ডিবি কার্যালয়ে আসা বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভাত খাওয়ানোর ভিডিও করে প্রচার করে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ডিবি কার্যালয়ে তাঁর এমন কর্মকাণ্ডকে অনেকে ‘দুষ্টুমি’ করে বলতেন ‘হারুনের ভাতের হোটেল’। এমন নামকরণের বিষয়টি অবশ্য উপভোগ করতেন তিনি। একাধিক সাক্ষাৎকারে হারুন নিজেই সে কথা জানিয়েছিলেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘ভাতের হোটেলের’ হারুন পলাতক। এখন ডিবিপ্রধানের দায়িত্বে আছেন রেজাউল করিম মল্লিক। তিনিসহ ডিবির কর্মকর্তারা ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নিয়ে কথা বলতে বিব্রত বোধ করেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘ভাতের হোটেলের’ হারুন পলাতক। এখন ডিবিপ্রধানের দায়িত্বে আছেন রেজাউল করিম মল্লিক। তিনিসহ ডিবির কর্মকর্তারা ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নিয়ে কথা বলতে বিব্রত বোধ করেন।

ডিবিপ্রধান রেজাউল করিম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ডিবি কার্যালয়ে ‘ভাতের হোটেল’ আর ফিরবে না। হারুন এবং তাঁর ভাতের হোটেলের কারণে ডিবির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছিল। মানুষ এটি নিয়ে হাসি-তামাশা করেছে। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ডিবির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে হারুন হাস্যরসে পরিণত করেছিলেন। হারুন যে কক্ষটিকে ভাতের হোটেল বানিয়েছিলেন, সেই কক্ষ এখন দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নামটি যেভাবে এল

হারুন অর রশীদ ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০২২ সালের জুলাই মাসে। পরের বছর ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই মাসে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পুরান ঢাকা থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তাঁকে ডিবি কার্যালয়ের একটি কক্ষে তখন আপ্যায়ন করেন হারুন। নিজে গয়েশ্বরের প্লেটে খাবার তুলে দেন এবং সেটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয় তখন। মূলত এরপরই ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নাম চালু হয়।

ডিবির ক্ষুণ্ন হওয়া ভাবমূর্তি পেশাদার কাজের মধ্য দিয়ে ফিরতে শুরু করেছে। এখনকার ডিবি হারুনের ডিবি নয়, সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার ডিবি হয়ে উঠেছে।ডিবির বর্তমান প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ভিডিও প্রচারের পর ডিবি কার্যালয়ে আসা বিভিন্ন ব্যক্তিকে ওই কক্ষে আপ্যায়ন করে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে থাকেন হারুন অর রশীদ। অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস এবং গান বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপস পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে আসার পর তাঁদের ডিবি কার্যালয়ে আপ্যায়ন করা হয়। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর বাইরে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আসা তারকা, টিকটকার ও ব্লগারদের খাইয়ে সেটির ভিডিও করে প্রচার করতে থাকেন হারুন অর রশীদ। এভাবে ডিবি কার্যালয় ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নামে আরও পরিচিত পায়।

তখন হারুন অর রশীদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘কেউ হয়তো মনে করতে পারে, ডিবি একটা ভাতের হোটেল, বলতে পারেন। এতে আমাদের ডিবি ডিমোরালাইজড (মনোবল হারানো) হবে না। এটা আমাদের একটি মানবিক সাইড (দিক)।’

‘জাতিকে নিয়ে মশকরা’

গত বছরের জুলাই মাসের শেষের দিকে গণ-অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে তুলে আনা হয়। আইন অনুযায়ী তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়। তখন তাঁদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার ছবিও ফেসবুকে প্রচার করেছেন হারুন।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ জুলাই ‘কথিত আটক’ ছয়জন সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালাতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানিতে তৎকালীন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, ‘টিভিতে দেখেছি, এই ছয়জন (সমন্বয়ক) কাঁটাচামচ দিয়ে খাচ্ছে।’ একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘এগুলো করতে আপনাকে কে বলেছে? কেন করলেন এগুলো? জাতিকে নিয়ে মশকরা কইরেন না। যাকে নেন ধরে, একটি খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন।’

বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পুরান ঢাকা থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। হারুন নিজে গয়েশ্বরের প্লেটে খাবার তুলে দেন এবং সেটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয় তখন। মূলত এরপরই ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নাম চালু হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিভিন্ন সময় বলেছেন, ডিবিতে কোনো ভাতের হোটেল থাকবে না।

‘ভাতের হোটেল’ কক্ষটি এখন কেমন

গত সপ্তাহে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ হিসেবে ব্যবহার করা সেই কক্ষটি পরিদর্শন করেন এই প্রতিবেদক। ওই কক্ষটির অবস্থান ডিবির পুরোনো ভবনের দোতলায়। সেই কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, বড় টেবিলের চারপাশে চেয়ার রাখা। ওই কক্ষের পাশের কক্ষেই বসেন ডিবির বর্তমান প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক।

অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস এবং গান বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপস পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে আসার পর তাঁদের ডিবি কার্যালয়ে আপ্যায়ন করা হয়। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, কখনো এই কক্ষে এখন ছোট সভা করা হয়। আবার কখনো এই কক্ষে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ডিবির বর্তমান প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ডিবির ক্ষুণ্ন হওয়া ভাবমূর্তি পেশাদার কাজের মধ্য দিয়ে ফিরতে শুরু করেছে। এখনকার ডিবি হারুনের ডিবি নয়, সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার ডিবি হয়ে উঠেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল গ সরক র ভ ড ও কর সরক র র ন র পর আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

‘ফিরিয়ে দাও’ থেকে ‘ধূসর সময়’: সিডনিতে একই মঞ্চে মাইলস ও আর্টসেল

সিডনির বসন্তের সন্ধ্যা। লিভারপুলের হুইটল্যাম লেজার সেন্টারের বাইরে তখন লম্বা লাইন—হাতে পতাকা, কাঁধে ব্যাগ, চোখে প্রত্যাশা। সাউন্ডচেকের শব্দ ভেসে আসছে বাইরে। ভেতরে যেন উন্মুখ এক ‘সাগর’, যেখানে মিশে আছে দুই প্রজন্মের মুখ, কণ্ঠ আর স্মৃতি। শনিবার রাতটি হয়ে উঠেছিল প্রবাসী বাঙালিদের জন্য এক ব্যতিক্রমী উৎসব—বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের দুই যুগের দুই প্রতীক, মাইলস ও আর্টসেল; প্রথমবারের মতো একই মঞ্চে গান করল সিডনিতে।
‘গ্রিনফিল্ড এন্টারটেইনমেন্ট’ আয়োজিত এই ‘মিউজিক ফেস্ট’ ঘিরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা যেন উপচে পড়ল সেই রাতে। টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পরপরই সব শেষ। অনুষ্ঠান শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিম উপশহর লিভারপুলের রাস্তাগুলো ভরে গেল গানের ভক্তে।

আয়োজনের আগে ভিডিও বার্তায় মাইলস জানায় তাদের উচ্ছ্বাস। ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য হামিন আহমেদ বলেন, ‘সিডনি বরাবরই আমাদের কাছে বিশেষ কিছু। সম্ভবত ১৯৯৬ সালে আমরাই প্রথম বাংলাদেশি ব্যান্ড হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় পারফর্ম করি। এরপর এ নিয়ে অন্তত পঞ্চমবারের মতো সিডনিতে এলাম। এখানকার দর্শকদের ভালোবাসা সব সময়ই অবিশ্বাস্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতাম এটি স্মরণীয় একটি আয়োজন হতে যাচ্ছে। আমরা চেয়েছি সবাই একসঙ্গে গাইবে, চিৎকার করবে—ভক্তরা সেটাই করেছেন।’ গিটারিস্ট তুজো যোগ করেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার পাঁচটি শহরে ট্যুর করছি, কিন্তু সিডনির আবহ একেবারেই আলাদা। দর্শকেরা আমাদের রাতটিকে স্মরণীয় করে দিয়েছেন।’

মঞ্চে আর্টসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ