বাংলাদেশসহ ইন্দো-প্যাসিফিকে ২৭২ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে কানাডা
Published: 10th, March 2025 GMT
বাংলাদেশসহ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নতুন করে ২৭২ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে কানাডা। গতকাল রোববার দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী আহমেদ হুসেন এই অর্থায়নের ঘোষণা দেন। খবর গ্লোবাল নিউজের।
এক বিবৃতিতে আহমেদ হুসেন বলেন, বাংলাদেশ ও বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করছি আমরা। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা প্রদান করে আমরা বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছি।
অন্যান্য বিদেশি অংশীদার ও দাতাদের অর্থায়নের পাশাপাশি এই তহবিল বাংলাদেশ ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে ১৪টি প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কানাডার ফেডারেল লিবারেল সরকার বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির মাধ্যমে বৈদেশিক সহায়তা প্রদান বন্ধ করে দেয়।
ক্ষমতাগ্রহণের পর ট্রাম্প ও তার নতুন প্রশাসনিক দক্ষতা বিষয়ক বিভাগের প্রধান ইলন মাস্ক, ৯০ দিনের জন্য মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেন। যার ফলে বিশ্বব্যাপী অনেকগুলো সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায় এবং সরকারি সংস্থা ও তাদের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাজার হাজার কর্মচারী ছাঁটাই বা বাধ্যতামূলক ছুটির মুখে পড়েন।
ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসনে নিয়োগপ্রাপ্তরা বৈদেশিক সহায়তাকে মার্কিন করদাতাদের অর্থের অপচয় হিসেবে বিবেচনা করেন এবং দাবি করেন, এসব সহায়তা উদারনৈতিক রাজনৈতিক এজেন্ডাকে সমর্থন করে। অন্যদিকে, সমালোচকদের মতে, এ ধরনের ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অবস্থানকে শক্তিশালী করে এবং অন্যান্য দেশের বৈদেশিক হস্তক্ষেপ প্রতিহত করতে সহায়তা করে।
মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা কর্মী ও সমর্থকেরা আদালতে ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন, দাবি করে, প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের অনুমোদিত একটি ফেডারেল সংস্থাকে কার্যত বন্ধ করে দিয়ে তার আইনি ও সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছেন।
কানাডা যে প্রকল্পগুলোকে সহায়তা দিচ্ছে, তার মধ্যে—লিঙ্গ সমতা, নারীদের ও কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার, পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি করা অন্যতম। এ ছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, নাগরিক সম্পৃক্ততা জোরদার এবং দারিদ্র্য হ্রাসের লক্ষ্যে অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
কানাডার সরকার জানিয়েছে, ‘নার্সিং খাতে নারীর ক্ষমতায়ন’ নামে একটি প্রকল্পের জন্য তিন বছরে ৬৩ লাখ ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কানাডীয় প্রতিষ্ঠান কোওয়াটার ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
এই সহায়তা কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন আহমেদ হুসেন ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার লিবারেল পার্লামেন্ট সদস্য পারম বেইন্স। ভ্যানকুভারে অনুষ্ঠিত এ ঘোষণার অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এই ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এল, যখন লিবারেল সরকার বসন্তকালে নতুন নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচনের ডাক দিতে পারে। ফেডারেল সরকারের অনুমান অনুযায়ী, বর্তমানে কানাডায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এক লাখের বেশি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প সরক র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।