। ২০২৩ সাল শেষে আমানত বেড়েছিল ১১ শতাংশের বেশি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমানত প্রবৃদ্ধির হিসাবে সুদও যোগ হয়। ফলে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি খুবই কম। আমানত প্রবাহে দূরবস্থার অন্যতম কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতি। আবার কয়েকটি ব্যাংকের প্রতি আস্থার সংকট দেখা দেওয়ায় মানুষ টাকা তুলে নিয়ে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে খাটিয়েছে। অবশ্য পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতি কমে ফেব্রুয়ারিতে গত ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশে নেমেছে। ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার কমছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংক খাতে উদ্বেগ থাকায় মেয়াদ পূর্তির আগেই আমানত তুলে নেওয়ার কিছু ঘটনা ঘটেছে। আবার নানা অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণ করা অনেক ঋণ আর আদায় হচ্ছে না। অনিয়মের মাধ্যমে প্রভাবশালী এবং গত সরকারের ঘনিষ্ঠদের ঋণের নামে বিপুল অর্থ বের করে নেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করছে বিভিন্ন সংস্থা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতের মোট ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। ঋণ বেড়েছে ৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। প্রতি ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে প্রচলিত ধারার একটি ব্যাংক সর্বোচ্চ ৮৭ টাকা ঋণ দিতে পারে। আর ইসলামী ধারার ব্যাংক দিতে পারে ৯২ টাকা। নির্ধারিত এই সীমার ওপরে রয়েছে ১৫টি ব্যাংকের ঋণ। ডিসেম্বর নাগাদ ঋণ-আমানত অনুপাত নির্ধারিত সীমার ওপরে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৬টিই ছিল বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমের নিয়ন্ত্রণে। ব্যাংকগুলো হলো– ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন, ন্যাশনাল, গ্লোবাল ইসলামী ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। এ ছাড়া এক্সিম, এবি, স্ট্যান্ডার্ড, ইউসিবি, আইএফআইসি, পদ্মা ও প্রিমিয়ার ব্যাংক রয়েছে তালিকায়। আর রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ও বেসিক ব্যাংকেরও এডিআর সীমার ওপরে আছে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি নাজমুস সায়াদাত সমকালকে জানান, তাদের নতুন আমানত বাড়ছে। আগের ঋণ থেকে আদায়ও ভালো। তবে আমানতকারীদের একটি অংশ মেয়াদপূর্তির আগেই আমানত তুলে নিয়েছেন। আবার প্রতি মাস শেষে মুনাফা আরোপ হচ্ছে। এসব কারণে বিনিয়োগ-আমানত অনুপাত নির্ধারিত সীমার বেশি। যদিও নিট বিনিয়োগ আগের চেয়ে কমেছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এলসির ওপর শতভাগ মার্জিনের যে বিধিনিষেধ দিয়েছিল, তা তুলে নেওয়ার পর আমদানি-রপ্তানি ব্যাপক বাড়ছে। ব্যাংকের সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য তারা কাজ করছেন। তিনি আশা করছেন, শিগগিরই নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ম র ওপর প রব দ ধ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি।
পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।
আরো পড়ুন:
রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন
উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ
আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।
চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”
তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”
যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।
৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত
তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।
তৌকির বিশ্বাস করেন, “স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”
তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।
এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।
তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।
তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন
ঢাকা/মাসুদ