সমিতি, প্রযোজকদের কাছে কোটি কোটি টাকা পাওনা, কী করবে এফডিসি
Published: 10th, March 2025 GMT
আগের মতো কর্মব্যস্ততা নেই। আশঙ্কাজনক হারে কাজ কমায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও অনিয়মিত। সম্প্রতি অন্য খাত থেকে ঋণ এনে বেতন-ভাতা পরিশোধ করে প্রতিষ্ঠানটি।
৩১৭ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিএফডিসির পাওনা ২১ কোটি ২৬ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪ টাকা। কাজ শেষ হওয়া ৯৬ সিনেমার প্রযোজকের কাছে পাওনা ৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৭ টাকা।কদিন পরই ঈদ, এ মাসে এখনো কর্মচারীরা বেতন না পাওয়ায় সংকট বাড়ছে। বিএফডিসিকে কর্মমুখর করতে ভাড়া কমিয়ে শুটিংয়ের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এরপরও থেকে যাচ্ছে বিশাল অঙ্কের টাকার ঘাটতি। তাই পাওনা অর্থ আদায়ে উদ্যোগী হচ্ছে এফডিসি। এসব অর্থ আদায়ে এফডিসি কর্তৃপক্ষ কঠোর হবে, জানালেন নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান।
সিনেমা থেকে পাওনা
বিএফডিসির হিসাব বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩১৭ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিএফডিসির পাওনা ২১ কোটি ২৬ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪ টাকা। কাজ শেষ হওয়া ৯৬ সিনেমার প্রযোজকের কাছে পাওনা ৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৭ টাকা। অসম্পূর্ণ ২২১ সিনেমার প্রযোজকের কাছে প্রতিষ্ঠানটি পাবে ১৬ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার ৫৪৭ টাকা। শুধু এইচআর ফিল্মস কর্তৃপক্ষের কাছেই পাওনা ৩২ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৬ টাকা। এ ছাড়া অপূর্ব চলচ্চিত্রের কাছে ২৭ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৩ টাকা, অভি ফিল্মের কাছে ২৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮১ টাকা, পিয়া চলচ্চিত্রের কাছে ২৩ লাখ ৮০ হাজার ২৮৫ টাকা, উইনো ফিল্মের কাছে ২২ লাখ ৬৫ হাজার ৭৫৭ টাকা, গোল্ডেন বাংলা প্রোডাকশনের কাছে ২১ লাখ ৪১ হাজার ১০০ টাকা, বিএসএ প্রোডাকশনের কাছে ১৭ লাখ টাকা, ডলফিন ফিল্মসের কাছে ১৫ লাখ টাকা, দেশ বাংলা মিডিয়ার কাছে ১২ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৭ টাকা ও কৃতাঞ্জলী চলচ্চিত্রের কাছে ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬০ টাকা এফডিসির পাওনা রয়েছে।
এইচআর ফিল্মসের অন্যতম অংশীদার শাহীন সুমন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিনেমার কাজ শেষ করতে পারিনি। আর্থিক সমস্যা ও শিডিউল জটিলতায় কোটি টাকার ওপর লস করেছি। আমার সিনেমার সব ফুটেজ ও মালামাল বিএফডিসিতে রক্ষিত আছে। বিএফডিসি আমাকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে, আমিও আইনি প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছি।’
৭ সংগঠন থেকে বিএফডিসির মোট পাওনা ৯৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫২ টাকা। এর বাইরে গ্রিন টিভির গ্রিন মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের কাছে বিএফডিসির বকেয়া ২৭ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯৫ টাকা।সমিতি থেকেও বকেয়া
বিএফডিসিতে চলচ্চিত্রের সাত সংগঠনের কার্যালয়। ভবনভাড়া, বিদ্যুৎ-পানির বিল ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ তাদের কাছে বিএফডিসির পাওনা প্রায় কোটি টাকা। সংগঠনগুলোকে গত ডিসেম্বরে চিঠি পাঠিয়েছে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ। সাড়া মেলেনি। চলতি মাসে আবার সংগঠনগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে, জানিয়েছে হিসাব বিভাগ। সর্বশেষ চিঠির তথ্যমতে, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কাছে বিএফডিসির পাওনা সবচেয়ে বেশি। জানুয়ারি ২০১০ থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত সংগঠনটির কাছে বকেয়া ৩১ লাখ ২১ হাজার ২৭৩ টাকা। ২০ লাখ ৭২ হাজার ৮২৫ টাকা বকেয়া নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে প্রযোজক সমিতি। চলচ্চিত্র শিল্প সমিতির কাছে ২০ লাখ ৩৯ হাজার ১৩৩ টাকা বকেয়া। এর বাইরে চলচ্চিত্র গ্রাহক সংস্থার কাছে ৯ লাখ ৯৭ হাজার ৩৬২ টাকা, সিডাবের কাছে ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪৯ টাকা, ফিল্ম এডিটরস গিল্ডের কাছে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৫৬ টাকা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ব্যবস্থাপক সমিতির কাছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭৫৪ টাকা পায় এফডিসি। ৭ সংগঠন থেকে বিএফডিসির মোট পাওনা ৯৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫২ টাকা। এর বাইরে গ্রিন টিভির গ্রিন মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের কাছে বিএফডিসির বকেয়া ২৭ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯৫ টাকা।
বকেয়া প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরী বলেন, ‘৪০ বছরের বকেয়া জমায় এ অবস্থা। এত টাকা বর্তমান কমিটির পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয়। তাই অন্য সংগঠন যে পথে হাঁটবে, আমরাও সেভাবেই যাব। এর আগে আমরা দুবার চিঠি পেয়েছি, তখন কিছু টাকা পরিশোধ করেছি। আমাদের সমিতির তো ফান্ড নেই, আয় বলতে সদস্যদের চাঁদা। আমরা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি, বকেয়ার মওকুফ চাইব। মওকুফ করে নতুন প্রক্রিয়ায় সব নিয়ম মেনে কীভাবে সব পরিচালনা করা যায়, সে চেষ্টা করব। বিএফডিসিতে আমরা যেহেতু জায়গা নিয়ে আছি, অবশ্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করব।’
সংকট কোথায়
একসময় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ছিল কাকরাইলনির্ভর। এখন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। দেশে সিনেমা হল কমে যাওয়ায় এ ব্যবসা থেকে অনেকে সরে এসেছেন, আবার অনেক প্রযোজক মারা গেছেন। তাই সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় দিনের পর দিন চিঠি পাঠালেও উত্তর মেলেনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র র স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে নানাভাবে দোষারোপ করছে ছাত্র সংগঠনগুলো। সরাসরি নাম উল্লেখ না করে কেউ কাউকে কিছু না বললেও ছাড় দিতে নারাজ তারা।
গত ৩০ অক্টোবর জবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নেতারা জকসু নির্বাচনের বিধিমালা প্রণয়নে প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে বলে অভিযোগ করে।
আরো পড়ুন:
জবি প্রশাসনের কাছে ২০ দাবি জানাল ইউটিএল
পিএইচডি গবেষকদের জন্য বৃত্তি চালু করা হবে: জবি উপাচার্য
রবিবার (২ নভেম্বর) ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জকসু নির্বাচন পেছাতে নির্বাচন কমিশন ‘বিশেষ উদ্দেশ্যে’ কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন জবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম।
পরে সন্ধ্যায় একই স্থানে ‘জকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ও স্পোর্টস কার্নিভাল’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি অভিযোগ করে, জকসু নির্বাচন নিয়ে একটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাচ্ছে এবং আরেকটি সংগঠন নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
রবিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচন কমিশন একটি বিশেষ কারো ইশারায়, বাইরের প্রেসক্রিপশনে নির্বাচনের খসড়া প্রস্তুত করেছে। আমাদের দাবি, ২৭ নভেম্বরই শিক্ষার্থীদের নিয়ে জকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন করা। নির্বাচন কমিশনের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশ। তারা ২৭ নভেম্বর নির্বাচন হওয়ার বিষয়টি আগেই জানতো। কিন্তু তবু ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে খসড়া রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এতে একটি গ্রুপকে সুবিধা দিয়ে অন্যদের ভোটাধিকার হরণের চেষ্টা চলছে।”
তিনি বলেন, “প্রশাসন ও কমিশন আগে জানিয়েছিল, আইন প্রণয়নের পরই প্রস্তুতি কমিটি গঠনের কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা নতুনভাবে সব কাজ করতে চাচ্ছে—যেন নির্বাচন বিলম্বিত হয়। আলোচনার টেবিলে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে।”
তিনি আরো বলেন, “একটা পক্ষের সব কথা শোনা হচ্ছে। কিন্তু অন্যদের মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে না। এতে স্পষ্ট, নির্বাচন পেছানোর মানসিকতা নিয়েই তারা আলোচনায় বসছে। ১৩ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষা বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিজয় দিবসের কর্মসূচির কারণে সে সময় নির্বাচন গ্রহণ করা সম্ভব নয়।”
“এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ১৬ ডিসেম্বরের পর ভোট আয়োজন করতে চাইছে। কিন্তু তখন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বা ছুটি শুরু হলে জকসু নির্বাচন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে,” যুক্ত করেন শিবির সভাপতি।
আপ বাংলাদেশের সঙ্গে প্যানল ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা ইনক্লুসিভ প্যানেল করতে চাচ্ছি। আমাদের প্যানেলে কারা থাকবেন সেটা এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। শিগগিরই এ বিষয়ে জানতে পারবেন।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল আলিম আরিফ, অফিস সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল ও বাইতুল মাল সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে একটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাইছে, আরেকটি সংগঠন নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি।
অপরদিকে, ‘জকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ও স্পোর্টস কার্নিভাল’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি সদস্য সচিব শাহিন মিয়া বলেন, “একটি সংগঠন নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে, আরেকটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে দিতে চাইছে। আমরা চাই এমন একটি নির্বাচন, যেখানে শিক্ষার্থীরা অবাধভাবে অংশ নিতে পারবে এবং সবাই সমান সুযোগ পাবে। নির্বাচন কমিশন যেন প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি গ্রহণযোগ্য সময়সূচি ঘোষণা করে এবং কোনো পক্ষের প্রভাবে না পড়ে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের যে সাহসী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখানোর কথা, আজকের মতবিনিময় সভায় আমরা তা দেখতে পাইনি।”
জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “আমরা সব সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। আমরা চাই না যে ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে হঠাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। অন্যদিকে, ছাত্রশিবির দ্রুত নির্বাচন চায়, আর ছাত্রদল সেটি পেছাতে চায়—যা নির্বাচনী পরিবেশকে জটিল করে তুলছে। জাতীয় নির্বাচন ও জকসু নির্বাচন একই সময়ে পড়লে তা প্রশাসনিকভাবেও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।”
এর আগে, গত ৩০ অক্টোবর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেছিলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল প্রশাসন একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত জকসু নীতিমালা প্রণয়ন করবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে, যা হতাশাজনক।”
তিনি বলেছিলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবার জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা চাই এটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হোক—যাতে জকসু শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচনের মুক্ত মঞ্চে পরিণত হয়, কোনো দলীয় প্রভাবের শিকার না হয়।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী