দক্ষিণী সিনেমার সুপারস্টার থালাপতি বিজয় সিনেমা ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে  এখন পুরোপুরি রাজনীতিবিদ। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক দলট গঠনের ঘোষণা দিয়ে তিনি ২০২৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিকল্পনা করছেন।

সম্প্রতি রমজান মাস উপলক্ষে অভিনেতার একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। ভিডিওতে বিজয়কে চেন্নাইয়ে একটি ইফতার পার্টিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। এই ভিডিওতে বিজয়কে সাদা কুর্তা এবং মাথায় টুপি পরা অবস্থায় দেখা যায়, এমনকি তিনি দোয়াতেও অংশ নিয়েছেন। ভিডিওটি সংবাদ সংস্থা এএনআই তাদের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বিজয় তার দল তামিলাগা ভেট্টি কাজাগাম এর সঙ্গে এই ইফতার পার্টির আয়োজন করেছেন।

থালাপতি বিজয়ের এই ভিডিও ভক্তদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকে তার এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রয়াসের প্রশংসা করেছেন। ভক্তরা সামাজিক মাধ্যমে তার এই কাজকে সাহসী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে, কিছু নেটিজেনরা তাকে ট্রোল করতেও ছাড়েননি। 

এবার ভারতীয় গণমাধ্যমে নতুন খবর, এই ইফাতারে অংশ নেওয়ায় মুসলিম সম্প্রদায়কে অপমান করার অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণী তারকার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই তামিলনাড়ু সুন্নত জামাত চলচ্চিত্র তারকা বিজয়ের বিরুদ্ধে চেন্নাই পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।

তামিলনাড়ু সুন্নত জামাত এর কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ কওস আইনি পদক্ষেপ করছেন। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, “বিজয় আয়োজিত ইফতারে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে অপমান করা হয়েছে। রোজা বা ইফতারের সঙ্গে মদ্যপ ও গুন্ডাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা মনে করি, ওই অনুষ্ঠানে এদের উপস্থিতি মুসলিমদের পক্ষে অপমানজনক।”

সৈয়দ কওস দাবি করেছেন, গোটা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল ‘খারাপ’ ভাবে। তাঁদের কাছে বিজয় একবারও দুঃখপ্রকাশ করেননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁদের অভিযোগ, বিজয়ের ‘বিজাতীয় রক্ষী’র সকলেই তাঁদের অপমান করেছেন। আমন্ত্রিতদের সঙ্গে ‘গরুর মতো ব্যবহার’ করা হয়েছে বলেও তাঁর দাবি। কওস বলেন, “এ ধরনের ঘটনা যাতে আগামী দিনে ফের না ঘটে সে জন্য বিজয়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আমরা কিন্তু প্রচারের আলোয় আসার জন্য অভিযোগ দায়ের করিনি।” ওই ইফতারে কিছু মানুষের মদ্যপান করে উপস্থিত হওয়াতেই আপত্তি তুলেছেন আমন্ত্রিতদের একাংশ।

বিজয়ের রাজনৈতিক প্রবেশ তামিলনাড়ুতে ঝড় তুলেছে। তার দল তামিলাগা ভেট্টি কাজাগাম গঠনের পর প্রথম সমাবেশে তিন লক্ষ মানুষের উপস্থিতির দাবি করা হয়েছিল। এটি তার জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের একটি বড় প্রমাণ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: থ ল প ত ব জয় কর ছ ন র জন ত অপম ন ইফত র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ